মহেশখাল বাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজার পরিবার

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০১৭, ১৩:৫২

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলবদ্ধতার জন্য অনেকোংশে দায়ী বহুল আলোচিত মহেশখাল বাঁধ ভেঙে দেয়া হলেও নতুন বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে নগরবাসীকে। পানি কমার সাথে সাথে খালের তলায় দেখা যাচ্ছে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ।

তাছাড়া খালটি যেন খাল নেই শহরের জনপদের সমান কোনো বিস্তীর্ণ খাদ। বাঁধ ভেঙে দিয়েও যেন মুক্তি নেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের। এ বাঁধের জলাবদ্ধতায় সবকিছু হারিয়ে সম্পদের খাতা হাতিয়ে বেড়াচ্ছেন মহেশখাল খাল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।

জানা গেছে, খালের চারপাশের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার এ বাঁধের জলাবদ্ধতায় নানা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। যারা নিজেরাই লাখ থেকে কোটি টাকার সম্পদ নষ্টের কথা তুলে ধরছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।

মহেশখাল সংলগ্ন হালিশহর কে-ব্লকের বাসিন্দা গুলজার বেগম জানান, তার বাড়ির নিচতলায় পার্কিংয়ে থাকা ৬০ লাখ টাকায় কেনা তার গাড়িটি ঘূর্ণিঝড় মোরা ও পরবর্তী সময়ে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একইভাবে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, গোসাইলডাঙা, ছোটপুল, শান্তিবাগ, বেপারীপাড়া, মিস্ত্রীপাড়া, হালিশহর কে-ব্লক, এল-ব্লক, জি-ব্লক, বসুন্ধরা, সোনালী, কর্ণফুলী আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের আর্থিক ক্ষতির সাথে পোহাতে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। মহেশখালের বাঁধ কাটার পরও সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি নেই তাদের।

এসব এলাকার বিভিন্ন ভবনের নিচতলার বাসিন্দাদের আসবাবপত্র ডুবে যাওয়ায় তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। পানিতে ডুবে ঘরের ফার্নিচার, ব্যবহৃত গাড়ি, দোকানদারদের মালামাল কিংবা মূল্যবান ফার্নিচার যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনি সিটি করপোরেশনের রাস্তাঘাট ভেঙে কিংবা খালের ভেতরে মাটি ভরাট হয়ে পাঁচ কোটি টাকার বাঁধে প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে-এই আশঙ্কায় মহেশখালের বাঁধের বিরোধিতা করে শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকার ওপরে হবে। এর পাশাপাশি রয়েছে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বাঁধের কারণে আটকে থাকা পানিতে নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যবহার্য টিভি, ফ্রিজ, ফার্নিচার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষ কাজে যেতে না পেরে অভুক্ত থেকেছে। গত বছর এই এলাকার মানুষকে পানির মধ্যে ঈদ করতে হয়েছে। অপরিকল্পিত এ বাঁধের কারণে বিশাল একটি এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে গেছে।’

সুজন প্রশ্ন রাখেন, অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে এ এলাকার মানুষের বিশাল আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি যে দুর্ভোগ হলো, এর দায়ভার কে নেবে?

মহেশখালের ওপর বাঁধ দেয়ার কারণে খালের উভয়পাশের (ভাটি ও উজান) মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। প্রবল জোয়ারে ভাটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হন। আবার টানা বৃষ্টিতে পানি নামতে না পারায় দুই থেকে চারদিন পর্যন্ত পানিবন্দি হয়েছেন উজানের মানুষ।

এ বিষয়ে বন্দর পুরাতন পোর্ট মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাকিম সওদাগর বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের সময়ও এই এলাকায় পানি ওঠেনি। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বাঁধ দেয়ার পর থেকে দুই বছর ধরে অতিরিক্ত জোয়ারে মার্কেট এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে পোর্ট মার্কেটের ব্যবসায়ীদের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

হালিশহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা করছিলেন শারমিন জাহান রুহী। ঘূর্ণিঝড় মোরা ও পরবর্তী সময়ের বৃষ্টির দুই দফা পানিতে তার দোকানের সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে সমগ্র এলাকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বড় ব্যবসায়ীরাও।

আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের উভয়পাশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত ফার্নিচারের দোকান। আখতার, ব্রাদার্স, ফ্রিডম, লিগেসি, হাতিল, জেএমজি, আয়েশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যান্ডের অসংখ্য ফার্নিচার দোকান এখন এই রোডে। কিন্তু মহেশখাল বাঁধের কারণে গত দুই বছর ধরে এখানকার অনেক ফার্নিচার দোকানে পানি তো ঢোকেই, সেই সঙ্গে পানিবন্দি হয়ে থাকে পুরো রোডটি।

এ বিষয়ে হাতিল ফার্নিচারের ম্যানেজার আবদুস সালাম বলেন, রাস্তায় পানি থাকার কারণে বিক্রির ভরা মৌসুমেও ক্রেতা আসছেন না। একইসাথে কাছের ক্রেতারা যারা কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের কারো অফিসের আবার কারো ঘরের আসবাব পানি জমে নষ্ট হয়েছে। এর ফলে এই খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মহেশখাল বাঁধের কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দীর্ঘসময় ধরে এলাকা পানিবন্দি থাকছে এবং এখন জোয়ারের সময় রাস্তায় পানি জমছে বলে জানান দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এভাবে একটি এলাকা চলতে পারে না। বাঁধের কারণে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয়েছে, তা হলো- নালা ও খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। পানিতে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকতো বলে এলাকাটি দুর্গন্ধময় হয়ে থাকতো।

তিনি আরও বলেন, এভাবে বাঁধ কাটা ও বাঁধ দেয়ার মধ্যে সমাধান নেই। স্লুইস গেইট দিলেও সমাধান হবে না, যদি তা মেইনটেনেন্স করা না যায়। তাই আমাদের দাবি থাকবে, পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে স্লুইস গেইট চালু করা হোক।

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরো এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রতিটি পরিবারে এক লাখ টাকার ফার্নিচার ও নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাতে মোট প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি। এর বাইরে অনেকের গাড়িও নষ্ট হয়ে গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/আইকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :