নতুন ভ্যাট পদ্ধতি অস্পষ্ট: গোলাম রহমান

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০১৭, ১৭:৩৩ | আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭, ২২:২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাজেটকে জনবান্ধব করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কিছু প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।  তিনি বলেছেন, বাজেট ঘোষণার পর ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। ভ্যাট আইন নিয়ে ক্যাবকে নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করে এনবিআর।

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।  এবারের বাজেটে সব পণ্যে একক ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে।  

কর্মশালায় গোলাম রহমান বলেন, ‘ভোক্তারা বিদ্যুৎ বিলের ওপর পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট দেয়। বাস্তবায়নাধীন ভ্যাট আইনে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। এটা ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত একটা চাপ। এটি নিয়ে ভোক্তাদের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। যে পদ্ধতি অনুসারে এই ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেই পদ্ধতিও অনেকটা অস্পষ্ট।’ এই পদ্ধতি আরো স্পষ্ট করার মত দেন তিনি।

ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘বাজেট ঘোষণার পর ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এজন্য আমরা এনবিআরের কাছে কিছু প্রস্তাব পেশ করব। সেজন্য বাজেট সংশোধন করে এটি জনবান্ধব করা প্রয়োজন। এবারের বাজেটে সকল পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এটি নিয়ে জনগণের অনেক আপত্তি রয়েছে। তবে নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ না করাটা জনগণের জন্য একটি সুসংবাদ বলা চলে।’

গোলাম রহমান বলেন, অনেকেই এবার আশঙ্কা করছেন এই ভ্যাটের কারণে জনগণ অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছে ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই কম বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

পানি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘সর্বক্ষেত্রে ভ্যাট যুক্ত করার ফলে পানির দাম বাড়িয়ে দেয়া আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। মানুষ একফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করে। সেখানে ভ্যাট বাড়িয়ে পানির মূল্যবৃদ্ধি করাটা সত্যি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। যেহেতু বিশেষ ক্ষেত্রে গ্যাস দেশের বাইরে থেকে আমাদানি করতে হয়, সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে বাসাবাড়ির ক্ষেত্রে চুলাপ্রতি গ্যাসের মূল্য ৯০০ টাকা করাটা উচিত হয়নি। যাদের মাসে আয় রোজগারই গড়ে ১২ হাজার টাকা। সেখানে সব খরচ বাদ দিয়ে ৯০০ টাকা দেয়া অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে।’

কর্মশালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের ক্ষুদ্র থেকে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এ জন্য বড়মাপের ভূমিকা পালনের কারণে আমরা সারা বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে দ্বিতীয় স্থানে এসেছি। এ জন্য এনবিআরের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন আমরা আরও মসৃণ করব। এটি এখন প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে।’

ব্যাংকের জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্ক ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে জানিয়ে এনবিআরের সদস্য জাহাঙ্গীর বলেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ তা জানত না। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মানুষ আবগারি শুল্কের ব্যাপারে যতটা ভয়টা পাচ্ছে, ততটা ঠিক নয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করের হার অনেক কম। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের জমানো অর্থ থেকে অনেক আগ থেকেই কর নিচ্ছে। এটি নতুন কিছু নয়।’

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এতে তিনি এক লাখ টাকার ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ করার প্রস্তাব করেন।

এছাড়া ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্ব থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত দেড় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা, তৃতীয় স্তরে এক কোটির বেশি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত সাত হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটি ঊর্ধ্ব তার বেশি জমার ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট প্রস্তাব নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব নিয়েই। এই সমালোচনায় যোগ দেন সংসদ সদস্যরাও।

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসেনসহ ক্যাবের অন্য কর্মকর্তারা।

ঢাকাটাইমস/৮জুন/এসও/এমআর/মোআ