চাকরি দিন, নয় বিষ দিন: কাদেরের প্রতি খোলা চিঠি
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেই চাকরির ব্যবস্থা করা হবে-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন ঘোষণার পর পর চাকরি চেয়ে তার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও ছাত্রলীগের এক কর্মী। শিবিরের হামলায় মারাত্মক আহত সাইফুর রহমান বাদশাহ ফেসবুকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে এই চিঠি লিখেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্রলীগ কর্মী পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকরি না পেয়ে বর্তমানে বর্গা চাষ করে কোনো রকম দিন পার করছেন। তিনি ওবায়দুল কাদেরের কাছে একটি পিয়ন বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর চাকরি চাইছেন।
বাদশা রেখেন, ‘আমার আশা এবং বিশ্বাস মাননীয় সাধারণ সম্পাদক দলের জন্য আমার ত্যাগ, নির্যাতিত হওয়া, পঙ্গু হওয়া, অবদান সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমার একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করবেন নয়তো এক বোতল বিষ উপহার দেবেন। ’
সোমবার রাজধানীতে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীকে বলেন, ‘তোমরা অপকর্মে লিপ্ত হবা না। টাকার দরকার হলে আমার কাছে এসো। যখন ছাত্রত্ব শেষ করবে, চাকরি দরকার, আমার কাছে আসবে। এটা নেত্রী আমাকে বলে দিয়েছেন। এমন কিছু করবে না যাতে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।’
এই বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমান বাদশা চাকরি চেয়ে ফেসবুকে লেখেন, সরকারি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় পাস করেও তিনি চাকরি পাননি।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের হামলায় মারাত্মক আহত হন ছাত্রলীগ কর্মী বাদশা। তিনি জানান, শিবিরের সন্ত্রাসীরা তাঁর এক পা ও দুই হাতের রগ কেটে দেয় এবং মাথাতেও কোপ বসায়। পরে মৃত ভেবে বাদশাকে ফেলে রেখে যায়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে বাদশার চিকিৎসা করা হয়। এতে প্রাণে বেঁচে গেলেও আংশিক পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় তাঁকে। তাঁর দুই হাতের প্রায় সবগুলো আঙ্গুলই বাঁকা হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে এখন আর হাঁটতে পারেন না তিনি। মাঝে মধ্যেই তীব্র মাথা ব্যথা হয়।
বাদশা লেখেন, ‘ছাত্রলীগ করতে গিয়ে পঙ্গু হয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করার পর চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকারি চাকরি পাইনি। বেশ কয়েকটি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় টিকেও চাকরি হয়নি। সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সার্টিফিকেট সহকারী পদে লিখিত পরীক্ষায় পাস করি। ভাগ্যের এমন নিমর্ম পরিহাস যে তৃতীয় শ্রেণির এই চাকরিটিও আমার ভাগ্যে জোটেনি। এখন বাড়িতে থেকে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’
শিবিরের হামলার কথা উল্লেখ করে বাদশা লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক একজন কর্মী। ২০০৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হবার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাবি শাখার একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলাম। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত-শিবিরের অতর্কিত হামলায় আমার সহযোদ্ধা গণিত বিভাগের ফারুক হোসেন নিহত হন, আমার এবং ফিরোজ মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের হাত পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা, সেই সঙ্গে বিভিন্নভাবে কুপিয়ে আহত করে আরও ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে। আমরা দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে কোনো মতে বেঁচে যাই, মানে পঙ্গু হয়ে যাই। ’
বাদশা লেখেন, ‘রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ এবং ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় সেই সময়ে সাবেক মন্ত্রী (স্বরাষ্ট্র) সাহারা খাতুন, আ ফ ম রুহুল হক (স্বাস্থ্যমন্ত্রী), শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, প্রয়াত মুজিবুর রহমান ফকির, বর্তমান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ শতাধিক সংসদ সদস্য হাসপাতালে আমাদের দেখতে এসে সুচিকিৎসার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন। তার পর কেটে গেছে সাড়ে সাত বছর। এদিকে গত ২৪ মে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষও হয়ে গেছে। লিখিত পরীক্ষায় টেকার পরও কেউ একটা চাকরি দিতে পারেননি, দেননি।’
ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণায় আবার আশা ফিরে পাওয়ার কথা জানান বাদশা। তিনি লেখেন, ‘পত্রপত্রিকায় আপনার বক্তব্যে আশাবাদী হলাম, আপনি বলেছেন চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেলেও আপনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাকরি দেবেন। আমি বাংলা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) সহ স্নাতকোত্তর পাশ। চাকরি না পেয়ে, বয়স শেষ হয়ে যাওয়াতে আমি এখন অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করি। যা দিয়ে আমার স্ত্রী-পুত্র বয়স্ক বাবা-মায়ের খরচ বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।’
ঢাকাটাইমস/১২জুন/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন