উত্তপ্ত দার্জিলিং, পালাচ্ছে পর্যটকরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ জুন ২০১৭, ২০:১৪ | প্রকাশিত : ১২ জুন ২০১৭, ২০:০৯

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্টকাল বনধের প্রথম দিনেই আজ সোমবার একাধিক সরকারি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আতঙ্কিত পর্যটকরা দলে দলে পাহাড় ছেড়ে নেমে আসছেন।খবর বিবিসির।

দার্জিলিংয়ের স্কুলগুলোতে বাংলা ভাষা পড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে এই বনধ ডেকেছে মোর্চা - যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলছে কড়া হাতে বনধ সমর্থকদের মোকাবিলা করা হবে।

বনধে এদিন দার্জিলিংয়ে ব্যাংক বা সরকারি অফিস কিছুই খোলেনি, চলেনি পর্যটকদের বড় আকর্ষণ পাহাড়ের বিখ্যাত টয় ট্রেনও।

গত সপ্তাহ থেকেই দার্জিলিংয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে যে সংঘাত চলছে - আজ মোর্চার ডাকা বনধের প্রথম দিনেই তা চরমে পৌঁছায়। মোর্চার সমর্থকরা লেবং কার্ট রোডে পূর্ত দফতরের অফিসে ও বিজনবাড়ি গ্রামের পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সোনাদায় ভাঙচুর চালানো হয় বিদ্যুৎ দফতরের অফিসেও। মোর্চার নেতা বিমল গুরুং আগেই জানিয়েছিলেন, এখন তাদের কর্মীদের ঘরে চুপচাপ বসে থাকার সময় নয়।

তার বক্তব্য ছিল, ‘যে স্বৈরতান্ত্রিক নীতি নিয়ে বাংলা তাদের সংস্কৃতিকে আমাদের নেপালি বা গোর্খা জাতিসত্ত্বার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে সেটা তো রোজ টিভিতে সবাই দেখতে পাচ্ছে। আমাদের লোকজন নীরবে সেটা আর সহ্য করবে না, তারা আন্দোলন করে জেলে যাবে - কিন্তু জাতিসত্ত্বার ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ বরদাশত করবে না।’

যেসব ইস্যুতে মোর্চা বনধ ডেকেছে তার মধ্যে একটা হল পাহাড়ের স্কুলগুলোতে বাংলা শেখানো চলবে না- যদিও রাজ্য সরকার বলছে বাংলা ভাষা শিক্ষা হবে পুরোপুরি ঐচ্ছিক।

তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, মোর্চার নিয়ন্ত্রণে থাকা গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের হিসেব-নিকেশ পরীক্ষা করানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, তা ভন্ডুল করতেই এই বনধের ডাক দিয়েছেন বিমল গুরুং।

মমতা ব্যানার্জি অবশ্য দাবি করেছেন, মোর্চার হুমকিতে ভয় পাওয়ার পাত্রী তিনি নন।

‘পাহাড়ে আমি লক্ষ কোটি বার যাব। আমি প্রতি মাসে দার্জিলিংয়ে যাই বলে অনেকের রাগ। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আগে কেউ আসত না বলে লুটেপুটে খাওয়া যেত। এখন আমি আসছি বলে হয়তো লুটেপুটে খাওয়া যাচ্ছে না। তাতেই রাগ বেড়েছে। এখন কোন নেতা কী হুমকি দিল, তাতে আমার থোড়াই কেয়ার!’

দুপক্ষের এই অনড় অবস্থানে আপাতত প্রবল সমস্যায় পড়েছেন পর্যটকরা। পাহাড়ে বেড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল করে তাদের এখন তড়িঘড়ি সমতলে ফেরার বাস বা গাড়ি জোগাড় করতে হচ্ছে।

সোমবার এই পর্যটকদের অনেকেই বলছিলেন, যেভাবে অফিস-কাছারিতে আগুন দেয়া হচ্ছে বা রাস্তাঘাটে দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে শিগগিরি দার্জিলিং থেকে বিদায় নেয়া ছাড়া তাদের সামনে কোনও রাস্তা নেই।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও জানিয়ে দিয়েছে, দার্জিলিংয়ে আসা পর্যটকদের ভালো-মন্দের কোনও দায়িত্ব তারা নেবে না।

পাহাড়ে এই আতঙ্ক আর অস্থিরতার বীজ অবশ্য নিহিত আছে দার্জিলিংয়ের জাতিগত ও প্রশাসনিক কাঠামোতেই - বিবিসিকে বলছিলেন উত্তরবঙ্গের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক এমপি দেবপ্রসাদ রায়।

‘একদিকে আবেগ, অন্য দিকে সংবিধান। একদিকে নেপালি জাতিসত্ত্বার প্রশ্ন, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে যারা তার স্বীকৃতি দাবি করছে- অন্যদিকে পশ্চিমবাংলার দৃষ্টিকোণে এই রাজ্যের অখন্ডতা বজায় রাখার প্রশ্ন। এই দুটোর মধ্যে কিছুদিন পর পর সংঘাত হতে বাধ্য।’

রায় মনে করেন, ‘দেশের সংবিধান সংশোধন করে দার্জিলিংকে যদি একটি অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের মর্যাদা দেয়া যায় ও নেপালি ভাষাভাষী সংখ্যালঘুদের হাতে তার কর্তৃত্ব দেয়া যায় তবেই সম্ভবত এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান বেরোতে পারে।’

কিন্তু আপাতত দার্জিলিং পাহাড় আরও এক দফা প্রবল অস্থিরতার দিকেই এগোচ্ছে বলে ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এসআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :