রমজানে দ্রব্যমূল্যেও সংযমী আরব ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৭, ২০:৪৬

আমীর চারু, রিয়াদ, সৌদি আরব

আত্মশুদ্ধি আর কৃচ্ছ্রসাধনের বার্তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহ মাঝে প্রতি বছর উপস্থিত হয় পবিত্র সাহার-ই-রামাদান বা মাহে রমজান মাস। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার এই মাসে আরব উপত্যকায় পরিলক্ষিত হয় কৃচ্ছ্রসাধনের সুন্দর দৃষ্টান্ত। চাল-চলন, আহার থেকে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও সংযম পালন করা হয় এখানে।

পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে মূল্যছাড় দেওয়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামেন আরব ব্যবসায়ীরা। চাউল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নেমে আসে অর্ধেকে ।

সৌদি আরবে পাঁচ কেজি ওজনের বাসমতি চালের ব্যাগ রমজানের আগে বিক্রি হতো ৩৮ রিয়াল, রমজানে পাওয়া যায় ১৯.৯৫ রিয়াল দরে। কোনো কোনো সুপার মার্কেটে এর চেয়ে বেশি ছাড় দিতে দেখা গেছে।

দশ কেজি চিনির ব্যাগ ৩১.৯৫ টাকা হলেও রমজানে ছাড়মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে ১৪.৯৫ রিয়ালে। দশ কেজি ময়দা স্বাভাবিক সময়ে ৩৫ রিয়ালে বিক্রি হলেও রোজায় ১৮.৯৫ রিয়াল। পৌনে দুই লিটার ভোজ্যতেলের ক্যান ১২.৫০ রিয়াল থেকে নেমে মাত্র ৪.৯৫ রিয়াল।

মাছ-মাংসের দামেও ছাড় দেওয়া হয় বিস্তর। ১১ কেজি ওজনের হিমায়িত মুরগির মাংসের বাজারমূল্য রমজানের আগে ছিল ১২১.০০ রিয়াল, রমজানে ছাড়মূল্য ৬৯.৯৫ রিয়াল।

ইফতারের জনপ্রিয় শরবত পানীয় ট্যাংক গুঁড়া পাউডার ৪১.৯৫ রিয়াল থেকে নেমে ১৮.৭৫ রিয়ালে বিক্রি হচ্ছে। আছে কৌটাজাত নানাবিধ পণ্য। আরবদের কাছে অত্যন্ত জরুরি কৌটাজাত খাদ্য 'ফুল' সিমের বিচি সাধারণত ১৯.৫০ রিয়ালে ছয় কৌটা, বর্তমান পাওয়া যাচ্ছে ৯.৯৫ রিয়ালে।

কাঁচামাল, শাকসবজি, ফলমূলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এই বিশেষ ছাড় দেওয়া সম্পর্কে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয় তামিমী সুপার মার্কেটের সিনিয়র সুপারভাইজার মাহবুব মুর্শেদের।

তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, সৌদি সরকার ভোক্তা অধিকারে কঠোর নজরদারি করে থাকে। সাধারণত সৌদি আরবে সব ধরনের পণ্যসামগ্রী আমদানিনির্ভর। আমদানিকৃত পণ্যের ক্রয়মূল্যের ওপর পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ, ইমারত ভাড়া, সেবামূল্য সংযোজন করে শতকরা ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ লাভে বিক্রি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ইচ্ছা করলেই কোনো ব্যবসায়ী পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারেন না। প্রতিটি পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে হয়। প্রতিটি পণ্যের মেয়াদের ওপর নির্ভর করে লভ্যাংশ নির্ধারণ।

রমজানের সময় সাধারণত ক্রেতাদের একটি বাড়তি খরচের ধাক্কা বইতে হয়। তাই ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি মূল্যের সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত করা হয় না। অন্যান্য পণ্য যেহেতু আগের মূল্যেই থাকে, সে কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে মুনাফা অর্জন না করলেও লোকসান গুনতে হয় না ব্যবসায়ীদের। এতে যেমন লাভবান হন ক্রেতা, তেমনি ব্যবসায়ীরাও পবিত্র এ মাসে ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পেরে পরিতৃপ্তি অনুভব করেন।

তামিমী সুপার মার্কেটে কথা হয় কেনাকাটা করতে আসা গোপালগঞ্জের মল্লিক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত সারা বছর অপেক্ষা করি এ মাসের জন্য। এ মাসে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে তিন-চার মাসের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনে রাখি। এতে আমাদের বেশ সাশ্রয় হয়। দেশে প্রিয়জনদের এ মাসে বেশি টাকা পাঠাতে পারি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে পছন্দ করেন। তাদের আরব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংযমের প্রকৃত শিক্ষা নেয়া দরকার।’

(ঢাকাটাইমস/৯জুন/মোআ)