চট্টগ্রামে ক্রেতার পথ চেয়ে বিক্রেতারা

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০১৭, ০৮:৫৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

মনোরম সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম শহরের ঈদের বাজার ও বিপণিবিতানগুলো। দোকানে দোকানে বাহারি পোশাকের সম্ভার। কিন্তু এখনো দেখা নেই ঈদের ক্রেতার। পোশাক-আশাক আর প্রসাধনীর সামাহার নিয়ে ক্রেতার পথ চেয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার ১০ রোজা গেছে। অন্য বছর এই সময়ে বিপণিবিতানগুলো সরগরম দেখা গেছে। কেনাকাটার ধুম পড়ে।  কিন্তু এবার সেই দৃশ্য এখনো দেখা যায়নি।

নগরীর শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী নুরুল আলমকে একরকম হতাশ দেখাল। তার ভাষায়, এবার ঈদের কেনাকাটায় ছন্দপতন চলছে।
বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের ধকল গেল সবে। এর সঙ্গে আছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। নুরুল আলম এগুলোকে ঈদবাজারের মন্দাবস্থার কারণ হিসেবে দেখলেও হিসাব মিলছে না তার। বলেন,  ‘মনে করেছিলাম এসবের প্রভাবে ক্রেতা আসছে না। কিন্তু বৃষ্টি থেমেছে। তাহলে।’ নিজেই সান্ত¦না দেন, বৃষ্টি কমলেও নগরজুড়ে কাদার কারণে ক্রেতারা বের হতে পারছেন না। দু-একজন যারা আসছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে বেচাকেনা সম্ভব হচ্ছে না।
একই কথা বলেছেন নগরীর অভিজাত শপিংমল মিমি সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিবছর এ সময় দোকানে ক্রেতার ভিড় থাকে। কিন্তু এবার মার্কেটের সব ব্যবসায়ী কপালে চিন্তার ভাঁজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুটপাত থেকে অভিজাত মার্কেট- সবখানে পোশাকের বিপুল সমারোহ।  ঈদ উপলক্ষে জামাকাপড় বিক্রি করার জন্য বেশ প্রস্তুতি নিয়েই বসেছেন ব্যবসায়ীরা। পোশাকে যেমন বৈচিত্র্য আছে, তেমনি আছে দামেও। কেউ প্রস্তুতি নিয়ে বসেছেন উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের টার্গেট করে। কেউবা মধ্য ও নি¤œবিত্তের জন্য। ক্রেতা আকর্ষণে নগরীর বিপণিবিতানগুলো সাজানো হয়েছে নানা রঙের আলোকমালায়। ফুটপাতের দোকানগুলোও আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর বৃহত্তম দুই পাইকারি কাপড়ের বাজার রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও টেরিবাজার এখন ঈদের পোশাকে সয়লাব। কিন্তু সেখানেও থমকে আছে কেনাকাটা। তবে বৃষ্টি কমায় সোম ও মঙ্গলবার ক্রেতার সমাগম হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।  

এদিকে ফুটপাতে বসা হকারদের অবস্থাও নাজুক। সকাল-বিকেলের বৃষ্টি তাদের ভোগাচ্ছে বেশি। অনেকে ধারকর্য করে এবার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু এখনো প্রায় ব্যবসাহীন।

কেনাবেচার এই মন্দাবস্থার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি আর বিদ্যুতের কথা বললেও ক্রেতারা বলছেন অন্য কথা। কেউ বলছেন অর্থাভাব, কেউ বলছেন চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস না পাওয়ার কথা। আবার কেউ কেউ বড় মার্কেটে অতিরিক্ত দাম রাখার অভিযোগ করেন।
নগরীর কালামিয়া বাজার থেকে টেরিবাজারে কাপড় কিনতে আসা ক্রেতা মসিউদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি তো সাময়িক। মূল কথা হলো মানুষের পকেটে টাকা নেই। ঈদবাজারের বড় ক্রেতা সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা। কিন্তু তাদের অনেকে এখনো বেতন-বোনাস পাননি। তাই ঈদের বাজারে তেমন ক্রেতা নেই এখনো।

নগরীর চকবাজার কাপাসগোলা এলাকার নুরুল আবছার বলেন, কেনাকাটা হচ্ছে না তা নয়। তবে শপিং সেন্টার, মিমি সুপার মার্কেট, নিউমার্কেটের মতো অভিজাত মার্কেটে ক্রেতা যাচ্ছে না। কারণ এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের পকেট কাটে। দুই হাজার টাকার কাপড় ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করে। যারা একবার এদের শিকার হয়েছে তারা এখন সেখানে কেনাকাটা করে না।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান এ ব্যাপারে বলেন, নগরীর কাপড়ের পাইকারি মার্কেট হলো টেরিবাজার। সব মার্কেটে টেরিবাজারের কাপড় বিক্রি হয়। কিন্তু টেরিবাজারের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে নেয় মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মার্কেট থেকে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, ‘ক্রেতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মিমি সুপার মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়। এ সময় অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে প্রথমবারের মতো অভিযান পরিচালনায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়নি। সতর্ক করা হয়েছে।  বিক্রেতারা কাপড়ে ২০ শতাংশের বেশি লাভ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।

অপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা রাহমান জানান, ক্রেতারা যাতে তাদের অভিযোগ জমা দিতে পারে সেজন্য মার্কেটে অভিযোগ বক্স রাখতে বলা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে কাপড়ের দাম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে শপিং মলগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৬জুন/মোআ)