পুলিশ-আনসার ‘লড়াই’

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ জুন ২০১৭, ১৬:০৪

ভ্যাপসা গরম। চকচকে রোদ। গাছের ছায়াতেও স্বস্তি নেই। লু হওয়ায় গা পুড়ে যাচ্ছে। একটু সুযোগ পেলে ছায়ায় বসে শ^াস নিচ্ছেন রোদে ঝলসে যাওয়া মানুষগুলো। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের পাশের গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকতে গিয়ে চোখে পড়ল তাদের। ভ্রাম্যমাণ টি-স্টলের বেঞ্চিতে আড়াআড়ি হয়ে বসে আছেন। মাথা নিচু করে চোখ দুটো বেঞ্চিতে। কী করছেন তারা? কিছুটা কাছে যেতেই দেখলাম, কাগজে আঁকা কোর্টে ষোল ঘুঁটি খেলছেন।

দুজনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। একজন পুলিশের কনস্টেবল মিজান। অন্যজন আনসার সদস্য মজিবর। খেলার কী অবস্থা? জানতে চাইলে মিজান হাসিমুখে বললেন, ‘কেবল শুরু করলাম ভাই।’

দেখলাম দুজনের সামনেই পাঁচটি করে ঘুঁটি রাখা। একে অন্যেরটা কেটেছেন। ‘দুজন তো দেখছি সমানে সমান!’ মজিবর বললেন, ‘না, পুলিশ ভাই ভালো খেলে।’

খেলার ফাঁকে ফাঁকে আলাপ চলছে। মিজান জানালেন তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে। মজিবর ময়মনসিংহের ছেলে। বয়সে দুজনই কাছাকাছি। চল্লিশ পার হয়েছে। দুজনে খেলায় বেশ মনোযোগী।

‘আগে কখনো খেলেছেন দুজনে?’ মিজান বললেন, ‘না। আজই প্রথম।’

মজিবরকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। চাল দিতে সময় নিচ্ছেন। কপাল কুঁচকে ভাবনা-চিন্তা করছেন। তারপর খুব সর্তকভাবে ঘুঁটির চাল দিচ্ছেন।

বললাম, ‘মজিবর ভাই তো দেখি বেশ সিরিয়াস?’

মাথা দুলিয়ে তিনি জবাব দিলেন, ‘বুদ্ধির খেলা। বেশ মাথা খাটাতে হয়।’

মিজান বনাম মজিবরের লড়াই চলছে। মজিবরের মুখ মলিন। কারণ মিজান একটু আগে এক চালে তার দুই ঘুঁটি কেটে নিয়েছেন। কথা বলার মতো সময় নেই।

এই ফাঁকে চলুন আমরা জেনে নেইÑ ষোল ঘুঁটি কাহিনি। দাবা খেলার গ্রাম্যরূপ এই খেলা। সময় কাটানোর জন্য মজার খেলা। ছেলে থেকে বুড়ো-একটা সময় কমবেশি সবারই হাত পেকেছে এ খেলায়। গ্রামে হলে তো কথাই নেই। উপকরণ জোগার করা কঠিন কিছু না। যেমন-মিজানের সৈন্যরা ঘুঁটি) শুকনো নারকেল পাতার কাঠি দিয়ে তৈরি। মজিবর কুড়ানো ছোট ছোট ফলকে বানিয়েছেন সৈন্য।

১৬ যোগ ১৬ মোট ৩২ ঘুঁটি । খেলায় প্রতিপক্ষের ঘুঁটি কোণাকুণি কাটা যায়। লম্বালম্বি পেলেও ছাড় নেই। মোটকথা ঘুঁটি ডিঙাতে পাইলেই কাটা পড়ে প্রতিপক্ষের সৈন্য। অঞ্চল ভেদে নামেও তফাৎ আছে। চট্টগ্রামে এই খেলাকে বলে- ‘মোঘল-পাঠান খেলা।’ এই দেশে মোঘল-পাঠান যুদ্ধ ঐতিহাসিক ব্যাপার। ষোড়শ শতকে এই যুদ্ধ হয়েছিল। ধারণা করা হয়, যুদ্ধ স্মৃতি থেকেই এই খেলার জন্ম।

মিজান বনাম মজিবরের লড়াইয়ে এখন সমতা। দুজনে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। ঢিলেঢালা চাল দিচ্ছেন। মিজান জানালেন, দিনেরাতে মিলে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। সকাল আটটায় এসেছিলেন। দুটায় ফিরে যাবেন ব্যারাকে। আবার রাত আটটায় আসবেন সোহরাওয়ার্দীর গেটে। পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত থাকবেন এখানেই। দুজনেই সমান।

মজিবর বললেন, ‘সময় সহজে কাটে না ভাই। তার ওপর যা গরম। ঘামে ভিজে যাই। আবার বাতাসে সব শরীরেই শুকায়। আবার ভিজে যাই।’ পুলিশ-আনসারের ষোল ঘুটির লড়াই দেখতে দু-চারজন পথচারীও দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের উৎসুক চোখ হারজিত দেখার অপেক্ষা। খেলাও প্রায় শেষপ্রান্তে। মজিবরের প্রান্তর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। একে একে সব সৈন্য কাটা পড়েছে মিজানের চৌকস চালে। শেষ পর্যন্ত মজিবর আর পেরে উঠলেন না। মিজানের সাত ঘুঁটি বাকি থাকতে মজিবরের শেষ সৈন্য কাটা পড়ে। সাত ঘুঁটিতে পুলিশের কাছে হেরে যায় আনসার। তবে এই হারজিতের কোনো প্রভাব তাদের মনে পড়ে না। বেঞ্চি থেকে উঠে দুজনে গেটের দুপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন অস্ত্রহাতে। শুরু হয় প্রকৃত জীবনযুদ্ধ।

(ঢাকাটাইমস/০৭ জুন/ এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :