বিদ্যুৎ, গ্যাসে ভ্যাট কেন, প্রশ্ন বাদশার

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৭, ১৪:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইম

নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করে গ্যাস ও বিদ্যুতের ওপর কেন তা রেখে দেয়া হয়েছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি মনে করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন বাদশা।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ নির্দিষ্ট করেছেন্। তবে নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের কথা বলেছেন তিনি। যদিও বিদ্যুৎ খাত ও এলপি গ্যাস খাত এই তালিকায় নেই। 

রাজশাহীর সংসদ সদস্য বাদশা বলেন, ‘আমি যে শহর থেকে নির্বাচিত। সেখানকার পানের দোকানদারও একজন অর্থনীতিবিদ। সে ম্যাক্রো ইকোনমিকস বোঝে না, মাইক্রো ইকোনোমিস বোজে। পানের দোকানদারও বোঝে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ওপর ভ্যাট রেখে দিলে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, শিল্পজাত উৎপাদনের কী হবে, সেটা তারা বোঝে। সেটা যে আবার আমাদের ঘাড়েই এসে পড়বে, সাধারণ মানুষের ঘাড়েই পড়বে। সুতরাং সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। এটা আমাদের বোঝা দরকার।’

‘মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বলবো, তিনি অর্থনীতিবিদ হতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নিজের জায়গা থেকে সবাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনীতিবিদ। সবাই তার বাস্তব অবস্থা বোঝে’-বলেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা।  

লাখ টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা করার সমালোচনা করেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না পৃথিবীতে কোথাও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি ট্যাক্স আছে কি না। আবগারি ট্যাক্স এই দেশে এনেছিল ব্রিটিশরা। অন্যায় করলে যে কর দিতে হয়, সেটাকে বলা হয় আবগারি ট্যাক্স। যেমন, মদ-টদ এইগুলোর ওপর আবগারি আছে। একজন গরিব মানুষ যদি এক লাখ টাকা সষ্ণয় করে, সেটা কী অপরাধ হয় যে সেটার ওপর আবগারি ট্যাক্স দিতে হবে?’

সুদের হার কমে যাওয়ায় আবগারি শুল্ক মানুষের জন্য বোঝা হয়ে যাবে বলেও মনে করেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা। তিনি বলেন, ‘এখন এক লাখ টাকা ব্যাংকে রাখলে এক বছর পর একজন এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা পাবে। আর সাড়ে পাঁচ পার্সেন্ট যদি মুদ্রাস্ফীতি হয়, তাহলে আসল টাকা দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। আর ব্যাংকের লোকরা যে সার্ভিস চার্জ কাটে, তাহলে হয় ৯৯ হাজার টাকা। এরপর অর্থমন্ত্রী যদি ৮০০ টাকা নেন তাহলে ৯৮ হাজার ২০০ টাকা দাঁড়ায়।’

ব্যাংক হিসাবের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার ছাড়াও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানান ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি শুল্কের ট্যাক্সের বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। নির্বাচনের আগে যদি বাজেট নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তাহলে আমরা যারা আছি, আমাদের ওপরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।’

অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান বাদশা। তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে কত টাকা পাচার হয়ে বিদেশ চলে গেছে। আমাদের কাছে যে হিসাব পাওয়া যায় তা হচ্ছে সাত হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার। আমাদের অর্থমন্ত্রী ওখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, প্রতি বছর যে অর্থ পাচার হচ্ছে তা এক বছরের বাজেটের সমান। তাহলে এক বছরের বাজেট পাচার হয়ে যাবে আর এক বছরের বাজেট দিয়ে আমরা উন্নয়ন করবো? এই পদ্ধতি দিয়ে উন্নয়নের সড়কে উঠা যাবে না।’

‘যারা পাচার করছেন, তাদের কী পরিচয়? তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিচয় কী, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে হবে। যতদিন আমরা এটা না করতে পারবো, অর্থপাচার বন্ধ না করতে পারবো, উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেও আমাদের লাভ হবে না। পৃথিবীর অনেক দেশে এমন উদাহরণও আছে যেখানে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও নিচের দিকে নেমে গেছে’-অর্থমন্ত্রীকে সতর্ক করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য।

‘আমাদের দেশে ৬০ শতাংশ টাকা কালোটাকায় পরিণত হয়েছে’-মন্তব্য করে বাদশা বলেন, ‘এই টাকার কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। এই টাকা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছে। এগুলো খুঁজে বের করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৫জুন/ডব্লিউবি/জেবি)