মৌচাক-মালিবাগ সড়কে এবার ধুলার ভোগান্তি

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৭, ০৯:১৪ | আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭, ১৬:১২

আউয়াল খাঁন, ঢাকাটাইমস

জৈষ্ঠ্যের আকাশ কাঁদলে ময়লা-কাদা, আর সূর্য তেতে উঠলে ধুলায় ছেয়ে যায় এলাকা। মালিবাগ-মৌচাক এলাকার মানুষদের যেন কোনো নিস্তার নেই।

যানজটের ভোগান্তি দূরীকরণে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ যতটা আশা দেখাচ্ছে এই সড়ক ধরে চলাচলকারী যাত্রী বা এলাকাবাসীকে, ততটাই তারা ক্ষুব্ধ নিচের সড়কের অব্যবস্থাপনা নিয়ে। ওপরের সড়ক ঠিক করতে গিয়ে নিচের সড়কে চোখ না দেয়ার ফল কয়েকদিন আগে ভোগ করেছে এলাকাবাসী। টানা বৃষ্টিতে কোমড় সমান পানি জমার পর গণমাধ্যমগুলো বলতে গেলে হামলে পড়ে এই এলাকায়।

এই প্রতিবেদনে সুফল পেয়েছে এলাকাবাসী। নালাগুলো পরিস্কার করা হয়েছে, মেরামত কাজে হাত দেয়া হয়েছে ভাঙা সড়কের। কিন্তু ‘বৃষ্টির সন্ত্রাস’ শেষ হলে এবার দেখা দিয়েছে ‘ধুলার সন্ত্রাস’।

দীর্ঘ চার বছর ধরে এই পথের ছোট বড় অসংখ্য ভোগান্তির কথা নিয়মিত যাতায়তকারীদের কাছে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে এলাকাগুলোর মূল সড়ক জুড়ে ধুলাবালির রাজত্ব এতোটাই গেড়ে বসেছে যে সাধারণ মানুষের সহ্য সীমার বড় একটি পরীক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলা চলে।

একটা গাড়ি অতিক্রম করতে দেখেই কয়েকজন বাচ্চাকে বালু বালু চিৎকার করে নিজের নাক-মুখ হাত দিয়ে চাপা দিয়ে ধরতে দেখা যায়।

এপ্রিলের শেষে এই ভাঙা সড়কটির মেরামতের কাজ হাতে নেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ হয়ে শান্তিনগর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস কলেজের সমানে পর্যন্ত দুই পাশই কংক্রিটের ঢালাই দেয়া হয়। এরই মধ্যে সড়কটি ধরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা পরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে মৌচাক মোড়ে থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত পশ্চিম পাশের রাস্তা এখনো যান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। বর্তমানে সড়কের পাশের ফুটপাতে ড্রেনের কাজ চলছে এবং মুল সড়কে ইটের সুড়কি ও বালু বিছানো হয়েছে। বাকি আছে কেবল পিচ ঢালার কাজ।

মৌচাক-মালিবাগ ও শান্তিনগর মূল সড়কের সাংস্কারকাজ হলেও উড়াল সেতুর নিচে জমিয়ে রাখা মাটির স্তূপ, ড্রেনের পাশে জমানে মাটি, ইট বা বালুর স্তূপের কারনে নতুন মেরামতকৃত এই সড়কটি ধূলার আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু নির্মাণাধীন ভবনের পাশের ফুটপাতে নিজস্ব ইট ও বালু স্তূপ করে রাখা। কিন্তু কাজ শেষে ওই স্থানটি অপরিষ্কারই রেখে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে, বাতাস বা বৃষ্টিতে সেগুলো ধুয়ে মূল সড়কে জমা হয়। রোদের তাপে সেগুলো শুকিয়ে মূল সড়কেই ছড়িয়ে থাকে। আর যখনই এই পথটি ধরে ভারী যান চলাচল করে, ঠিক তখনই রাস্তার পুরো অংশটিকে ধুলায় আচ্ছন্ন করে ফেলছে।

এই পথটি ধরে যারা নিয়মিত চলাচল করছেন তাদের পাশাপাশি যারা নতুন তাদের অনেকেই বিব্রতকর অবস্থায় পরছেন প্রতি মুহূর্তে। সচেতনতার জন্য নয় বরং অনেকেই এত ধুলার মধ্যে কিছুটা স্বস্তির আশায় রুমাল, মুখোশ, ওড়না, বা নিজের গায়ের পোশাক দিয়েই নাক মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন।

পথচারী আলম সিদ্দিকি বলেন, ‘এতদিন নোংরা কাদা-পানি, ভাঙা রাস্তা নিয়া অশান্তিতে ছিলাম। এখন এগুলা ঠিক হইতাসে, কিন্তু হঠাৎ যে পরিমাণ ধুলাবালি বাড়সে, দম নেয়ার মতো অবস্থা নাই বললেই চলে। এত বালুতে তো চোখটাই নষ্ট হইব।’

মৌচাকের একজন হকারকে বালতিতে করে ড্রেন থেকে পানি তুলে রাস্তায় ছিটাতে দেখা গেল। কারণ জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কি করমু কন ভাই? এতোদিন ডেরেনের ময়লা পানির কারণে ব্যবসায় মন্দা আছিল। আর এহন একটা গাড়ি গেলেই যেই ধুলা উড়তাসে, আমার সব জিনিসই নষ্ট হইয়া যাইতাসে। এইহানে ধারের কাছে পানি নাই দেইখা ডেরেনের পানি দিয়াই রাস্তা ভিজাইতাসি, বালুডা একটু কম উড়ব।’

আধুনিক শহর গড়ার ক্ষেত্রে রাজধানীর প্রতিটি সড়কের ধুলাবালি পরিষ্কারের ব্যবস্থা করেতে হবে এবং এ জন্য সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন মৌচাকের আহমেদ শিপন, রাজারবাগের আকমল, শান্তিনগরের মেহরাব উদ্দিনসহ বেশ কয়েক জন এলাকাবাসী।

বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ কর্মকর্তা শফিকুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে না। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সিটি করপোরেশনের খোড়াখুড়ি সংক্রান্ত ধুলা-বালির বিষয়টি দেখে।’

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী ফারাজি শাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন শফিকুল আলম। কিন্তু শফিকুল আলম কিছু বলতে চাননি। তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

(ঢাকাটাইমস/০৯জুন/এএকে/ডব্লিউবি)