‘তিনি ছিলেন মুসলিম সাংবাদিকতার পথিকৃৎ
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ছিলেন উপমহাদেশের মুসলিম বাংলা সাংবাদিকতার অগ্রনায়ক। তিনি একাধারে দৈনিক আজাদ ও মাসিক মোহাম্মাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সমাজসংস্কারক, ইসলামি চিন্তাবিদ। তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘মোস্তাফা চরিত’ এখনো বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে সমাদৃত। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন।
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ’র ১৪৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৩৯০তম পাক্ষিক সাহিত্য সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
একাডেমী সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুলের সঞ্চালনায় শুক্রবার কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাহিত্যসভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গল্পকার সোহেল ইকবাল। মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ’র জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমীর নির্বাহী পিটিআইর প্রাক্তন সুপার রাজবিহারী চৌধুরী, একাডেমীর স্থায়ী পরিষদ সদস্য গবেষক নূরুল আজিজ চৌধুরী, একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইসলামী গবেষক আহমাদুল্লাহ, স্থায়ী পরিষদ সদস্য কবি-অধ্যাপক দিলওয়ার চৌধুরী, একাডেমীর অর্থ সচিব কবি মোহাম্মদ আমিরুদ্দীন, পোকখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার শফিউল আলম প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘তাঁকে শুধু সাংবাদিক অভিধা দিলে তাঁর প্রতি অবিচার করা হবে। তিনি ছিলেন, সাংবাদিক, সম্পাদক, সাহিত্যিক, গবেষক, চিন্তাশীল ইসলামি পণ্ডিত, মুসলামনাদের স্বার্থসংরক্ষক, প্রথম সারির রাজনীতিবিদ। মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। ১৯১৩ সালে তিনি আঞ্জুমানে উলামায়ে বাংলা নামে আলেম সমাজের একটি সংগঠন কায়েম করেন। ১৯১৫ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মাসিক আল-ইসলাম। ১৯১৬ সালে লক্ষ্মৌতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের যৌথ সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এ সময় তিনি খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে কংগ্রেস ত্যাগ করে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৬ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৪১ সালে তিনি মুসলিম লীগের বাংলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন। ১৯৫৪ সালে মাওলানা আকরম খাঁ মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন এবং ১৯৬২ সালে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রথম সভাপতি মনোনীত হন। ১৯৬৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কর্তৃক জারিকৃত প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।’
বক্তারা বলেন, ‘তিনি একমাত্র আরবি শিক্ষিত মাওলানা যিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন।’
পরে মোহাম্মদ আমিরুদ্দীন ও কল্লোল দে চৌধুরী কবিতা পাঠ করেন এবং নূরুল আলম হেলালী কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন।
প্রসঙ্গত, মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৮৬৯ সালে ৭ জুন পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট মহকুমার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালের ১৮ আগস্ট তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
১৯৮১ সালে তাকে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা দিবস পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/০৯জুন/জেবি)
মন্তব্য করুন