গর্জে ওঠার আরেক দিন
একটু একটু করে ঘনিয়ে আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আরও একবার বাঘের গর্জনে বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়ার এ ক্ষণ। কতো দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজকের এ দিনটি অবশেষে দরজায় এসে কড়া নাড়ল বলে। এইতো সময় জবাব দেয়ার সব দাম্ভিকতার, উদাসীনতার, সব সমালোচনার। আজ আর পিছন ফিরে তাকালে কোন ফলোয়ার দেখতে পাওয়া যায়না, দেখা যায় একদল নিন্দুক যারা কখনওই কারো ভালো দেখতে পারেনা। ফলে তাদের গাত্রদাহ হয়, মিছে অহমিকায় ফেটে পড়েন, যে জিনিসটার যোগ্যই নন আসলে তারা।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এরা আয়নায় কখনও নিজেদের মুখ অবয়বটাও দেখেন না। এইটুকুন কাজটাও যদি করতেন তাহলে অন্যকে নিয়ে ফেটে পড়ার চাইতে বরং নিজের কাজটাতেই বেশী মনযোগী হতেন বোধ করি। এরা কখনও অন্ধকারের পেছনের আলোটাকে দেখতে পান না। তাই আলোর ঝলকানি এদের পছন্দ হয় না, মেনেও নিতে পারেন না। হয়তো ওখানেই তাদের ভয়, নতুন আলোকচ্ছটা এসে আমার আলোকে ম্লান করে যায় যদি।
একসময় ক্রিকেট বোদ্ধাদের মাঝে চরম উন্মাদনা ও উত্তেজনা কাজ করত ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে। বিশেষ করে এই উপমহাদেশে। তবে ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তানের সেই রঙ, বৈচিত্র্য আর জৌলুস এখন অনেকটাই ইতিহাস। তাই বলে ক্রিকেট উন্মাদনা কিন্তু কমেনি এতটুকুও, বরং তাতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ভারতের সঙ্গের চির প্রতিদ্বন্দ্বীর একটা অবস্থানে হয়তো চলে আসছে বাংলাদেশ। আর তাই যদি হয় তাহলে আগামী দিনগুলোতে ক্রিকেট মাঠেও Passion আর Fashion এর লড়াইটা স্থায়ী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ যেহেতু ক্রিকেট টা খেলে সম্পূর্ণ ভালোবাসার যায়গা থেকে সুতরাং এটা আমাদের Passion, আর ভারত খেলে অন্যদের অনুকরণে যে কোন মূল্যে জয়ের জন্যে, যাকে বলে Fashion. Passion টা স্বকীয় তাই নান্দনিকও বটে আর Fashion যেহেতু ধার করা তাতে অনেক নোংরামি থাকতেই পারে।
যে দীর্ঘ পথচলায় বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে তার পেছনে সবচেয়ে বেশী কাজ করেছে ক্রিকেটের প্রতি অনাবিল এক ভালোবাসা, ক্রিকেটকে নিজের মতো করে খেলতে পারার সাহসিকতা, লাজে রাঙা না হয়ে বরং ঝড় হয়ে ছুটে আসার অদম্য স্পৃহা। আর এ সাফল্য দেখে কেউ যখন বলে বাংলাদেশের সেমিতে উঠে আসায় টুর্নামেন্টের রঙ নষ্ট হয়েছে তখন বলতে ইচ্ছে করে যে জাতির রংটাই টকটকে আর চিরঞ্জীব তার আগমনে রঙ নষ্ট হয় না বরং তা অন্যকেও রঙ্গিন করে তোলে। বলতে ইচ্ছে করে রাঙ্গিয়ে তোমায় দেব ঠিকই আমার আপন আলোয়, পাশে তুমি নাইবা থাকো আমার যত ভালোয়।
অনেকেই কাগজে কলমে হিসেব কসে ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন আজকের ম্যাচে। তবে আমার হিসেবটা একটু ভিন্ন ধরনের। আর তাতে বাংলাদেশই এগিয়ে। ভারত যেহেতু শুধু জয়ের জন্যই খেলে আজও তারা এর পেছনেই ছুটবে মরিয়া হয়ে। আর তাতেই হতে পারে ছন্দ পতন। কিছু ভুল তারা করে বসবেই। এছাড়া আগে থেকেই তারা বাংলাদেশকে হালকা ভাবে নিয়ে সহজ জয়ের একটা ছক কসে রেখেছে। এখানেই হতে পারে আসল বিপত্তি টা। পা পিছলে পড়ার সম্ভাবনায় চাপে থাকবে তারাই। আর বাংলাদেশ এর আগে বহুবার প্রমাণ করেছে যে ভালোবাসার জায়গাটা যখন নিজের সেরাটাকে স্পর্শ করে ফেলে তখন আর কোন বাধাই বাধা মনে হয়না। বাংলাদেশ খেলবে জাতির জন্য জয়ের জন্য নয় আর এটাই এগিয়ে রাখবে তাদের।
বাংলাদেশের সবগুলো সেরা ব্যাটসম্যানই এখন ভালো ফর্মে আছে। চার পেসার আর দুই স্পিনারের সমন্বয়ে বোলিংটাও বলার মতোই। তামিম যদি ধারাবাহিক হয়ে নিজের খেলাটা আজো খেলতে পারে তাহলে শুরুতেই আমরা একটা ভালো বার্তা হয়তো পেয়ে যাবো। এরপর অন্যরাও নির্ভার হয়েই নিজেদের কাজটা করতে পারবে। তামিমের পর সবার দৃষ্টি থাকবে মুশিফক, সাকিব এবং মি. ডিপেন্ডেন্ট মাহমুদুল্লাহর দিকে। এদের নিয়ে আসলে নতুন করে কিছু বলার নেই। বড় ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দেয়ার ভঙ্গিমাটা এদের ভালোই জানা আছে। আর সাব্বির যদি ফিনিশার হিসেবে খেলে তাহলে শেষ দিকটায় একটু চাপ কম থাকবে। অবশ্য যদি চারজন পেসার নিয়ে নামতে হয় তাহলে সাব্বিরকে হয়তো তিন নাম্বার পজিশনেই খেলতে হবে। সেক্ষেত্রে মোসাদ্দেককে একটু বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। বোলিংয়ে মোস্তাফিজের দিকে সবার নজরটা বেশী থাকবে। সে অবশ্য এসব ব্যাটসম্যানদের কিভাবে চাপে রাখতে হয় তা ভালোই জানে। আইপিএলে এদের সে বেশ নাস্তানাবুদ করেই ছেড়েছে। ঐ অভিজ্ঞতাটা বেশ কাজে দিবে। আর মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন নিজেদের দিনে কতটা ভয়াবহ সেটা সবারই জানা। সাকিবকে আজ ভিন্ন স্টাইলে কিছু একটা করে দেখাতে হবে। সব ঠিক থাকলে জয়টা কঠিন কিছু নয়।
লেখক: ব্যাংকার
মন্তব্য করুন