স্মৃতিতে ঘাতক নির্মূল আন্দোলনের চিত্র

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৭, ১৩:২১

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীর ‘ঘাতক নির্মূল আন্দোলনে স্মৃতিবাহী ১৯৯৩ সাল’ শীর্ষক গ্রন্থখানি একটি প্রামাণ্য দলিল। অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় লেখক আন্দোলন-সংগ্রামের চিত্র অঙ্কন করেছেন। এ ডায়েরিতে প্রতিফলিত হয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রম। ইতোপূর্বে আশির দশকে যে কয়জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ইনডেমেনিটি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, তার মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।

বিএনপি ১৯৯১-তে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। এর বিপরীতে অবস্থান নেয় শহীদ জননী জাহানার ইসলামকে আহ্বায়ক করে ১০১ জনের অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের একটি কমিটি- যা ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নামে খ্যাত ছিল। অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্র প্রতিরোধ মঞ্চ’ গঠন করেন। আসলে ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধ চেতনাকে ভুলিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। যদিও লেখক ১৯৯৩ সালের ফ্রেমে আলোচনাকে আবদ্ধ করেছেন, তবে এ গ্রন্থখানি ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য দলিল।

মুক্তিযুদ্ধ চেতনাকে জাগ্রত রাখতে নানামুখিভাবে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সমর্থক ও সম্পৃক্তরা যে নানা ফ্রন্টে যুক্ত হয়েছিলেন তার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।

গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৩ মার্চ ১৯৯২ তারিখে আন্দোলনের দুই নেত্রী জাহানারা ইমাম ও সুফিয়া কামাল শেখ হাসিনাসহ এক মঞ্চে বসলেন।

২৬ মার্চ, ১৯৯২ গণ-আদালতের পরেই তাদের ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অনেকের মতো ঘাতকবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা কমে গিয়েছিল। বস্তুত জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম করেছেন। এটি অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচায়ক।

স্মৃতিবাহী ১৯৯৩ সালের ডায়েরির সূচনা হয় ১ জানুয়ারি ১৯৯৩ শুক্রবার থেকে। এখানে জাতীয় সমন্বয় কমিটির কার্যকরী পরিষদের সভা ছিল। গ্রন্থটি শেষ হয়েছে ২৫ ডিসেম্বর১৯৯৩ সাল শনিবার।

গ্রন্থটি পড়লে বোঝা যায় যে, ৭৫ পরবর্তী শাসকরা যেভাবে দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে চেয়েছিল, তার বিপরীতে কত কষ্টই না বঙ্গবন্ধুপ্রেমীদের করতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের কল্যাণের তরে কাজ করেছে-আর নব্য শাসক-শোষকরা ভ্যাম্পায়ারের মতো রক্তচোষা ছিল। তাদের কর্মতৎপরতা জনকল্যাণের পক্ষে নয়- বরং বিপক্ষে অবস্থান ছিল। ৭৫ থেকে ৯৬ এ সময়কাল যেন বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেয়ার সব প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছিল। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে দেশের স্বাধীনতার মূল ভাবধারা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় মানুষের কল্যাণ, আর্থিক মুক্তি আর অসাম্প্রদিয়কতা মানে যার যার ধর্ম, তার নিজের কাছে বজায় রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের বিজয় ধব্জা উড়িয়ে চলেছেন।

এ গ্রন্থে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষাবিদ আব্দুল মান্নান চৌধুরী দেশের এক বৈরী সময়ের এক বছরের ইতিহাসমালা গ্রন্থিত করেছেন- যাতে ধরা দেয় মানুষের কল্যাণে ব্যাপৃত হওয়ার বিকল্প নেই।

গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে- অমর প্রকাশনী। এতে মানুষের উন্নয়নে জনগণের সম্পৃক্ততায় জীবনমুখী সময়গুচ্ছ আলোচিত হয়েছে।

প্রফেসর . মুহম্মদ মাহবুব আলী: শিক্ষাবিদ এবং ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট; ই-মেইল : [email protected]