মাটির বাড়ির শোভা গফরগাঁওয়ে

আজহারুল হক, গফরগাঁও প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ১৬ জুন ২০১৭, ১৪:২২| আপডেট : ১৬ জুন ২০১৭, ১৪:৩১
অ- অ+

বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়ি-ঘর হারিয়ে যেতে বসলেও গফরগাঁওয়ে এখনো চোখে পড়ে গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী হাজার হাজার মাটির ঘর। উপজেলার টাঙ্গাব ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের প্রায় বাড়িতে মাটির ঘর রয়েছে। ইটের তৈরি দালান দেখা মিললেও মাটির ঘরের তুলনায় খুবই নগন্য। এখানকার গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর গরীবের ‘এসি’বাড়ি হিসেবে খ্যাত। তবে উপজেলার একটি পৌরসভাসহ বাকি ১৪টি ইউনিয়নে মাটির তৈরি বাড়ি তেমন একটা চোখে পড়ে না।

মাটির বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে টাঙ্গাব ইউনিয়নের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেছেন। এখানকার বাসিন্দারা মাটির ঘরে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

এক সময় মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল এদেশের গ্রাম-গঞ্জে। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি ঐতিহ্যর প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা মজবুত বাড়ি তৈরি করতেন। যা এখনো কিছু কিছু এলাকায় চোখে পড়ে। গফরগাঁওয়ের টাঙ্গাব ইউনিয়নের সব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে একতলা ও দোতলা মাটির ঘর রয়েছে। ইউনিয়নটির সব বাড়িতেই সারিবদ্ধ মাটির ঘর দেখা মেলে।

এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিণত করে তিন থেকে চার ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। একতলা মাটির বাড়ির জন্য ১২ থেকে ১৪ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ-বাঁশ অথবা লোহার এঙ্গেল দিয়ে সিলিং তৈরি করে তার উপর টিনের ছাউনি দেয়া হয়। আর দোতলা বাড়ির জন্য ১৩ থেকে অন্তত ২৫ ফুট উচু দেয়াল তৈরি করে ১৩ ফুটের মাঝে তালের গাছের ফালি দিয়ে পাটাতন তৈরি করে দুই থেকে তিন ইঞ্জি মোটা কাঠের ছাউনি দেয়া হয় আর ২৫ফুটের মাথায় একতলা বাড়ির ন্যায় টিনের ছাউনি দেয়া হয়।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভূমিকম্পে মাটির ঘরের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। একেকটি মাটির ঘর এক থেকে দেড়শ বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর কালের পরিক্রমায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব মাটির বাড়ি ইট বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে।

টাঙ্গাব ইউনিয়নের পাঁচাহার গ্রামের বাসিন্দা, আবুল কাশেম খান, কালাম খান, জালাল উদ্দিন খান, বজলুর রহমানসহ আরো অনেকে জানান, তারা প্রত্যকেই পৈত্রিক সূত্রে মাটির তৈরি বাড়ি পাওয়ার পরেও নতুন করে একটি একতলা ও একটি দোতলা মাটির ঘর তৈরি করেছেন। তাদের পূর্ব পুরুষরা মাটির তৈরি বাড়িতে জীবন কাটিয়ে গেছেন। মাটির তৈরি বাড়ি বসবাসের জন্য বেশ আরামদায়ক। তারা জানান, এ ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতেই দোতলা ঘরের পাশাপাশি প্রত্যেকেরই একটি করে একতলা মাটির ঘর রয়েছে। কেউ কেউ দোতলায় বসবাস করেন আবার কেউবা দোতলায় ধান সংরক্ষণ করেন। এছাড়াও আরেকটি কারণে এ এলাকায় মাটির দোতলা ঘর তৈরি করা হতো। এর কারণ হলো এ ইউনিয়নে এক সময় খুব বেশি ডাকাতি হতো বলে বিত্তশালীরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মাটির তৈরি দোতলা ঘর তৈরি করে দ্বিতীয় তলায় তারা বসবাস করতেন।

টাঙ্গাব ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন সাগর জানান, ইউনিয়নটির ১৩টি গ্রামের সব বাড়িতেই মাটির তৈরি একতলা ও দোতলা ঘর রয়েছে। সম্প্রতি যেসব বাড়িতে ইটের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেসব বাড়িতেও একাধিক মাটির ঘর রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুন/জেডএ)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বন্ধুদের নিয়ে কারখানায় জুয়া খেলছিল কর্মচারী, বাধা দেওয়ায় মালিককে খুন
বিএনপির তিন সংগঠনের লংমার্চের সমাপনী সমাবেশ সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাসীদের সুখবর দিলেন আসিফ নজরুল
মানিকগঞ্জে কৃষকদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা