চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ঈদ বাজার
পবিত্র ঈদুল ফিতরের এখনো বাকি দুই সপ্তাহের মতো। কিন্তু এর আগেই চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। ঘূর্ণিঝড় মোরার পর গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামের আকাশে ঝলমল করছে রোদ। এরপর ক্রেতারা নেমে পড়েছেন ঈদ কেনাকাটায়। ক্রেতাদের ভিড়ে বিক্রেতাদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
ক্রেতাদের ভাষ্য, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ক্রেতারা নামতে পারেনি ঈদের কেনাকাটায়। শেষ মুহূর্তে পছন্দের কাপড় ফুরিয়ে যাবে, দামও থাকবে চড়া। তাই মধ্য রোজার আগে থেকে কেনাকাটা শুরু করেছেন তারা।
এদিকে ক্রেতাদের কাছে টানার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্যবসায়ীরাও। ক্রেতাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন পোশাক ও অলংকারে সাজানো হয়েছে নগরীর শপিংমলগুলো। বর্ণিল আলোক সজ্জায় বিপণি বিতানগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন করে।
এবার গরমের মাত্রা বেশি থাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মলগুলোতে ভিড় একটু বেশি ক্রেতাদের। তবে সাধারণ মানের মার্কেটগুলোতেও মানুষের কমতি নেই। এসব মার্কেটে এখনই ক্রেতা উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল, সবখানে চলছে কেনাকাটা।
দেশীয় জামদানি, টাঙ্গাইল ও তাঁতের নতুন ডিজাইনের শাড়িসহ নারীদের বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হচ্ছে ধুমধারাক্কা। ফ্যাশনের পাশাপাশি ঐতিহ্যতেও গুরুত্ব দিচ্ছেন নারীরা। আর প্রচুর কালেকশনের পাশাপাশি দাম এখনো কম থাকায় খুশি তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর প্রতিটি শপিং মলেই উপচেপড়া ভিড়। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর প্রতিটি শপিং মল। এতের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। তরুণীরা কাপড় কিনে তাতে বুটিকস শপ থেকে পছন্দের নকশা তৈরি করাচ্ছেন। ফ্যাশন সচেতন রুচিশীল ছেলেরাও পিছিয়ে নেই। তারাও ছুটছেন সমানে। অভিজাত মার্কেটের মধ্যে সানমার ওশান সিটি, আমিন সেন্টার, আফমি প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি আড়ত নগরীর টেরিবাজারেও দম ফেলার ফুরসত নেই বিক্রেতাদের। সব শ্রেণির ক্রেতাই ছুটছেন এ মার্কেটে। টেরিবাজারে দেশীয় কাপড়ের চেয়ে ভারতীয় কাপড় বেশি মিলছে। চীনা ব্র্যান্ডের কাপড়ও মিলছে বেশ।
টেরিবাজারে গুজরাটি চিকেন ব্রান্ডের কাপড় প্রতি গজ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, জয়পুরী কটন ৪৭০ থেকে ৫০০, সিল্কের কাশ্মীরি কাতান ৩০০ থেকে ৩৫০, বোটা জর্জেট ১৮০ থেকে ২০০, মুম্বাই নেট ৫০০ থেকে ৫৫০, স্টোন নেট ৪৫০ থেকে ৫০০, ভেলভেট ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বোম্বে বুটিকস ৭০০ থেকে ৭৫০ এবং দিল্লি কটন ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকা।
বিক্রেতারা জানান, প্রতি বছর ক্রেতাদের পছন্দের ধরন পাল্টাচ্ছে। সেইসঙ্গে বদলাচ্ছে চাহিদার হিসাব-নিকাশ। এবার লিনেন, সুতি, জর্জেট, কাতান, জামদানি কাপড়ের প্রতি বেশি আগ্রহ ক্রেতাদের। এবার বাজারে আসা নতুন ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে বাহুবলী ক্রেজ, লেহেঙ্গা ও সারারা।
টেরিবাজারের বিক্রেতা নওশাদ হোসেন জানান, এখানে ঈদের সব ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। ক্রেতারা চাইলে পাইকারি দোকানগুলোতেও খুচরা ঈদের পোশাক কিনতে পারেন। প্রতিবারের মতো ঈদে আমরা সব শ্রেণির ক্রেতার চাহিদা পূরণ করতে চাই।
বিক্রেতারা জানান, টেরিবাজারে প্রতি গজ লিনেন কাপড় বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। জর্জেট কাপড় ১৩০ থেকে ১৫০ ও ভারতীয় কাতান ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। জামদানি কাপড় বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
তবে ক্রেতাদের অনেকের অভিযোগ বড় মার্কেটে দাম নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। ছোট মার্কেটে একই পোশাকের যে দাম, বড় মার্কেটে তার দাম নেয়া হচ্ছে অনেক বেশি। এজন্য তাদের অনেকে ছোট মার্কেট থেকে পোশাক কিনছেন।
নগরীর চান্দগাঁও সমশের পাড়া এলাকা থেকে আসা রেশমি নামে এক ক্রেতা বলেন, ছোট মার্কেটগুলোতে দাম এখনো যৌক্তিক। তাই দাম নিয়ে খুব একটা দর কষাকষি করতে হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাচ্চাদের জন্য বেশি কেনা হয়, বড়দের চাইতে। ওদের চাওয়া পাওয়াটা আমাদের কাছে অনেক বড়।
বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেটের চয়েস এন্ড ফ্যাশনের বিক্রেতা মুরাদ হোসেন বলেন, গরমে ভারী না নিয়ে হালকার মধ্যে..কিছুটা, কিন্তু লং ড্রেসগুলো কিছুটা প্রিফার (পছন্দ) করছে মেয়েরা। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে গতানুগতিক।
ঢাকাটাইমস/১০জুন/এমআর
মন্তব্য করুন