সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে: খালেদা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়, সহায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, সেই নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটার ভোট দিতে যাবেন।
শনিবার ২০ দলীয় জোটের এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন এই মন্তব্য করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে বিএনপি। কিন্তু আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় এখন দলটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি করছে। সরকার তাদের এই দাবি নাকচ করে দিযে বলেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে রাজনীতিতে চলছে টানাপোড়েন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নিজেরা হেলিকপ্টারে বিভিন্ন জায়গায় উদ্বোধনের নামে যাচ্ছেন, কিছু উদ্বোধন করছেন। আর সেখানে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের নামে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। নৌকা যে ডুবে গেছে- এটা বুঝতে পারছেন না। এই নৌকা ডুবে গেছে, এই নৌকাকে আর আপনার হাজার লোক দিয়ে টেনেও তুলতে পারবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘নৌকার সঙ্গে যাদের রেখেছেন, আশপাশে যারা আছে, আপনার ডানে-বায়ে যারা আছে, যারা অন্য দল করে আপনার দলে এসেছে- তারা কী জিনিস। আপনি কিন্তু নিজেই বলে দিয়েছেন তারা কী খায়, কী রকম তাদের লাইফ স্টাইল। এসব লোককে দিয়ে দেশের কিছু হবে না, এরা দেশের কিছু করতে পারে না। আপনিও পারবেন না।”
বেগম খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনে দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন তার বক্তৃতায়। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। হাসিনার অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। হাসিনাকে বাদ দিতেই হবে, ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতেই হবে।”
খালেদা জিয়া দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামীতে সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটার ভোট দিতে যাবে। সকলে এটা চায়, সারা পৃথিবীর মানুষ এটা চায়। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে এই নির্বাচন হবে।” সেই নির্বাচনে বিএনপি জোট জিতে ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নে কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পাবর্ত্য জেলায় পাহাড়ধসে সরকার ব্যর্থ দাবি করে এর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে ভূমিধসে মানুষ মারা গেল, তাদের উদ্ধার করা, তাদের পুনর্বাসনে সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা আমরা দেখছি না, কোনো দায়িত্ববোধও দেখছি না। জনগণের নয়, আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত।’
চালের মূ্ল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘চালের দাম যে এত বাড়ল তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার। কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চালের দাম হলো ৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া সব জিনিসের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির দাম বেড়েছে।” বাজেটে কর, ভ্যাটের পরিধি বাড়ানো, ব্যাংকে আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির সমালোচনা করেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
জনগণের উদ্দেশে বিএনপি-প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাত থেকে যদি বাঁচতে চান, তাহলে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, গরিব-সাধারণ মানুষের পক্ষে, সমস্যা-সমাধানের পক্ষে, দেশের শান্তি-উন্নয়নের পক্ষে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে পক্ষে, তাদের পক্ষে থাকুন।’ সেই রকম দল ও জোট বিএনপি ও ২০ দল বলে দাবি করেন তিনি।
গুলশানের ইমানুয়েল সেন্টারে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। গত ২১ মে প্রধান মারা যান। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে খালেদা জিয়াসহ জোট নেতারা মোনাজাতে অংশ নেন।
জাগপার সভানেত্রী রেহানা প্রধানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জোট নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তাজা, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকীব, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন বক্তব্য দেন।
আলোচনা সভায়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
সভার পর মূলমঞ্চে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাগপার অধ্যাপক রেহানা প্রধান, তার মেয়ে ব্যারিস্টার তাহমিয়া প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/বিইউ/মোআ)
মন্তব্য করুন