পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৫

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০১৭, ০৯:০৪ | আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭, ১২:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাঙামাটিতে ৯৮ জন, চট্টগ্রামে ৩০ এবং বান্দরবানে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চার সেনা সদস্য রয়েছেন।

সোমবার রাত থেকে ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ১৩৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

অতিবর্ষণের কারণে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের আট উপজেলায় অধর্শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। 

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং স্থানীয়রা বুধবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন। তবে যেসব এলাকায় ধসের ঘটনা ঘটেছে এর বেশ কয়েকটি দুর্গম হওয়ায় উদ্ধারকাজ পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

রাঙামাটিতেই মৃতের সংখ্যা ৯৮

আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি হিমেল চাকমা জানান, রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে চারজন সেনা সদস্যসহ ৯৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৮ শিশু ও ২০জন নারী রয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। নিখোঁজদের উদ্ধাদের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধার কাজ করছেন স্থানীয়রাও। প্রশাসন বলেছে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান ৯৮ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

রাঙামাটি শহরের সবচেয়ে বেশি পাহাড় ধস হয় ভেদেভেদি, রাঙ্গাপানি, যুব উন্নয়ন এলাকা, টিভি স্টেশন, রেডিও স্টেশন, মানিকছড়ি ত্রিমৌহনী, শিমুলতলি, রাজমনি পাড়া, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি এলাকায়। এ ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নষ্ট হয়।

উদ্ধার কাজে কর্মকর্তাসহ চার সেনার মৃত্যু

রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি এলাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ধসে পড়া মাটি সরাতে গেলে সেখানে ১০ সেনা সদস্যের উপর বড় একটি পাহাড় ধসে পড়লে ঘটনাস্থলে চারজন মারা যান। নিহতরা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, ল্যান্স করপোরাল আজিজুল এবং সিপাহী শাহিন। আহতদের হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়।

এদিকে পাহাড় ধসের ঘটনার পর রাঙামাটি শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।

চট্টগ্রামে ৩০ জনের প্রাণহানি

 

ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ৩০ জন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে। এর মধ্য রাঙ্গুনিয়েতেই নিহত হয় ২১ জন।

চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম এ হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেনও এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বান্দরবানে সাতজনের মৃত্যু

আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি মং খিং জানিয়েছে, এই পাহাড়ি জেলায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। ভারী বর্ষণে সোমবার দিবাগত রাতে জেলার কালাঘাটা, আগাপাড়া ও জাইল্লাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতদের মধ্যে আছে শহরের আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া, মিঠু বড়ুয়া, লতা বড়ুয়া ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা। জাইল্লাপাড়ায় একই পরিবারের মা কামরুন্নাহার ও মেয়ে সুফিয়া। অন্যদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/জেডএ)