আন্দোলনে আমরা সফল: আহমদ আযম

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০১৭, ১০:৪১ | আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭, ১৯:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আহমদ আযম খান। সুপ্রিম কোর্টর একজন আইনজীবী। আইন পেশার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতিতে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি। নিয়মিত সভা-সেমিনারের বাইরে টেলিভিশন টকশোতে তাকে সরব দেখা যায়। দলে তার অবস্থান বেশ জোরালো।

বিএনপির এই গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে দলের ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছে ঢাকাটাইমস। মুঠোফোনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন

রমজান মাসে রাজনৈতিক ব্যস্ততা কেমন কাটছে?

ইফতারের রাজনীতির বাইরেও অন্য সময়ের মতো ব্যস্ততা আছে। বিশেষ করে এলাকার (টাঙ্গাইল) নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় দেয়া, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করছি।

কিন্তু এই সরকারের ছোবল তো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ওপরও পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত ইফতারে হামলা করছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। এ রকম স্বৈরাচারী আচরণ তো চলতে পারে না। আসলে আওয়ামী লীগ কোনো দিনক্ষণ মানে না। রমজানের মধ্যে বিনা নোটিশে মওদুদ আহমদের মতো একজন মানুষকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দিল।

আদালতের রায়ের পর মওদুদ আহমদের বাড়ি নিজেদের দখলে নিয়েছে রাজউক।

যে রায়টা দেয়া হয়েছে, সেটা কি পূর্ণাঙ্গ বের হয়েছে? রায়ের জাজমেন্টও এখনো বের হয়নি। অথচ বিনা নোটিশে তাকে (মওদুদ) আহমদকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হলো। এবং যদি পূর্ণাঙ্গ রায় লেখাও হয়ে থাকে তাহলে কি মাত্র দুই-এক দিনের মধ্যে তা রাজউকের কাছে চলে গেল। যে মানুষটা ৩৬ বছর একটি বাড়িতে ছিলেন তাকে কি ৩৬ টি দিন, না হয় ৩৬ ঘণ্টাও সময় দেয়া উচিত ছিল না।

আর রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার তো আইনি আরো সুযোগ আছে। সেটা না থাকলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু কোনো সুযোগই দেয়া হলো না। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। রাজউক মিনিমাম শিষ্টাচার দেখাতে পারেনি।

কেন এত তাড়হুড়া করে উচ্ছেদ করা হলো- এমন  প্রশ্নও হয়তো সবার মনে আছে। হয়তো মওদুদ আহমদকে অপমান করা, কষ্ট দেয়া বা মানুষের কাছে খাটো করতে এমনটা করেছে। কিন্তু রোজার মধ্যে যে কাজটি করল, এতে উল্টো মানুষের নিন্দা পেয়েছে তারা।

বিএনপি নির্বাচন না আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে?

আমরা আন্দোলনে নেই বিষয়টি কিন্তু তেমন না। আসলে একটা সময় আন্দোলন মানেই ছিল জ্বালাও-পোড়াও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি পাল্টেছে। মানুষ এখন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের অধীনে নির্বাচন চায়। সবাই চায় এমন একটি সরকারের হাতে ক্ষমতায় থাকুক যারা সুশাসন উপহার দেবে। যেখানে থাকবে না গুম, খুন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সেই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের শেষের দিকে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু সরকার তাদের অধীনে নির্বাচন দিতে পাঁয়তারা করছে। বিএনপিসহ সারা দেশের মানুষ নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। যে কারণে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

সহায়ক সরকারের আদায়ে বিএনপির কী কৌশল হবে?

দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে নতুন ডাইমনেশন আনা হবে, না আগের মতোই হবে, সেটা বলার কিছু নেই। দেখুন, শুরু থেকে সরকার বলছে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে, আমরা বলছি আমরা সফল হয়েছি। কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবী ছাড়া সবাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছে। তার মানে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। যদি ব্যর্থ হতো তাহলে এই দাবি উঠত না। আমরা আন্দোলনে আছি, প্রত্যাশা করছি সরকার গণদাবি মেনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে। না হলে কীভাবে আন্দোলন হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।

শোনা যাচ্ছে বিএনপি প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করছে আসলে নির্বাচন নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা আছে, যদিও আগামী বছরের নভেম্বরে নির্বাচন হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে যারা সক্রিয় ছিলেন, আন্দোলনে মাঠে ছিলেন, দলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের আশা করি নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে ঢোকঢোল পিটিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরির কথা বলছে আমাদের সেভাবে বলার কিছু আছে বলে মনে করি না। তবে এসব বিষয় নীতিনির্ধারণী পর‌্যায় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে আপনি কোন আসন থেকে দাঁড়ানোর চিন্তা করছেন?

আসলে নির্বাচন করব কি করব না সেটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলাম টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে। এখনো তো নির্বাচনের অনেক সময় বাকি।

সংসদে বাজেট প্রস্তাব তোলা হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো বিএনপি এবারের বাজেট প্রত্যাখ্যান করেনি। বাজেট নিয়ে চেয়ারপারসন ও মহাসচিব কথা বলেছেন। সিপিডিসহ বেশির ভাগ শ্রেণি-পেশার মানুষ বলছে এই বাজেট গরিব মারার বাজেট। এটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। বিএনপিও একই কথা বলেছে। তার মানে এটাকে গ্রহণ করেছে বিষয়টি তেমন নয়। আর প্রত্যাখ্যানের বিভিন্ন রূপ আছে। তাই সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করলেও এই গবির মারা বাজেট কখনো দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

দলের নেতাকর্মীদের কী বলবেন?

সবার উদ্দেশে একটাই কথা থাকবে- আসুন, গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করি। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ছিল সেই স্বপ্নপূরণে কাজ করি।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।

(ঢাককাটাইমস/১৪জুন/মোআ)