ঈদযাত্রায় ভোগাবে যাত্রাবাড়ী

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ জুন ২০১৭, ১৬:৩২ | প্রকাশিত : ২০ জুন ২০১৭, ০৮:৩৯

ওপরে উড়াল সড়ক দিয়ে শাঁই শাঁই ছুটছে গাড়ি। আবার মহাসড়ক থেকে শাঁ করে উঠছে নানা যানবাহন। কিন্ত এর নিচের দুই পাশের সড়কে থমকে আছে গতি। দিনভর যানজট। গুলিস্তান, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর পূর্ব-দক্ষিণ অংশের যানজট নিরসনের জন্য নির্মিত দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ওড়াল সড়কের এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। ওড়াল সড়কের যাত্রাবাড়ী-কাজলা অংশে দুই পাশের রাস্তা খানাখন্দে একাকার হয়ে আছে। কোথা কোথাও ফ্লাইওভারের পাশের রাস্তাটি গ্রামের ভাঙা মেঠোপথ বলে ভুল হবে।

অথচ প্রায় দুই বছর আগে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী পর‌্যন্ত ‘হানিফ ফ্লাইওভার’ নামের এই ওড়াল সড়কটি চালু হয়। এত দিনেও যাত্রাবাড়ী-কাজলা রাস্তা চলাচল উপযোগী করা হয়নি। ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চলাচল এমনই শ্লথ যে পেছনে যানজট দীর্ঘ হয়, আর সামনে রাস্তা খালে পড়ে থাকে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওড়াল সড়ক চালু হওয়ার দীর্ঘদিন পর এখন রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে কোথাও কোথাও। কিন্তু বড় একটা অংশ ভাঙাচোরা, বড় বড় গর্তে জমে আছে পানি। অর্ধেক রাস্তার মাটি সরিয়ে রাখা হয়েছে মেরামতের জন্য। কোথাও কোথাও সুরকি ফেলা হয়েছে। গাড়ি চলাচল ও বৃষ্টির পানিতে এসব সুরকি উঠে গিয়ে কর্দমাক্ত হচ্ছে রাস্তা। সেখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এই আশঙ্কা পাওয়া গেছে, বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে এ পথে ঈদযাত্রা ভোগাবে যাত্রীদের।

রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ফলের আড়ত পর‌্যন্ত অংশ মেরামত করা হয়েছে। এরপর কাজলা পর‌্যন্ত দুই পাশে বেহাল দশা। আবার মেরামত করা অংশে ড্রেনেজের কাজ শেষ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই ওই রাস্তায় পানি জমে যায় বলে জানান একজন আড়তদার। এই অংশে তখন ভয়াবহ আকার ধারণ করে যানজট।

যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলার এই অংশটি ভাঙাচোরা হওয়ায় গাড়ির গতি এমনিতেই ধীর। তার ওপর মেরামত কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করায় সরু হয়ে গেছে রাস্তা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দূরপাল্লার গাড়ির যাতায়াত। সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা কুমিল্লা, চাঁদপুরগামী অনেক গাড়ি ফ্লাইওভার এড়িয়ে নিচ দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে রাস্তার ওই অংশ যাতায়াতের কষ্ট ও যানজটে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যাত্রী ও চালকদের। যানজট কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজলা থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর‌্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে কাজলা থেকে শনির আখড়া পর‌্যন্ত তীব্র যানজটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী আমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ নিয়ে এই ভাঙা রাস্তা দিয়ে আমাদের চলতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এমনটা। আমাদের দুর্দশার অন্ত নেই।’ ঈদের যানবাহনের চাপের আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘এখানকার এক পাশের রাস্তা বন্ধ, আর অন্য পাশের রাস্তার যে অবস্থা, তাতে ঈদের সময় এখানে মহাদুর্ভোগে পড়বে যাত্রীরা।’

কদমতলী রায়েরবাগের বাসিন্দা আব্দুর রহমান। প্রতিদিন তিনি এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। ঢাকাটাইমসকে আব্দুর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই এই মহাসড়কের এমন বেহাল দশা। ফ্লাইওভার শেষ হওয়ার পর এই রাস্তার কাজ শুরু হয়, অথচ এখনো কাজ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। রাস্তা মেরামতের জন্য মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে অর্ধেকটা জুড়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই যাত্রাবাড়ী-কাজলার এই রাস্তা কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। তখন কী যে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের!’

ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কাজলা মোড় পর‌্যন্ত সড়কের সংস্কারকাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কবে নাগাদ শেষ হবে কাজ, জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ, সায়েদাবাদ অঞ্চল-৫ এর কার্য‌্যসহকারী সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, মহাসড়কের এক কিলোমিটারের সংস্কারকাজ চলছে। ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ শেষ হয়নি। তাই বৃষ্টি হলে পানি জমে। আর এতে আমাদের কাজেরও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।’ রাস্তার কাজ শেষ করতে আরও বেশ সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

কথা হয় ওই রাস্তায় কর্মরত শ্রমিক জহির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান এই রাস্তার কাজে প্রতিদিন ১০০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছেন। গাড়ি চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তার খানাখন্দ প্রতিদিন রিপিয়ারিং করছি, কিন্তু গাড়ি বেশি চলায় সেগুলো ভেঙে যায় বারবার।’

ঈদের আগে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে দেরি হচ্ছে। কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জহির জানান, আরো প্রায় দুই মাস লেগে যাবে কাজ শেষ হতে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/জিএম/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :