বাংলাদেশ-ভারত যেই জিতুক, বন্ধুত্ব যেন না পরাজিত হয়

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৭, ১৫:৩৯

শেখ আদনান ফাহাদ

আমার ছাত্র আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘চূড়ান্ত হিসেবে ভারত কি বাংলাদেশের বন্ধু?’। এমন প্রশ্নের উত্তর কি এক কথায় দেয়া যায়? আমি কিছু বলিনি। ভারত আমাদের বন্ধু না শত্রু, সে বিতর্কে না গিয়ে আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশ  ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত। বন্ধুত্বের সম্পর্কে সম্মানবোধ থাকতে হয়। দাদাগিরি বা দিয়ে বন্ধুত্ব হয় না।

২০১৩ সালে বউ নিয়ে ভারত গেলাম। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিশ্বের অনেক দেশে গিয়েছি। সরকারি সেসব সফরে জনগণের টাকায় বড় বড় হোটেলে থাকার, বিশ্বের বড় বড় নেতাদের কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য নিশ্চয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে, শেখ হাসিনার মিডিয়া টিমে কাজ করার সুযোগ পাওয়া। সাংবাদিকতা ছেড়ে শিক্ষকতার নতুন পেশায় এসে বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে গেলাম ভারত।

মানুষ হানিমুনে যায় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা সুইজারল্যান্ড। আমি গেলাম আগরতলা। ভারতে আগরতলা হল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা, আমি বলি আমার ঘাঁটি। আগরতলায় সবাই আমাদের ভালোবেসেছে। বিশেষ করে আমার গ্রাম কালীকচ্ছের বড় ভাই, বর্তমানে ত্রিপুরার ডেপুটি স্পিকার বাবু পবিত্র কর আমাকে পিতৃস্নেহে আগলে রেখেছেন। গ্রামের বড় ভাই, কাকুদের সাথে দেখা হয়েছে। আবেগে কেঁদে ফেলেছি। আগরতলা থেকে ভুপেন হাজারিকার গৌহাটি গেলাম। সেখানে ত্রিপুরা ভবনে একরাত থেকে গেলাম স্বর্গসম শিলং এ। সর্বদা, সর্বময় একটা ভালো লাগার অনুভূতি।

কলকাতায় গিয়ে হল অন্য অভিজ্ঞতা। আমাদের একসময়ের রাজধানী। কত ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই শহরের সাথে। কলকাতায় গ্রামের আরেক বড় ভাই সন্তোষ সেন নিতে আসলেন এয়ারপোর্টে। বললেন, ‘তোরা কেন হোটেলে উঠবি? আমার বাড়িতে থাকবি’। আমি ভাবলাম, এত করে বলছে, থেকে যাই। সন্তোষ দা আমাদের গ্রামের। পেশায় চিকিৎসক এই ভাইজান বিয়ে করেছেন পশ্চিমবঙ্গীয় এক নারীকে। সন্তোষ দা যেভাবে কথা বলেন, উনার স্ত্রী, শাশুড়ি এবং সন্তানেরা এভাবে বলেন না।

এয়ারপোর্টে নামতে নামতেই বিকেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। সন্তোষ দার বাড়ি নিউ সল্টলেকে। নতুন আবাসিক এলাকা। রাতে খেয়ে সন্তোষ দার স্ত্রী, শাশুড়ির সাথে কথা বললাম। উনাদের আগ্রহ খুব কম। অন্যদিকে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। আমরা সন্তোষ দার স্ত্রীকে, শাশুড়িকে বললাম আমাদের গ্রাম কালীকচ্ছে বেড়াতে আসতে। বললাম, বিমানে ৪০/৫০ মিনিটে ঢাকায় চলে আসবেন। আমরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি দিয়ে আর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে গ্রামে পৌঁছে যাব।

উনাদের আগ্রহ দেখলাম না খুব একটা। রাতে ঘুমিয়ে সকালে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখি, আশেপাশে অনেক দূরে দূরে একেকটা বাড়ি। কোনটার কাজ শেষ, কোনটার চলছে। এমন জায়গা আমার মোটেও পছন্দ না। ফোন করলাম বাবু পবিত্র করকে। বললাম, দাদা এখানে আমার ভালো লাগে না, আপনি সন্তোষ দাকে বলেন যে, আমরা চলে যাব। দাদা ফোন করে সন্তোষ দাকে বলে দিলেন। আর আমাকে বললেন, ‘ত্রিপুরা ভবনে যাও, আমি বলে দিচ্ছি।’

আমরা ত্রিপুরা ভবনে চলে গেলাম। সন্তোষ দা পরের দিন আসলেন ত্রিপুরা ভবনে। আমি বললাম, ‘আজ যাব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কফি হাউস ইত্যাদি দেখতে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মেট্রো দিয়ে যাব নাকি ট্যাক্সি?’ দাদা বললেন, মেট্রো দিয়ে যাবেন। 

জীবনে বহুবার এমন পাতাল রেলে উঠেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জাপান, চীন, সাউথ কোরিয়াসহ সব উন্নত দেশেই এমন পাতাল রেলের ব্যবস্থা আছে। জাপানে তো একবার বুলেট ট্রেনে উঠলাম। ১২০০ কিলোমিটার রাস্তা পার হলাম মাত্র চার ঘণ্টায়। সবগুলো দেশের ছবি আছে আমার। মাটির নিচে, ট্রেনের ভেতরে, বাইরে, ভেতরে বসা অবস্থায়, দণ্ডায়মান, নানা কায়দায় ছবি তোলা আছে।

নতুন বউ নিয়ে এসেছি বিদেশ সফরে, তাও আবার আমাদেরই একসময়ের রাজধানী কলকাতায়। তাই ক্যামেরা বের করলাম। তখনো ট্রেন আসেনি। ক্যামেরা বের করতেই দৌঁড়ে আসল এক লোক। প্রথমেই এক টানে ক্যামেরা নিয়ে নিলেন। ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে গেলেন তার অফিসে। খুব কর্কশ ভাষায় কথা বলছিলেন তিনি। লজ্জায় পড়ে গেলাম। যাওয়ার আগে বউকে কত কথা বলেছি! নচিকেতার গান শুনিয়েছি! ইতিহাসের গল্প শুনিয়েছি। শুধু বলেছিলাম, এমন করে কথা বলছেন কেন?

যে উত্তর দিলেন সেই কলকাতাবাসী, তাতে আতঙ্ক ভর করল মনে। একা থাকলে আমি জেলে জেতেও প্রস্তুত ছিলাম। সাথে আমার বউ, জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। সেই লোক আমাকে বললেন, জঙ্গি বানিয়ে পুলিশে দিয়ে দেবেন!

সাথে থাকা সন্তোষ সেনও কিছু বলতে পারলেন না। হয়ত বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া বলে আত্মবিশ্বাস কম, অথচ কম করে হলেও ৩০ বছর ধরে কলকাতায় বসবাস করছেন ইনারা। আমার বউ, আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। আমাদেরকে নাকি ক্যামেরা বের করার অপরাধে জঙ্গি বানিয়ে পুলিশে দেবে! খুব মন খারাপ করে ‘সরি’ বলে কোনমতে বের হয়ে আসতে পারলাম।

কলকাতায় পাতাল রেলে যে ছবি তোলা যায় না, সেটা আমি জানতাম না। হয়ত নতুন নতুন আসছে বলে, কলকাতায় মেট্রো রেল নিয়ে বাড়াবাড়ি আছে। বিশ্বের ২০/২৫টা উন্নত শহরে আমি গিয়েছি। ওসব শহরে ছবি তোলা যায়। পরের দিন দেখা করতে আসলেন প্রশান্ত দাদা। আমাদের বর্ধন বাড়ির ছেলে। আমার বড় ভাই, মুরুব্বি। দাদা এসে এত ভালোবাসা দিলেন তাতে রেলকর্মকর্তার সেই জঙ্গি আচরণের কষ্ট ভুলে গেলাম। প্রশান্ত দাদা এমনিতে খুব ব্যস্ত মানুষ। মুম্বাই থাকেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা। আমার কপালগুণে সে সময় কলকাতায় ছিলেন।  দাদার আচরণ দেখে আগরতলার কথা মনে পড়ল। কম সময়ের মধ্যে কলকাতার অনেক কিছু খাওয়ালেন, ইডেন গার্ডেন, ভিক্টোরিয়া পার্ক ইত্যাদি ঘুরে দেখালেন।         

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মনে হয় আমার সেই ভারত সফরের মতই, অম্ল-মধুর। কেউ ভালোবেসেছে, কেউ জঙ্গি বানিয়ে পুলিশে দেবার হুমকি দিয়েছে। ভারত কি আমাদের শতভাগ বন্ধু? শতভাগ শত্রু? দুটোর উত্তরই ‘না’। জগতে কেউ কারো শতভাগ, নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ বন্ধু হতে পারে না। আমি এবং অনেকেই মনে করি যে, ভারত ও বাংলাদেশ বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক মানুষ সেটা মনে করেন না। মনে করলে আমাকে জঙ্গি বানিয়ে পুলিশে দেয়ার হুমকি দিতেন না কলকাতার সেই লোক। ক্রিকেট খেলা নিয়ে, সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তা নিয়ে দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ বাজে সব তর্কে জড়াতেন না। তবে সবাই একরকম নয়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, অরণিভাস দত্ত নামের বদনকিতাবে আমার ভারতীয় বন্ধু পোস্ট দিয়েছেন- ‘আমি চাই ভারত-বাংলাদেশের খেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, কিন্তু ভারত জিতবে’। একজন ভারতীয় হিসেবে, তদুপরি ভারতীয় বন্ধু হিসেবে আমার বিবেচনায় তার এই বক্তব্য খুব যৌক্তিক। বাংলাদেশকে বন্ধু মনে করেন বলে তিনি চাইছেন ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশই ভালো খেলুক, কিন্তু ভারত তার নিজের দেশ বলে তিনি স্বদেশের বিজয় কামনা করছেন।

আমি কমেন্ট করলাম, আমি চাই খেলা হবে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, কিন্তু জিতবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তাপস নামের একজন মন্তব্য করলেন, বাংলাদেশীদের পিটিয়ে ছাতু বানানো হোক। অরণিভাস দত্ত জবাব দিলেন, ‘বাংলাদেশে ১৫ কোটি বাঙালি, আপনি তাদেরকে পেটাতে বলেন?’ আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অরণিভাস সাহেব সেই তাপসকে কয়েকটা ধমক দিয়ে ব্লক করে দিলেন।

তবে সবাই অরণিভাস দত্ত না। দিনকয়েক আগে নানা বিষয়ে ভারতের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে একটা পোস্ট দেয়াতে এক দাদা খুব ক্ষেপে বললেন, ‘দোষ সব ইন্দিরা গান্ধীর, বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে যত ঝামেলা বাঁধিয়েছেন! জগমোহন ডালমিয়াকেও তিনি একটু ঝাড়লেন, বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার মর্যাদা ‘পাইয়ে’ দিয়েছেন বলে! এই কথা পড়ে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ভারতের অনেকেই, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলে-মেয়ে মনে করে ভারত আমাদেরকে স্বাধীনতা ‘ভিক্ষে’ হিসেবে দিয়েছে! তাই আমাদের নদীর পানি, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ন্যায্য কথা বলতে গেলে ওনারা ৭১ সালের কথা নিয়ে আসেন।

ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছে, তাদের হাজারেরও বেশি সৈন্য এখানে প্রাণ দিয়েছে। আমরা ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব আজীবন। কিন্তু কৃতজ্ঞতা আর দাসত্ব এক জিনিস না। ভারত আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে, কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে । অস্ত্র, প্রশিক্ষণ দিয়েছে, এগুলো সব ঠিক। কিন্তু আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ, আমাদের হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, লাখ লাখ মা-বোনের উপর চালানো নির্যাতন, ধ্বংস হওয়া লাখ লাখ ঘরবাড়ি, শত শত সেতু, হাজার হাজার কিলোমিটার লম্বা রাস্তাঘাটসহ বিশাল ক্ষয়ক্ষতির দাম নেই?

পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই যেসব পূর্বপুরুষগণ বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপনে কাজ শুরু করেছিলেন তাদের মূল্য নেই। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বের স্বীকৃতি দেবেন না? তাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বের মূল্য দেবেন না? আমরা যদি বলি, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা  করার পাশাপাশি ভারতকেও পাকিস্তানের একটা অংশ থেকে নিরাপদ রেখেছে বাংলাদেশের বীর জনতা, তখন কি ভুল বলা হবে? দুইপাশে আজ যদি পাকিস্তান থাকত তাহলে, ভারতের কী অবস্থা হত? এক কাশ্মির সামাল দিতেই ভারত নাকানিচুবানি খাচ্ছে।

বাংলাদেশ যতটুকু পারছে ভারতকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে । সীমান্তে  বিচ্ছিন্নতাবাদী  গোষ্ঠীগুলোকে প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে বাংলাদেশ। ‘সাত বোনের’ সংসার শান্ত রাখতে বাংলাদেশ দারুণ কাজ করে দিচ্ছে ভারতের হয়ে। দুষ্ট প্রতিবেশি ছোট হলেও বড় প্রতিবেশীর ঘুম হারাম হতে পারে, এ কথা ভারতকে বুঝতে হবে। ভারতের হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশে কাজ করে জীবিকা অর্জন করে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির এক রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশ হল ভারতের তৃতীয় বড় রেমিটেন্স সোর্স। বাংলাদেশের ট্রানজিট হতে পারে ভারতের ‘সাত বোনের’ উন্নয়নের সঠিক চাবিকাঠি।

বাংলাদেশের একটা অংশের মানুষের মনে প্রশ্ন হল, এভাবে একতরফা ভাবে দিয়ে গেলে কি তাকে বন্ধুত্ব বলা যায়? আমাদের প্রধানমন্ত্রী কয়েকমাস আগে ভারত গেলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে বিমানবন্দরে এসে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর গোঁয়ার্তুমির জন্য নাকি তিস্তার পানি দিতে পারেননি। অথচ ভারতের সংবিধানে লেখা আছে, বিদেশের সাথে কোন চুক্তি করতে হলে  রাজ্য সরকারের সম্মতি নেয়া ফরজ না।

আমাদের সন্দেহ, সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকারও চায় না বাংলাদেশ তিস্তার ন্যায্য পানি প্রাপ্ত হোক। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে মানুষের ভেতরে হিন্দুত্ববাদের শক্তিতে প্রবেশ করতে চায় বিজেপি, তাই ঘাটাতে চায়না তারা মমতা ও তার দলকে।

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যাও একটা বড় ইস্যু। এত মানুষ পাকিস্তানের সীমান্তেও নিহত হয় না ভারতের হাতে। বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে শুল্ক ও নানা কৌশলগত বাধা, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি, বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ভারতে প্রদর্শিত হতে না দেয়ার কৌশল সব মিলে ভারত বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। ছিটমহল বিনিময় করতে দীর্ঘ সময় পার করেছে ভারত। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় ছিটমহল বিনিময় হল এই সেদিন। এ সমস্ত ক্ষোভকে আমলে নিচ্ছে কি ভারত?

‘পাকিস্তানের সাথে শত্রুতার প্রতিযোগিতা, আর ভারতের সাথে বন্ধুত্বের প্রতিযোগিতা। দুই প্রতিযোগিতাতেই বাংলাদেশ জিতবে ইনশাল্লাহ’ শীর্ষক একটি পোস্ট দিয়েছিলাম, ক্রিকেট ম্যাচকে কেন্দ্র করে। অনেক লাইক পড়েছে। কিন্তু লাইক দিয়ে তো আর মানুষের আসল মনোভাব বোঝা যায় না। মন্তব্যকারীরা পাকিস্তানকে শত্রু মেনে নিয়েছে, ভারতকেও বন্ধু হিসেবে মানতে নারাজ। এদেশের কিছু লোক আবার ভারত-বাংলাদেশ খেলায়ও ভারতের সাপোর্ট করেন। কিছু লোক পাকিস্তান-বাংলাদেশ খেলায় পাকিস্তানের সাপোর্ট করেন বলেও অভিযোগ আছে। এরা সংখ্যায় কম, কিন্ত এরা এদেশে দৃষ্টিকটু।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে বললে আমরা নির্দ্বিধায় ভারতকে বেছে নিতে চাই। পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি থাকার বা রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু ভারত যেন আমাদের সাথে ন্যায্য আচরণ করে। ১৯৭১ এ পাশে ছিলেন, তাহলে পরে কেন থাকবেন না? আমরা যেন নতুন প্রজন্মের কাছে সবসময় বলতে পারি, ভারত আমাদের প্রকৃত বন্ধুরাষ্ট্র।

লেখকঃ শিক্ষক, সাংবাদিক