সোহেল লড়বেন ঢাকায় না রংপুরে?

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০১৭, ০৮:৩৯ | আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭, ১৬:২৯

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

সরকার পতনের আন্দোলনের হুঁশিয়ারির মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়। প্রার্থী হওয়ার আশায়, কেউ আবার দলের পক্ষ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে আঁটঘাঁট বেধে নামতে শুরু করেছেন। এদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতাদের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

সাবেক ছাত্রদের মধ্যে বিএনপিতে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হাবিব উন নবী খান সোহেল। মূল দলে যুগ্ম মহাসচিবের পদে আছেন তিনি। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি করা হয়েছে।

জন্মস্থান রংপুরে হলেও ঢাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করায় নেতাকর্মীদের ভাবনায় তার নির্বাচনী এলাকা কোনটা হবে তা নিয়ে। নবম সংসদ নির্বাচন ঢাকা-৮ থেকে করলেও এবার কি এখানেই থাকবেন না কি রংপুর থেকে লড়বেন সেটা। তবে যতদ্দুর শোনা যাচ্ছে তিনি রংপুর নয়, ঢাকা থেকেই নির্বাচনে লড়বেন এই ছাত্র নেতা। এর আগেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে লড়ছিলেন ঢাকা-৮ থেকে । কিন্তু জিততে পারেননি সোহেল।

অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জন্মস্থান রংপুর সদর থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়েন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে। সেবারও এরশাদের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে সোহেল।

ঢাকা-৮ আসনটি ঢাকা জেলার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৯, ২০, ২১ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। মতিঝিল, পল্টন, রমনা ও শাহজাহানপুর (কিছু অংশ), শাহবাগ এলাকা পড়েছে ঢাকা-৮ এরমধ্যে। হাবিব উন নবী খান সোহেলের বসবাস শান্তিনগর এলাকায়।

গত নির্বাচনের আগে আন্দোলন চললেও ছাত্রদলের সাবেক অনেক নেতা মনোনয়ন পেতে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এতদিন কিছুটা থমকে থাকলেও নির্বাচনী বাতাস শুরু হওয়ায় তারা আবারও সরব হতে শুরু করেছেন। অনেকে দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে অনেকে নিয়মিত এলাকায় যাওয়া আসা শুরু করেছেন।

অন্য সাবেক ছাত্রনেতাদের যখন এই অবস্থা তখন সোহেলও বসে নেই। সোহেলের সমর্থকরা যে যার মতো করে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হওয়ার তার সমর্থকদের মধ্যে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে।

১৯৯৬-এর শেষের দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে আসেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাবীব-উন-নবী সোহেল। এরপর সোহেল ২০০০ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। এরপর তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি করা হয়। শুধু তাই নয়, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দল বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন সোহেল।

এই যখন অবস্থা তখন সাবেক এই ছাত্রনেতাকে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব করেন দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া। নিজের কাঁধে যখন গুরুত্বপূর্ণ তিন পদের ভার তখন গত বছরের ৬ আগস্ট বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন সোহেল।

সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি হওয়ায় একটি পদ চলে গেলেও নতুন আর  একটি পদের জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সোহেলকে।  কারণ গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগরকে দুইভাগ করে নতুন কমিটি দেন খালেদা জিয়া। ঢাকা দক্ষিণে সভাপতি করা হয় সোহেলকে। যদিও এরমাঝে বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিলেন সোহেল। বর্তমানে জামিনে আছেন তিনি।

বিএনপি নেতারা জানান, আন্দোলনের প্রস্তুতি, সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি দক্ষিণের নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ সার্বিক কার্যক্রম তদারকির ভারও সোহেলের ওপর। যে কারণে অন্যসহ জায়গার খোঁজখবরও যেমন রাখছেন তেমনি নিজের এলাকা গোছানোর কর্মপরিকল্পনাও করছেন তিনি।

সোহেলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইামসকে বলেন, ‘সোহেল ভাইকে  ঢাকা-৮ থেকে নির্বাচন করবেন এটা নিশ্চিত। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) এমন নির্দেশনা আছে।’

যদিও সোহেল নিজে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। ঢাকাটাইমসকে  তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে নির্বাচন করবো এটা ঠিক। কিন্তু কোথায় করবো সেটা দল সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখন আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। কিভাবে অগণতান্ত্রিক এই সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো সেটাই আমাদের মূল চিন্তা।’

সোহেল বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমূখী দল এবং যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তাই আলাদা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। সময় আসলে দেখা যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৬জুন/বিইউ/ডব্লিউবি)