বছরে তিন আহ্বায়ক কমিটিতেও সম্মেলনহীন চাঁদপুর জাপা

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৭, ১২:২৪

শওকত আলী, চাঁদপুর

আগামী নির্বাচন ঘিরে দল গোছানো দূরের কথা অন্তঃকোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টি (জাপা)। গ্রুপিং, মতের অমিল ও অনৈক্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে গত এক বছরে তিনবার আহ্বায়ক কমিটি দিয়েও জেলা সম্মেলন করতে পারেনি সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি।

দলটির অভ্যন্তরে সৃষ্ট হ-য-ব-র-ল অবস্থায় হতাশ ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে স্থানীয় বেশির ভাগ নেতাকর্মী। তাদের বেশির ভাগের অভিযোগ বর্তমান আহ্বায়ক মিজানুর রহমান খানের প্রতি, যিনি গত ১৫ বছর ধরে চাঁদপুর জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

চাঁদপুর জাপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০০২ সালে মাহাবুব পাটওয়ারীকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি করা হয়। ২০০৫ সালে সভাপতি মাহাবুব পাটওয়ারী মারা যাওয়ায় সিনিয়র সহসভাপতি নূরুল হক বাচ্চু মিয়াজী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ২০০৯ সালে সভাপতি নূরুল হক বাচ্চু মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান নির্বাচিত হন। গঠিত হওয়ার পর দীর্ঘ সাত বছরেও এ কমিটি একটি মিটিং করতে পারেনি। সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ঢাকায় বসবাসের কারণে এভাবে দলের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে বলে জানান কমিটির কয়েকজন সদস্য।  

তিন বছরের কমিটি সাত বছরেও সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তা বিলুপ্ত করে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজীকে আহ্বায়ক করে ৬৯ সদস্যের কমিটি করে দেয় কেন্দ্র। এর সদস্যসচিব পদে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। মাস খানেক পর এই কমিটি ভেঙে দিয়ে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সহসভাপতি আবদুল মান্নান শেখকে প্রধান করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এর সদস্যসচিব হন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। এ কমিটি বহাল থাকে এক বছর দুই মাস। গত ২৭ মে মিজানুর রহমান খানকে প্রধান করে ৫৯ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা, যার সদস্যসচিব করা হয় শওকত আখন্দ আলমগীরকে।

তবে এ কমিটিকে সানন্দে গ্রহণ করতে পারেনি দলের তৃণমূল কর্মীরা। বিশেষ করে মিজানুর রহমান খানকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করছেন অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। তাদের অভিযোগ, তিনি বছরে ১০ দিনও চাঁদপুরে অবস্থান করেন না। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এমরান হোসেন মিয়া নিজ নিজ পক্ষ তৈরি করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মী জানান, ‘আমরা এখন মুরব্বিহীন হয়ে পড়েছি। ঢাকায় অবস্থানরত দুই নেতার ব্যক্তিস্বার্থের কারণে তাদের কৃতজ্ঞতার সাথে বিদায় জানানো সম্ভব হয়নি।’

চাঁদপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহসীন খান জানান, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় আমার প্রিয় দলটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।’

জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায় আবদুল মান্নান শেখ জানান, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে কাজ করতে পারি না। তাই অব্যাহতি নিয়েছি। দলের খোঁজ-খবর নেয়াও সম্ভব হয় না।’

চাঁদপুর জেলা জাপার প্রবীণ নেতা ও সাবেক সভাপতি নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও অসুস্থতার কারণে তিনি কথা বলতে পারেননি।

এমরানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘ওর সঙ্গে আমার লেভেল মিলে না। সেহেতু ওর সাথে আমার দ্বন্দ্ব হওয়ার প্রশ্নই আসে না।’

চাঁদপুর জাতীয় পার্টির কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কাউকে দায়িত্ব দিলে কেউ যদি কাজ না করে তাহলে আমাদের কী করার আছে? তাহলে তো বিকল্প চিন্তা করতেই হবে।’ ঈদের পরে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে মিটিং করে দ্রুত সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান খানের বক্তব্য জানার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুন/মোআ)