বনানী ধর্ষণ: পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০১৭, ১৪:৪০| আপডেট : ০৮ জুন ২০১৭, ১৯:২০
অ- অ+

রাজধানীর বনানীতে হোটেল রেইন ট্রিতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে আদালতে। এতে নাম আসা পাঁচজনকেই দায়ী করা হয়েছে। এতে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে দুই জনের বিরুদ্ধে। আর বাকিদেরকে দেখানো হয়েছে সহযোগী হিসেবে।

বৃহস্পতিবার মুখ্য মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা। আগামী ১৯ জুন এই অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি হবে। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে মোট ৪৭ জনকে।

আসামিরা হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, রেগনাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ হোসাইন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম আবদুল হালিম) সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন এবং দেহরক্ষী রহমত আলী (শুরুতে নাম জানা দিয়েছিল আবুল কালাম আযাদ)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) আনিসুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় চার্জশিটটি আমরা হাতে পাই। আজ তা মহানগর হাকিম ঢাকা মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পরে বিচারক আগামী ১৯ জুন চার্জশিটের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন।’

গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার ৪০ দিন পর গত ৬ মে এক তরুণী বনানী থানায় একটি মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দেন। এরপর তাদের বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করেন সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে।

এই ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয় একাধিকবার। ভয় দেখাতে দুই তরুণীর বাড়িতে সাফাতের দেহরক্ষীকে একাধিকবার পাঠানো হয়। আর অব্যাহত হুমকির মুখে দুই তরুণী মামলার সিদ্ধান্ত নেন।

ভুক্তভোগী দুই তরুণী থানায় মামলা করতে গেলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিএম ফরমান আলী মামলা না নিয়ে নিজ মোবাইলে তাদের ছবি তুলে রাখেন এবং ৪৮ ঘণ্টা বিলম্ব করেন বলেও অভিযোগ করেন দুই তরুণী। পরে বনানী থানার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তদন্তের কমিটি করে ডিএমপি। যদিও সে অভিযোগ পরে প্রমাণ হয়নি।

দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই মামলার তদন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) মিজানুর রহমানকে এই কমিটির প্রধান করা হয়। সদস্য হিসাবে ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা (নর্থ) বিভাগের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ এবং উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন।

গত ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার হন প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফ। ১৫ মে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের ইব্রাহিম হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব-১০ এর একটি দল। একই দিন সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আযাদকে পুরান ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারও দুই দিন পর ১৭ মে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পাঁচ আসামিকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার পর দিন ৭ মে দুই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। গত ১ জুন দুই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষার ফল জানা যায়। তবে দেরিতে পরীক্ষা করানোয় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।

গত ১২ মে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাদের প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ হওয়ায় আমরা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।’

ডাক্তারি প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত না পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা ডাক্তারি অভিমত। আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আসামিদের বক্তব্য আমলে নিয়েই অভিযোগ দিয়েছি।’

এই মামলায় সাফাতের নাম আসার পর আপন জুয়েলার্সের ছয়টি বিক্রয়কেন্দ্রে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বৈধ কাগজপত্রহীন সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ এবং ৪২৭ গ্রাম হীরা জব্দ করে। পরে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়ে।

হোটেল রেইনট্রির বিরুদ্ধেও মামলার কথা জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। তাদের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়া মদ বিক্রি, ভ্যাট ফাঁকি এবং আবাসিক এলাকায় রাজউকের অনুমতি ছাড়া হোটেল পরিচালনার অভিযোগ এসেছে।

ঢাকাটাইমস/০৮জুন/এএ/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিজয় দিবসে ঢাকা মহানগর ছাড়া সারা দেশে বিএনপির র‌্যালি
১৬ বছরের দুঃশাসন শেষ হতে ১৬ দিন লাগেনি: অসীম
মঈন খানের বাসভবনে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মধ্যাহ্ন ভোজ
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর করা হবে: তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা