যাপন
দর্জির কাছে ঈদের পোশাক
এক সময় ঈদের পোশাক মানেই ছিল দর্জির দোকানে মাপজোখ দিয়ে আসা। তার আগে থান বা গজকাপড়ের দোকান থেকে পছন্দের বস্ত্র কেনা। ব্যস্ততায় এখন অনেকেই তৈরি পোশাকে ঝুঁকে পড়েছেন। কিছু মানুষ আছেন যারা আবার আগের মতোই চলছেন। এদের কেউ শরীরের সঙ্গে মানানসই ঠিক মাপের পোশাক পরতে চান। কেউবা নকশাটা নিজের মতো করে করতে চান। তাদের পছন্দ দর্জির কাছে পোশাক সেলাই করতে দেওয়ার বিষয়টি। ঈদের আগে কিন্তু দর্জি-দোকানের মাস্টার, সেলাইকর্মীদের ব্যস্ততার শেষ নেই। তাই রোজার শুরুতেই পোশাক বানানোর ফরমায়েশ দিতে হয় তাদের। একটু দেরি হয়ে গেলে কেউ আর কাজ নেবেন না।
যা কিনতে হবে
মেয়েদের পোশাক আকর্ষণীয় করতে কাপড়ের ধরন আর রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লেস, পুঁতি, জরি, বোতাম, চেইন, হুক এবং আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন পড়ে। নকশা অনুযায়ী ব্যবহারে পোশাকে ভিন্নতা নিয়ে আসে। সিঙ্গেল কামিজ এখন জনপ্রিয়। তাই এর সঙ্গে মিলিয়েও পালাজ্জো কিংবা সালোয়ার এবং ওড়না কিনতে হয়। আবার পাথর, চুমকি, এমব্রয়ডারি প্রভৃতি কাজ করা আনস্টিচ লিলেন, জর্জেট, শিফনের সালোয়ার-কামিজের চাহিদা ব্যাপক। ঈদ তো বটেই, ঈদ-পরবর্তী সময়েও পরা যাবে অনায়াসে। ছেলেদের ক্ষেত্রে শার্ট, প্যান্ট পিস কিনে সেলাই করতে দেওয়ার প্রবণতা আছে। কিছু এলাকায় পাঞ্জাবি সেলাই করে নেওয়ার প্রচলন আছে।
সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়
শপিংমলের চাকচিক্যময় পছন্দের পোশাকের দাম সাধ্যের বাইরে থাকে। এসব তৈরি পোশাক বেশি দাম দিয়ে কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠে না। অথচ গজ কাপড় কিনে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মাপ ও ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে নিলে যেমন সাশ্রয়ী হয় পাশাপাশি দক্ষ সেলাই কারিগরদের কারিশমায় অনেকটা শো-রুম ড্রেসের মতোই দেখায়। তবে দাম যেমনই হোক না কেন ভিন্নতা আছে এমন নতুন নকশার জামা বানাতে চায় সবাই। তাই দর্জির বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে সব বয়সী। বাহারি পোশাক আর দামের পার্থক্য বুঝে কাপড় কিনতে হবে। আবার বিক্রেতার সঙ্গে দামদর আলোচনা করে কম দামে কাপড় নেওয়া যায়। একরঙা কাপড়ের চেয়ে ঈদে প্রিন্টের বৈচিত্র্যময় কাপড় কেনাই ভালো।
নকশায় ভিন্নতা
ফ্যাশন সচেতনরা নিজেদের পোশাকে সবসময়ই বৈচিত্র্য চায়। তাই তৈরি পোশাকের কদর যতই থাকুক না কেন জামার কাটছাঁটে পরিবর্তন এনে নিজেকে অন্যদের থেকে ভিন্ন রাখতে চায়। গলা, হাতা, জুলের পাশাপাশি সালোয়ারের কাটেও বৈচিত্র্য এসেছে। চাঁদনিচকের সেলাই কারিগরদের মতে, এবারের ঈদ গরমের মধ্যে হবে। তাই ম্যাগি হাতার দিকে অনেকের ফরমায়েশ থাকলেও যারা বেড়াতে বের হবেন তারা থ্রি-কোয়ার্টার হাতা পছন্দ করছেন। লং কামিজের আবেদন এবারের ঈদেও থাকছে আর এর সঙ্গে পালাজ্জো বানিয়ে নিচ্ছেন কিংবা এ ধরনের ঢিলেঢালা সালোয়ার অনেকে আবার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের গজ কাপড় কিনে ইন্টারনেট থেকে ছবি দেখিয়ে কাটছাঁটের নানারকম ফরমায়েশ করে থাকেন। জামার ঝুল বেশি দিতে অনেকেই লেস কিংবা জামার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে আলাদা কাপড় লাগিয়ে দেন।
খরচ কেমন
পোশাকের ধরন ও নকশার ওপর নির্ভর করে মজুরি নির্ধারণ করা হলেও শপিংমলের সেলাই কারিগরদের চাহিদা বরাবরই বেশি। তাদের মজুরি শুরুই হয় ৮০০ টাকা থেকে। কিন্তু নিউমার্কেট বা গাউছিয়া এলাকায় পোশাক মজুরি কম থাকে। কামিজ বানাতে খরচ ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়। সুতি গজ কাপড় হলে দাম কম থাকে। জর্জেট বা শিফনের দাম ৩৫০ টাকা। অরচার্ড শপিংমলের দর্জিরা খুব ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। তারা বলছেন, দোকান ভাড়া তো আছেই, আবার আয়ের মোক্ষম সময় এটা। অনেকেই দামি আনস্টিচ কিংবা গজ কাপড় কিনে বানাতে দিয়েছেন। পছন্দমতো ফিটেট জামা না হলে দামি পোশাক নষ্ট করার অভিযোগ শুনতে হবে ভেবে শতভাগ মনোযোগ দিতে হচ্ছে সেলাইয়ে।
দর্জিবাড়ির খোঁজ
নগরের অরচার্ড পয়েন্ট, রাপা প্লাজা, মেট্রো, বসুন্ধরা সিটি, চাঁদনিচক, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, গাউসুল আজম মার্কেট তো আছেই। আবার গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি, বনানীতে রয়েছে পোশাক বানানোর দক্ষ ও আধুনিক দর্জিবাড়ি। তবে পোশাকের কাটিংয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের পোশাক ভিন্ন । টপটেন, ফিট এলিগেন্স, স্টার টেইলার্স, দ্য রেমন্ড শপ, আইকনস টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্স, আজিজস টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্সÑ এগুলোর শাখাও রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
(ঢাকাটাইমস/৯জুন/এজেড)
মন্তব্য করুন