বিদ্যুৎ, গ্যাসে ভ্যাট চান না জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ জুন ২০১৭, ১৭:০২ | প্রকাশিত : ১৯ জুন ২০১৭, ১৫:২০

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে এই তিন খাতে মানুষের ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক।

সোমবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্য ছাড়া সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি কয়েকশ পণ্যকে ভ্যাটের আওতাবহির্ভুত রাখলেও জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাত ভ্যাট অব্যাহতি দেননি।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এর প্রতিটি সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করেন। বলেন, এগুলো সাধারণ মানুষের ওপর চাপ ফেলবে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদেরকে সাশ্রয়ী ‍মূল্যে জ্বালানি সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটাবে। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি বিনিয়োগ চাই, তাহলে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি দিতে হবে। যারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দেবে, তাদেরকে সম্পূর্ণ ভ্যাটমুক্ত রাখতে হবে।’

বিদ্যুৎ বিলে এখন পযন্ত পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আছে। এটা ১৫ শতাংশ হলে বিদ্যুৎ বিল সাত শতাংশ বাড়বে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, এটা যেন এবারের বাজেটে না থাকে।’

সেই সঙ্গে সোলার প্যানেল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও জানান প্রতিমন্ত্রী। একইভাবে জ্বালানি সাশ্রয়ী এলইডি লাইটে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের পরারর্শ দেন তিনি।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘তেলের (জ্বালানি তেল) মধ্যে কোনো ভ্যাট রাখা যাবে না। কারণ, এতে তেলের মূল্য বৃদ্ধি ঘটবে, সাধারণ মানুষ এতে ভুক্তভোগী হবে।’

আমদানি করা তরল গ্যাসের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘বাজেটে মধ্যে এলএনজির ব্যাপারে কথা এসেছে। আগামী মার্চ থেকে আমরা গ্যাসের ঘাটতি পূরণ করা শুরু করব। কারণ দুইটি টার্মিনাল নির্মাণ হতে যাচ্ছে, প্রায় এক হাজার এমএমসিএস গ্যাস আগামী জুন মাসে আসবে। যদি আমরা ভ্যাট ও সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি রাখি, তাহলে এগুলোর দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। ...এলএনজি থেকে কর এবং সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ তুলে দেয়ার উচিত।’

এলপিজি সিলিন্ডার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ এলাকায় পৌঁছে গেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের মধ্যে আরও ২০ শতাংশ জায়গায় পৌঁছে যাবে। এই গ্যাস সাশ্রয়ী মূল্যে রাখার জন্য এই খাতকেও ভ্যাটমুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এখনই নয়

বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এখনও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও সংসদে জানান জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এই মুহূর্তে আপনারা পাবেন না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে গেলে আরও অনেক দূর যেতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি। শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে ১২ হাজারে গেছে। শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য হবে ১২ হাজার থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে যাবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক জায়গাতে বিদ্যুৎ বিতরণে সমস্যা হচ্ছে, এটা আমি জানি। আমরা আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বর এবং মার্চ নাগাদ এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারব।’

বিদ্যুতের লাইন দেড় লক্ষ কিলোমিটার থেকে সরকার তিন লাখ ৪১ হাজার কিলোমিটারে নিয়ে গেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে আমাদের যেতে হবে ছয় লাখ কিলোমিটারে।’

এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে লাগে ১০ হাজার কোটি টাকা লাগে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে যদি ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়, তাহলে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ লাগবে।

আগে দেশের মানুষ জনপ্রতি ২৫০ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতো জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন সেটা ৪০৭ কিলোওয়াট পার আওয়ারে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে এটাকে নিতে হবে ১৭০০ কিলোওয়াট পার আওয়ারে।

২০০৯ সালে দেশের ৪২ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতায়িত ছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি এখন ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অনেক উপজেলায় ১০০ শতাংশ কাভারেজ হয়েছে। কিন্তু ২০ শতাংশে গ্রিড লাইন নির্মাণ করা যাবে না। সেখানে বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।

বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৪৪ লাখ থেকে সাড়ে তিন কোটি হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সঞ্চালন লাইন নির্মাণেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘সঞ্চালন খাতে আমাদের দরকার বিলিয়ন অব ডলারের ইনভেস্টমেন্ট। আমরা টার্গেট করেছি, প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার আমরা সঞ্চালন লাইনে করবো। কিন্তু বিদ্যুৎখাতে যদি ২০২১ সালকে টার্গেট করি, তাহলে আমাদের দরকার ৭০ বিলিয়ন ডলার।’

জ্বালানি আমদানির জন্য সাগর তলে পাইপলাইন নির্মাণ হচ্ছে এবং এতে বছরে ১৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। জানান, ঢাকা-চিটাগাং পাইপলাইন নির্মাণ, খুলনায় নতুন একটি তেল শোধনাগারের কাজেও সরকার হাত দিচ্ছে। দুই মিলিয়ন ডলারে কাজ শুরু হয়ে গেছে।

আবাসন খাতেও ১৫ শতাংশ ভ্যাটের প্রস্তাব প্রত্যাহার, লাখ টাকার ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রস্তাহার এবং পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বানও জানান জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘শেয়ারমার্কেট যদি চাঙ্গা না হয়, তাহলে বিদ্যুৎখাতে আমরা অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট পাবো না।’

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বায়োগ্যাসকে বাণিজ্যিকীকরণে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন নসরুল হামিদ।

ঢাকাটাইমস/১৯জুন/ডব্লিউবি/জেডএ

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :