সিংড়ায় অর্ধশত গ্রামবাসীকে পিটুনি
নাটোরের সিংড়ায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামবাসীকে পেটানোর অভিযোগ ওঠেছে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। আহতদের মধ্যে ২০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের জোলার বাতা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই যুবলীগ কর্মীদের আড্ডার স্থান সিংড়া কোর্ট মাঠের একটি ক্লাব ঘরে তল্লাশি চালিয়েছে সিংড়া থানা পুলিশ। তবে কাউকে আটক করা যায়নি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ২রা রমজান উপজেলার আনোলিয়া গ্রামের মাহাবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সাথে একই গ্রামের অপর একজনের বিরোধে মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে মাহাবুর রহমানের পক্ষে সিংড়া থেকে পৌর যুবলীগ কর্মী সম্রাট হোসেনের নেতৃত্বে ৫-৬টি মোটরসাইকেলে লোক নিয়ে ওই গ্রামে যায়। এসময় গ্রামবাসীরা ‘ভাড়াটে’ সন্ত্রাসীদের মারপিট করে। এরপর থেকেই আনোলিয়া গ্রামবাসীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। হুমকির কারণে আনোলিয়া গ্রামবাসীরা এক রকম উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করে আসছিলেন। শনিবার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী গেলে সেখানে আনোলিয়া গ্রামবাসী প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে প্রতিমন্ত্রী রবিবার তাদেরকে মীমাংসা করে দেয়ার জন্য উপজেলা সদরে আসতে বলেন।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী আনোলিয়া গ্রামবাসী ৫ থেকে ৬টি নমিসন নিয়ে উপজেলা সদরে আসছিলেন। এসময় খবর পেয়ে জোলার বাতা এলাকায় যুবলীগ কর্মী সম্রাট ও কাওছার হোসেনের নেতৃত্বে ১৫-২০জনের বাহিনী নসিমনের গতিরোধ করে। পরে তারা ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠি দিয়ে গ্রামবাসীকে গণপিটুনী দেন। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী।
এদের মধ্যে মহাব্বত হোসেন (৩৫) নামের এক কৃষককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দুই পা ও বাম হাত ভেঙে দেয়া হয়। অন্য আহতদের মধ্যে সিদ্দিক (৩৮), আব্দুল মতিন (২৭), আলমগীর (২০), জহুরুল (৩৫), আফসার (৪৫), নাজমুল (৩২), মিন্টু (২৬), জামাল (২০), আব্দুল জলিল (৩৪), মুকুল (১৬), উজ্জল (৩০), আলম (২৮) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ কমপক্ষে ২০জন গ্রামবাসী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। বাকি আহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনার পর পরই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা, যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ গ্রামবাসীকে দেখতে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও আনোলিয়া গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী সরকার ও সিদ্দিক আলী বলেন, স্থানীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ডাকে সাড়া দিয়ে সিংড়া আসার পথে আজ গণপিটুনী খেতে হলো গ্রামবাসীকে।
ইউনুছ আলী সরকার আরও বলেন, গতকাল শনিবার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান কামরান তাকে মোবাইল ফোনে সিংড়া আসতে নিষেধ করেছিলেন। পরিকল্পিত ভাবে গ্রামবাসীর উপর হামলা করা হয়েছে।
সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জামান উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় এপর্যন্ত ২০জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এবিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল নম্বরে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে পরিদর্শক তদন্ত নূর-ই-আলম জানান, এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা করেছে বলে শুনেছেন। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন মামলা বা কেউ আটক হয়নি।
(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/প্রতিনিধি/ ইএস)
মন্তব্য করুন