বুঝতে ‘শিখে গেছে’ মেঘ
মা-বাবা যখন খুন হয়, তখন ছয় বছরের মেঘ আর কতটুকুই বা বুঝত। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে পাঁচটি বছর। ১৬ জুন ১১ বছর পূর্ণ হবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ছেলে মেঘের। নানির সংসারে বেড়ে উঠছে সে।
ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে মেঘ। পরিবারের সবাই তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টায় রত। এতে কিছুটা সফলও হচ্ছে পরিবার।
মেঘের মামা নওশের রোমন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগে যেভাবে ভেঙে পড়ত, এখন ততটা না। এখন কিছুটা স্বাভাবিক থাকে মেঘ। সবার সঙ্গে মেশে। বাসায় যতটুকু সময় থাকে সবার সঙ্গে প্রাণোচ্ছ্ল থাকে। সে হিসেবে বলা যায় আগের চেয়ে এখন অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে আছে মেঘ। এখন বুঝতে শিখেছে। নিজেই সব বোঝে। মামা হিসেবে আমার সঙ্গে অনেক বিষয় শেয়ার করে।’
ফার্মগেটে একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে মেঘ। সকালে যায় আর সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে স্কুলে। বন্ধুদের সঙ্গে ভালই সময় কাটায় শিশুটি। স্কুল শেষে দুই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরে। সার্বক্ষণিক তার খোঁজ রাখেন মামা নওশের।
কিশোর হতে চলা মেঘকে স্বাভাবিক জীবনের মধ্যে রেখেছেন স্বজনরা। কেউ তার সামনে মা-বাবা নিয়ে কিছু বলেন না, যদি পাছে আবার কষ্ট পায় কোনও কথায়। রোমন জানান, ‘ওকে আমরা শুরু থেকেই স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে গেছি। এখনও করছি। বিভিন্ন সময় ও এসব নিয়ে বলার চেষ্টা করলে আমরা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেই। কারণ তার মানসিক অবস্থা যেন স্বাভাবিক থাকে। কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব যেন তার উপর না পড়ে সেই চেষ্টা আমার নিরন্তর। সেই দিক থেকে এখন পরিস্থিতি ভালই বলতে হবে।’
পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালের এইদিনে ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টেলিভিশনে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। তাদের ৬ বছরের সন্তান মেঘ ঘটনার সময় সেই বাসাতেই ছিল। কীভাবে নানিকে ফোন করে জানালো মৃত্যু সংবাদ, কীভাবে দরজা খুলে দিল তার কোনও কথাই সে জানাতে পারেনি সে। মনের মধ্যে ক্ষত নিয়ে বড় হতে থাকা মেঘ কখনও সেদিনটা নিয়ে কাউকে প্রশ্ন করে না।
এখন কেমন আছে সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ— প্রশ্ন করতেই নওশের রোমন বলেন, ‘মেঘ এখন অনেকভাল আছে। ও ভালভাবে লেখাপড়া করছে। খেলাধুলা করে। ফার্মগেটে ইন্দিরা রোডের বাসার পাশেই সময় পেলে সে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। ঈদে, জন্মদিনে কিংবা ১১ ফেব্রুয়ারি যখন সব গণমাধ্যম সাগর-রুনির হত্যার খবর আবারও প্রচার প্রকাশ করে তখন মেঘ বাবা-মায়ের কথা কিছু জানতে চায় কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মেঘের মামা বলেন, ‘এসব নিয়ে এখন আর ও ভাবে না। ও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে।’
মামা নওশের নোমান গত পাঁচ বছর ধরেই মেঘের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। মেঘের সব আবদারও যেন তাকে ঘিরেই। বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত কিংবা মায়ের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে ঘুরতে যাওয়া মামার সাথেই।
(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/এমএম/ডব্লিউবি)
মন্তব্য করুন