প্রথম প্রেম

নওশিন ইসলাম
| আপডেট : ১২ জুন ২০১৭, ১৩:৩৫ | প্রকাশিত : ১২ জুন ২০১৭, ১২:৪০

সালটা ২০০৮। প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে সবে ক্লাস সিক্সে উঠেছি। শুরুটা তখন থেকেই। একই বছর আপনি এইচএসসি পাস করে পেরিয়ে গেছেন কলেজের গণ্ডি। বয়সের পার্থক্যটা তাই একটু বেশিই ছিল আমাদের মাঝে। মেধাবী ছাত্র আর তথাকথিত সুদর্শন হওয়ার সুবাদে সবাই চিনতো আপনাকে। চিনতাম না শুধু আমি।

আপনার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের স্মৃতিটা সুখকর ছিল না। আন্তঃ স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য জুনিয়রদের গাইড করার দায়িত্ব পড়েছিল আপনার ওপর। ভাগ্যক্রমে হোক আর দুর্ভাগ্যক্রমে হোক আমিও ছিলাম সেই জুনিয়র বিতার্কিক দলের একজন। বার বার আমার উচ্চারনে সমস্যা হচ্ছিল আর বার বার আপনি আমাকে ধমক দিচ্ছিলেন। অত্যন্ত অপমানবোধে জল ছলছল চোখে উঠে বললাম ‘আমি আর প্র্যাকটিস করব না। বলেই এক দৌড়ে বের হয়ে আসলাম। জানেন, সেদিন আপনাকে আমার একটুও ভাল লাগেনি।

পরদিন এক ঠোঙা বাদাম এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলেছিলেন, ‘কালকের জন্য স্যরি। আজ প্র্যাকটিসে আসবে কিন্তু।’ সেদিন আমি শুধু এক পলকে তাকিয়ে ছিলাম আপনার দিকে। অন্য সবার কাছে আপনি যতটা সুদর্শন আমার কাছে ততটা মনে হয়নি আপনাকে। কিন্তু আপনার বাম গালে টোল পড়া সেদিনের সেই হাসিটা চিরদিনের জন্য আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল।

প্রতিদিনের প্র্যাকটিসে আমাদের দেখা হতো, কথা হতো। দিনে দিনে তা বাড়তে লাগল। আপনার কি মনে পড়ে? স্কুলমাঠে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে প্রতিবারই আমি হারতাম। কারণ, আমি হারলে আপনার মুখে হাসি ফুটতো। যতবার হারতাম ততবারই আপনার সেই এভারেস্ট জয় করা হাসিটা দেখতে পেতাম। ভীষণ ভাল্লাগতো আমার। আপনার প্রতিটা হাসিই আমার কলিজার ভেতরে ধকধক করে লাগত। ভালবাসা, প্রেম- প্রীতি এসব হাবিজাবি ব্যাপার তখন বুঝতাম না। কিন্ত জানেন, আপনার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে আপনাকে দেখলে আমার খুবই অস্বস্তি লাগত।

প্রতিদিন বিকেলের জন্য আমি অপেক্ষা করতাম। বিকেলে মাঠে আপনি খেলতে আসতেন। সঙ্গে আনতেন এক ঠোঙা বাদাম। বহুদিন পর্যন্ত সেই ঠোঙা আমি জমিয়েছি। এভাবেই কিভাবে যে সময়গুলো পার হয়ে গেল! হঠাৎই ছোট্ট শহরটা ছেড়ে চলে গেলেন আপনি। সেদিন আমি খুব কেঁদেছিলাম। জানি না কেন। বিশ্বাস করেন, এর আগে কখনও এভাবে কাঁদিনি। নিজেকে প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক করে ফেললাম। কিছুদিন স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হল। কারও সাথেই মিশতে মন চাইতো না। বাবা-মা ভয় পেয়ে গেলেন, তাদের বাড়ির ছোট্ট দস্যুটা এরকম হয়ে গেল কিভাবে!

আপনি যাওয়ার পর আমি পড়ে থাকলাম সেই ছোট্ট শহরটাতে। সেই ক্যাম্পাসে, যেখানে আপনি আড্ডা দিতেন। সেই প্যারেড গ্রাউন্ডে, যেখানে আপনি লেফট রাইট করতেন। সেই ব্যাডমিন্টন কোর্টে, যেখানে আপনার টোল পড়া হাসি দেখার জন্য আমি বারবার হারতাম।

দেখতে দেখতে আজ নয়টা বছর পেরিয়ে গেছে। ছোট্ট সেই আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি । আপনি নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডিও পেরিয়ে গেছেন অনেক আগেই। এই দীর্ঘ নয় বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। বদলায়নি শুধু একটি অভ্যাস। আপনাকে খুঁজে বেড়ানোর অভ্যাস। অনেক খুঁজেছি আপনাকে। এখনো খুঁজছি। কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি?

মাঝে মাঝে আপনাকে স্বপ্নে দেখতে পাই। এইতো সেদিনও দেখেছি। ঠিক আগের মতই আছেন। একটুও বদলান নি। আপনার সেই হাসি! আমার বারবার মনে হয়, এই হাসির দিকে তাকিয়ে একটা জনম অনায়াসে পার করে দেওয়া যায়। ইশ! যদি আরেকটাবার দেখতে পারতাম! আপনাকে কখনো বলা হয়নি, নীল পাঞ্জাবীতে আপনাকে রাজপুত্রের মত লাগে। অনেক কথা জমে আছে। বলা হয়নি।

আপনি ছিলেন....... না, আপনি এখনও আমার প্রথম প্রেম। আজীবন থাকবেনও। হারিয়ে ফেলেছি আপনাকে, হারায় নি আপনার প্রতি আমার ভালবাসা, আমার প্রেম। যেখানে যতদূরেই থাকেন না কেন, সেখান থেকেই প্রতিটা মুহূর্ত আপনাকে অনুভব করি আমি। ভালবেসেছিলাম, ভালবাসি, দূর হতে ভালবেসে যাব, চিরদিনই ....

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :