‘ফিল্যান্সারদের কেউ কেউ শর্টকাটে ইনকাম করতে চায়’
তরুণ ফ্রিল্যান্সার আরিফ হোসেন। পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্সে। এরপর ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সফলতার মুখও দেখেছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তার ফ্রিল্যান্সার হয়ে ওঠার কাহিনি বলেছেন ঢাকাটাইমসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।
আপনার বেড়ে ওঠা কোথায়?
আমার জন্ম নোয়াখালীতে, তবে জন্মের পরপরই বাবার সরকারি চাকরির কারণে ময়মনসিংহ চলে আসি।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজ করেছিলেন?
আমি ক্লাস এইট থেকেই আয় করি। সবসময় নিজে কিছু করার চিন্তা থেকে কখনোই চাকরি করা হয়ে ওঠেনি। তবে মাঝে মাঝেই আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফার পাই।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে কীভাবে এলেন?
২০০৮ সালের দিকে বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি অনলাইনের মাধ্যমে আয় করা যায়। এরপর বিভিন্ন আইটি রিলেটেড ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করি। আর আগে থেকে কম্পিউটারে ঝোঁক থাকার কারণে দুলাভাই একটি কম্পিউটার কিনে দেন। তবে সবচাইতে ইন্সপায়ারড হয়েছিলাম রাসেল আহমেদ নামে এক বড় ভাইয়ের লেখা পড়ে। প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল সেটা। সেসময় এতো ট্রেনিং সেন্টার বা টিউটোরিয়াল ছিল না। গুগল থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতাম। তারপর ময়মনসিংহ চলে আসি। ময়মনসিংহ এসে একটি আইটি ফার্মে এক বড় ভাইয়ের সাথে তিন মাস ওনার একটি প্রজেক্টে কাজ করি। তবে সেখানে তেমন একটা কিছু শিখতে পারিনি। এরপর নিজেই প্রথম মাইক্রোওয়ার্কাস নামে একটি সাইটে কাজ শুরু করি এরপর ফাইভার এবং পরে ওডেস্ক (এখন আপওয়ার্ক) নামে আরেকটি মার্কেটপ্লেসে কাজ করা শুরু করি।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে কোন সেক্টরে কাজ করেন?
আমি এখন এফিলিয়েট মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিং, ইউটিউব, নিশ সাইট, ড্রপ শিপিং সহ আরো কিছু প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি।
আপনি একাই এই কাজ করেন? নাকি দল নিয়ে করেন?
আমার একটি আইটি ফার্ম আছে। আমি পাঁচজনের একটি টিম নিয়ে কাজ করি।
কেমন সফলতা পেয়েছেন?
আমি কখনো নিজেকে পুরোপুরি সফল বলি না, কারণ শেখার শেষ নেই। প্রতিদিনই নতুন নতুন কিছু শিখছি। তবে যতটুকু সফলতা পেয়েছি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করি।
এই কাজ করে কি আপনি স্বাবলম্বী?
আমি গত ছয়-সাত বছর নিজের খরচটা নিজেই চালাতে পারছি, পরিবারকেও সাপোর্ট দিচ্ছি।
অর্জিত আয় কীভাবে বাংলাদেশে আনেন? আয় দেশে আনতে কি কোনো প্রতিবন্ধতা আছে নাকি? থাকলে কি সেটা। দেশে পেপাল এলে ফ্রিল্যান্সারদের কেমন সুবিধা হবে?
আমি ব্যাংক এবং বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টের মাধ্যমে টাকা আনি। প্রতি মুহূর্তেই আমাদের পেমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়। এরপর আমাদের ব্যাংকগুলো তেমন একটা সাহায্য করে না। মাঝে মাঝে হয়রানির শিকার হই।
পেপাল এলে আমাদের যেমন সুবিধা হবে সরকারও প্রচুর রেভিনিউ পাবে। তবে এটা এখন ধোঁকাবাজিতে চলে গেছে। সরকার কয়েকবার বলেও আনতে পারেনি। একটা বলে আরেকটা দেখায়। এটাকে বাংলায় মুলা দেখানো বলা চলে।
ফ্রিল্যান্সিং করে কোনো ক্লায়েন্টের কাছ থেকে বোনাস পেয়েছিলেন কি না?
শুরুর দিকে পেয়েছিলাম।
আপনার দেখাদেখি কেউ কি আপনার মতো ফ্রিল্যান্সিংয়ে এসেছেন?
২০১৫ সালের দিকে জাফর হোসাইন যাফি নামে এক বড় ভাই ভিডিও মার্কেটিংয়ের একটি গ্রুপ খোলেন। পরে সেখানে অ্যাডমিন হিসেবে আমিও যোগ দিই। প্রায় দুই বছরে আমরা এক হাজার মার্কেটার তৈরি করতে পেরেছি যাদের এভারেজ ইনকাম প্রতি মাসে এক হাজার ডলার।
নতুন কেউ যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আমার মনে হয় শেখার পেছনে সময় দেয়া প্রয়োজন। অনেকেই দেখা যায় আজকে এটা কালকে ওটা করে। এই জাম্পিং করা যাবে না। ফ্রিল্যান্সারদের কেউ কেউ শর্টকাটে ইনকাম করতে চায়। তবে এটা সাময়িক। যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কিছু শিখে স্কিল স্ট্রং করতে পারলে কাজের অভাব হবে না।
আমাদের দেশের তরুণরা যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চায়, তাদের বেশির ভাগেরই প্রোগ্রামিং জ্ঞান নেই। তারা কীভাবে এই খাতে আয় করতে পারে। তারা কি কেবল ডাটা এন্ট্রিই করতে পারবে? করলে ডাটা এন্ট্রিতে আয় কেমন?
সবার যে প্রোগ্রামিং শিখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি নিজেও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখে মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছি। আগে নিজেকে ভাবতে হবে আমি কোনটা শিখব। আসলে শুধু ডাটা এন্ট্রি না করে যেকোনো কাজ করেই ভালো আয় করা সম্ভব। এটা ডিপেন্ড করে কাজের ধরনের ওপর।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ইংরেজি ও যোগাযোগ দক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করতে। এ নিয়ে আপনার মতামত কী?
ইংরেজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনলাইনে কাজের জন্য, বিশেষ করে ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশননের জন্য। এ ছাড়া আপনি যদি মার্কেটিং নিয়ে কাজ করেন ইংরেজি না জানা থাকলে বারবার বাধার মুখে পড়বেন।
অভিযোগ ওঠে নতুনরা মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য কম দামে বিট করে।এ নিয়ে আপনি কি বলবেন। এতে কি তাদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে না?
আসলে এখানে চটকাদার ট্রেনিং সেন্টার অনেক সময় ফাঁদে পড়ে। বাড়ি বসে বড়লোক এই রকম বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এতে নতুনরা কাজ ভালোভাবে না শিখে মার্কেটপ্লেসে ঢুকে যাচ্ছে এবং কাজ না পেয়ে কম রেটে বিড করা শুরু করছে। এর জন্য মার্কেটপ্লেসে দিন দিন যারা ভালো বা বেশি রেটে কাজ করছে তাদের ডিমান্ড কমে যাচ্ছে। আর যারা কম রেটে কাজ করছে তারা বেশিদিন টিকতে করতে পারে না।
সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন কি?
না, আমি নিজ যোগ্যতায় এই পর্যন্ত এসেছি। সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পাইনি। পেলে হয়তো আরো ভালো করতে পারতাম।
সরকার ফ্রিল্যান্সারদের কতটা সহায়ত করে বলে আপনার মনে হয়?
সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে। কিন্তু ভালো পরিকল্পনা এবং যোগ্য লোকের অভাবে অনেক কিছুই বাস্তবায়ন অসম্ভব হবে। পরিশেষে বলতে চাই হুজুগে পড়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে না আসাই ভালো। কারণ, এখানে টিকে থাকতে হলে পরিশ্রম এবং ধৈর্য দুটোই প্রয়োজন। না হলে ঝরে যেতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এজেড/জেবি)
মন্তব্য করুন