ছয় বছর ধরে পুলিশের ‘দখলে’ টঙ্গী অডিটোরিয়াম

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৭, ০৮:৪৩ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭, ১০:২০

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী (গাজীপুর) থেকে

অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য দেয়া হলেও প্রায় ছয় বছর ধরে টঙ্গী অডিটরিয়ামটি ক্যাম্প বানিয়ে ‘দখল’ করে রেখেছে শিল্প পুলিশ। আর তাতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা নেতিবাচক পরিস্থিতির। এখানকার পুলিশ সদস্যদের দ্বারা টঙ্গী সরকারি কলেজের ছাত্রীরা উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।

টঙ্গী সরকারি কলেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার একমাত্র স্থান টঙ্গী অডিটোরিয়াম থেকে শিল্প পুলিশের ক্যাম্প সরিয়ে সেটি খালি করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে বিভিন্ন মহল।

শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত টঙ্গী এলাকার শিল্প-কলকারখানার নিরাপত্তার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে টঙ্গী অডিটোরিয়ামে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য অনুমতি দিয়েছিল তৎকালীন টঙ্গী পৌরসভা।

জানা গেছে, আশির দশকে নির্মিত অডিটরিয়ামটি সবার কাছে টঙ্গী পৌর অডিটোরিয়াম হিসেবে পরিচিত। একসময় টঙ্গীর সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিলনমেলা বসত এই অডিটোরিয়ামে। স্থাপিত হওয়ার প্রথম দিকে এর সব আয়-ব্যয়ের সমান ভাগ ছিল টঙ্গী কলেজ ও পৌরসভার। তখন অডিটোরিয়ামের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত টঙ্গী পৌরসভা। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দায়িত্ব ছিল টঙ্গী সরকারি কলেজের।

বছর ছয়েক আগে তৎকালীন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমত উল্লাহ খান অস্থায়ী ভিত্তিতে শিল্প পুলিশকে থাকার জন্য অডিটোরিয়ামটি দেন। এরপর থেকে এখানে সব ধরনের সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ। এর প্রতিবাদে টঙ্গী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিবাদ, মানববন্ধন করে। বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেয়। কিন্তু এত সব আন্দোলনেও অডিটোরিয়ামটি থেকে সরানো হয়নি পুলিশ ক্যাম্প।

সম্প্রতি ফুটপাতের দোকানে চাঁদাবাজি, কলেজ ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মঞ্জুরকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, পুলিশ সদস্যরা গোসল করতে গিয়ে কলেজের ছাত্রীদের দিকে পানি ছিঁটানোসহ বিভিন্ন অশালীন কথা বলে উত্ত্যক্ত করেন তাদের। ইতোমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ কয়েকবার বিষয়টি শিল্প পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ১৯-২০ হাজার শিক্ষার্থীর সাংস্কৃতিক ও মননশীল কাজের জন্য অডিটোরিয়ামটি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।  অডিটোরিয়াম থেকে শিল্প পুলিশের ক্যাম্পটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুতই ক্যাম্পটি সেখান থেকে সরিয়ে নেবে।’

টঙ্গীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র ভরসা ছিল টঙ্গী অডিটোরিয়ামটি। এর ভেতরে টঙ্গীর একমাত্র পাঠাগারটি সরব থাকত পাঠকদের আগমনে। এসব কথা জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট টঙ্গী শাখার সভাপতি শেকানুল ইসলাম শাহী বলেন,  কিন্তু বর্তমানে সেখানে শিল্প পুলিশের ক্যাম্প থাকায় পাঠাগার ও অডিটোরিয়াম দুটোই নিষ্প্রাণ পড়ে রয়েছে। আর বঞ্চিত হচ্ছে টঙ্গীর শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সব মহলের মানুষ।

জানা যায়, আদমজীর সঙ্গে অডিটোরিয়ামের জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তৎকালীন পৌরসভার (বর্তমান সিটি করপোরেশন) মামলা ছিল। কিছুদিন আগে ওই মামলায় আদালত সিটি করপোরেশনের পক্ষে রায় দেয়।

শেকানুল ইসলাম শাহী বলেন, ‘আমরা চাই জনগণের সম্পত্তি জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। অডিটোরিয়াম থেকে পুলিশ ক্যাম্প অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পুরনো জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন করে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হোক।’

টঙ্গী অডিটরিয়ামের টানাপোড়েন শিগগিরই শেষ হবে বলে আশা করছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান খান কিরন। অডিটোরিয়ামটি ভেঙে একটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স করার কথাও জানান তিনি।

ঢাকাটাইমসকে মেয়র বলেন, ‘আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিল্প পুলিশের জন্য একটি স্থায়ী জায়গা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব শিগগির এ বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’

আর অডিটোরিয়াম নিয়ে চলমান মামলা সম্পর্কে মেয়র বলেন, ‘মামলায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত। কিন্তু পরে কলেজ কতৃপক্ষ আদালতে আপিল করেছে। মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে আমরা অবশ্যই অডিটোরিয়ামটি ভেঙ্গে নতুন করে একটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করব।’

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/আইআর/মোআ)