বগুড়া সদর না গাবতলীতে খালেদা জিয়া?
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এক ধরনের টানাপোড়েন থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি। অনানুষ্ঠানিকভাবে চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ। বিভিন্ন স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতাও শুরু হয়ে গেছে। ফলে তাদের নিয়ে আগ্রহ—আলোচনা বাড়ছে।
দলের কেন্দ্রীয় ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের আসনগুলো অনেকটাই নির্দিষ্ট বলে সেগুলো নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবার কোন কোন আসনে নির্বাচন করবেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে নেতাকর্মী ও রাজনীতিসচেতন মানুষের মধ্যে। এমনকি আদালতে সাজা পাওয়া তারেক রহমানের নির্বাচন ও আসন নিয়েও আলোচনা শোনা যাচ্ছে দলের ভেতর।
বিশেষ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ার দুটি আসনের দিকে দৃষ্টি সবার। বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহাজাহানপুর) আসনে বরাবর নির্বাচন করে আসছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এবার সদর বা গাবতলীর কোনো একটা আসন ছেড়ে দিতে পারেন তিনি।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ ছিল। নতুন নিয়মে সর্বোচ্চ তিন আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সেটি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হয়।
এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রতিবার বগুড়া, ফেনী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঁচটি আসনে নির্বাচন করেন। প্রতিবারই সব আসনে জয়ী হন তিনি।
সব কটি নির্বাচনেই বগুড়ার ওই দুটি আসনে প্রার্থী হন জিয়া-পত্নী খালেদা জিয়া। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি সেখান থেকে লড়বেন, নাকি একটি আসন ছেড়ে দেবেন ছেলে তারেক রহমানের জন্য তার হিসাব-নিকাশ চলছে দলে।
গুঞ্জন আছে, আগামী নির্বাচনে দল অংশ নিলে খালেদা জিয়া কেবল বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর) আসনে প্রার্থী হতে পারেন। সদর আসনে (বগুড়া-৬) নির্বাচন করতে পারেন তার বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তারেকের বিরুদ্ধে আদালতে সাজার রায় থাকায় তার নির্বাচন করতে আইনি সমস্যা হতে পারে, সেটিও মাথায় রাখছে দল।
মুদ্রা পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের ২১ জুলাই দেয়া রায় কার্যকর করতে বিচারিক আদালতকে তারেক রহমানের নামে সাজা পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে করা এ মামলার রায়ে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেককে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে।
তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টাসহ দুর্নীতি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ অবস্থায় তারেক জিয়ার নির্বাচন করা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে দলের নেতাদের মধ্যে। তাই খালেদা জিয়া ছেড়ে দেয়ার পর তারেক রহমান নির্বাচন করতে না পারলে বিকল্পও ভেবে রাখছে স্থানীয় বিএনপি। দল সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া বগুড়া সদর আসন থেকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিলে ওই আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
দেশের নির্বাচন ও রাজনীতিতে বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯১ (একটি আসন বাদে) এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সব কটি আসনেই জয় লাভ করে বিএনপি।
তবে ২০০৮ সালে বিএনপির এই ‘দুর্গে’ ফাটল ধরায় আওয়ামী লীগ। জেলার দুটি আসন ছিনিয়ে নেয় তারা। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বর্তমানে ভোটের হিসাব নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা করা কঠিন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি গাবতলী ও শাহজাহানপুর নিয়ে বগুড়া-৭ আসন। ফলে এটি জিয়া পরিবারের অনেকটা ‘সংরক্ষিত’ আসন! বিগত দিনে খালেদা জিয়া এ আসন থেকে নির্বাচন করলেও নেতাকর্মীরা চান তারেক রহমান এখানে প্রার্থী হোন। শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের এমন আগ্রহ কতটা মূল্যায়ন করা হয় সেটা বলতে পারছেন না দলের নেতারা।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে অনেকে ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর’ দাবি করে মুখ খুলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়া জেলা বিএনপির এক নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বগুড়া-৬ ও ৭ আসন নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। কারণ এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে হাইকমান্ড থেকে। তাই আগ বাড়িয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বগুড়ার ওই দুই আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দলের হাইকমান্ড দেবে। তবে এতটুকু বলতে পারি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আগামী নির্বাচনে বগুড়ার ৮০ ভাগ ভোট ধানের শীষ প্রতীকে যাবে।’
বিএনপি সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। বগুড়া সাত আসনে খালেদা জিয়া জয়ী হলেও পরে আসনটি ছেড়ে দেন। উপনির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
(ঢাকাটাইমস/১১জুন/বিইউ/মোআ)
মন্তব্য করুন