অতি সাধারণ এক সাংবাদিকের কথা-৩০

আলম রায়হান
 | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০১৭, ১৪:৪৫

‘ধর্ষণ ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ হবার পর সামনে এলো আর এক উটকো ঝামেলা। গেদুচাচার খোলা চিঠি’র স্বত্ব দাবি করে উকিল নোটিশ পাঠালেন মোজাম্মেল ভাই। এ নোটিশ তিনি ভাড়ায় নেয়া তার সাপ্তাহিক সূর্যোদয়-এ ছেপেও দিলেন। এ নিয়ে তিনি মামলা করলেন আদালতে। সবমিলিয়ে একটা গোয়েবলসিও প্রোপাগান্ডা শুরু করলেন। ফলে পাঠকদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রন্তি সৃষ্টি হলো; তবে তা স্থায়ী হয়নি। এদিকে তার মামলাও খারিজ হয়ে গেছে আদালতে। সাধারণ নিয়মে এবং আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত হলো, গেদু চাচার খোলাচিঠি সুগন্ধার; কোনো ব্যক্তির নয়। কিন্তু এরপরও থামছিলেন না সাংবাদিকতায় নিজকে রবিন হুড বলে দাবিদার মোজাম্মেল ভাই। তবে তিনি সুগন্ধার পশ্চাতে বেশি দিন লেগে থাকতে পারেননি। কারণ, ঝামেলার আর একটি দিগন্ত খুলেছিলেন। যে বিরোধের ফলে তাকে বেশ মূল্য দিতে হয়েছে।

সুগন্ধা ছাড়ার স্টাইলেই চুক্তিতে নেয়া সাপ্তাহিক সূর্যোদয়ও হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে মোজাম্মেল ভাই বাজারে দিলেন নিজের মালিকানায় সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়। তিনি ছাড়লেও সাপ্তাহিক সূর্যোদয়-এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখলেন পত্রিকাটির অর্থের যোগানদার সিলেটের মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী; তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। এ অবস্থায় সুগন্ধার বদলে মোজাম্মেল ভাই তার মালিকানার সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয় নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে গেলেন মাহমুদুস সামাদের অর্থায়নে প্রকাশনা অব্যাহত থাকা সাপ্তাহিক সূর্যোদয়-এর সঙ্গে। উল্লেখ্য, মোজাম্মেল ভাই লাগাতরভাবে সুগন্ধার বিরুদ্ধে তার পত্রিকায় প্রোপাগান্ডা চালালেও আমরা তার বা তার পত্রিকার ব্যাপরে কোনো কিছু ছাপিনি। কিন্তু সূর্যোদয়-এর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হলে দুই তরফেই সমানে সমান চালিয়েছে। এ অবস্থায় উটকো ঝামেলা থেকে রেহাই পেল সাপ্তাহিক সুগন্ধা; হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমরা!

এ অবস্থায় আমরা অধিকতর মনোযোগ দিলাম পত্রিকার মানোন্নয়নে। যে মান উন্নয়নের তাগিত ছিল সবার। এ বিষয়ে আমারও ভেতরের চাপ ছিল। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার মেধাবী ছাত্র মাসুদ কামাল যোগদানের দিন পত্রিকা উল্টাবার সময়ই দেখেছি তার চেহারায় কী রকম বিরক্তি লেপ্টে ছিল! পরে টিম মোটামুটি দাঁড়িয়ে যাবার পর সবাই মান নিয়ে যার যার মতো করে আপত্তি তোলা শুরু করলো। সবচেয়ে সরব ছিল যথারীতি মাসুদ কামাল। চুপচাপ থাকতো মানিকজোড় শওকত আলী সাগর ও মোস্তফা কামাল। তবে দুজনের মধ্যে ছিল খুব সূক্ষ্ম ও মৌলিক একটি পার্থক্য। অল্প বয়সে বহু ঘাটের জল খাওয়া মোস্তফা কামাল মান নিয়ে তেমন মাথা না ঘামিয়ে বেশি বেশি আইটেম দেবার চেষ্টা করতো। এর কোনটার মান উন্নত হতো; কোনটা হতো একটু নিচের। তবে তা সব সময়ই আগের মানের চেয়ে বেশ উপরে থাকতো। আর মানের ক্ষেত্রে শওকত আলী সাগর মুখ ফুটে কোনো কথা বলতো না। তবে নিজের আইটেমের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতো; খুঁতখুঁতে বললেও বেশি বলা হবে না।

সাগরকে কখনো মানের সঙ্গে আপস করতে দেখিনি। ফলে তার আইটেম সংখ্যায় কম হতো। তবে মানের দিক দিয়ে ছিল অনেক উপরে। সাগরের মানের লেখা এখন কতটি পত্রিকায় ছাপা হয় তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সম্ভবত মানের প্রশ্নে আপস না করার প্রবণতার কারণেই দৈনিক রূপালী হয়েছে প্রথম আলোতে যোগদান ও দাপটের সঙ্গে কাজ করা সহজতর হয়েছে শওকত আলী সাগরের জন্য। অবশ্য সাগরের আইটেম কম হবার বিষয়টি নজর এড়ায়নি সৈয়দ মোয়াজ্জেমের। এ নিয়ে তিনি একদিন প্রশ্ন তুললেন। উত্তরে আমি একটু সাহিত্য করে বললাম, ঘি একটু কমই হয়। সঙ্গে সঙ্গে নাটকের ডায়লগের মতো মোয়াজ্জেম সাহেব বললেন, তা হলে যারা বেশি আইটেম দেয় তারা কি কেরোসিন দেয়! দাবা খেলার মতো মোক্ষম চাপ দিলেন ব্যবসায়ী মালিক। যার তাৎক্ষণিক উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গুজামিল দেবার মতো করে বললাম, চারদিকে নজর দিয়ে আপনি কোনো কূলকিনার করতে পারবেন না। তার চেয়ে ভালো একমাত্র আমার দিকে নজর রাখা; শকুনের মতো। শকুনের উপমায় ভেতরে ভেতরে চটেছেন কি না জানি না, তবে প্রকাশ করেননি সৈয়দ মোয়াজ্জেম। বরং একটু হেসে বললেন, আরে ভাই আপনারে আমি চিনি, আপনার ওপরও আমার নজর রাখার দরকার নেই; কোনো ইস্যু নাই এজন্য একটা আলোচনা করলাম। পরে অবশ্য টের পেয়েছি, তিনি খামাখা কথা বলেননি। আসলে মালিকরা কখনই খামাখা বলেন না, তাদের সব কিছুরই একটি উদ্দেশ্য থাকে!

এদিকে একটি নির্দিষ্ট মান রক্ষা করেছে জহিরুল আলম ও শহিদুল আজম। তবে তারা মান প্রসঙ্গে মিটিং-এ তেমন কথা বলতো না; মাঝে মধ্যে মাঝামাঝি দিয়ে চলার মতো কথা বলতো। কিন্তু মান প্রশ্নে টোটাল টিমে খুবই মুখর ছিল মাসুদ কামাল। মান নিয়ে তার আহাজারিতে আমার নিজেই মান-ইজ্জত যাবার অবস্থা হতো মাঝে মধ্যে। কারণ, মালিকের গার্মেন্টস ও এনার্জি ব্যবসার লোকজনও বসতো একই অফিসে। এদের মধ্যে একজনকে রুম থেকে বের হতে হয়েছিলো পত্রিকার সঙ্গে টক্কর দিতে গিয়ে।

পত্রিকার দায়িত্ব দেয়ার পর খোলা স্পেস থেকে আমাকে একটি রুমে স্থান্তর করা হলো। এ রুমে আগে থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার বসতেন। আমরা দুজন পাশাপাশি টেবিলে বসতাম। এ বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ার সাহেব পছন্দ করেননি। আবার কিছু বলতেও পারছিলেন না। কিন্তু সে এক ধরনের চাপা ক্ষোভে ফুসছিল। এটি তিনি প্রকাশ করে ফেললেন হকার্স ইউনিয়নের এক নেতা লুঙ্গি পরে রুমে প্রবেশ করায়; এর সঙ্গে তাকে আমি যথেষ্ট সমাদর ও আপ্যায়ন করায় ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ভেতরে ভেতরে আরও ক্ষেপে গেলেন। তিনি মাঝামাঝি দিয়ে কিছু মন্তব্যও করলেন। মেহমানের প্রতি অসম্মানজনক তার এ মন্তব্য বুঝেও না বোঝার মতো চুপ থাকলাম। কারণ, আমি কোনো ঝামেলায় যেতে চাইনি; তা ছাড়া তার মর্ম বেদনাও বুঝতাম। কিন্তু তিনি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। বিষয়টি মোয়াজ্জেম সাহেবের কাছে বললেন নালিশ আকারে। মোয়াজ্জেম সাহেব আমাকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন তার সামনে। আমি বললাম, ‘যে এসেছিল সে হকার্স ইউনিয়নের বড় নেতা কামাল। সে যদি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের আচরণ টের পেয়ে থাকে তা হলে আর আপনার সুগন্ধা চালানো লাগবে না!’ আমার কথা শেষ না হতেই মোয়াজ্জেম সাহেব পিয়ন ডাকলেন। বললেন, অই রুম থেকে একটা টেবিল বের কর। পিয়ন ফারুক বললো, আলম স্যারেরটা? ফারুক আমার ওপর অসন্তষ্ট ছিল। মোয়াজ্জেম সাহেব চিৎকার করে বললেন, না; ইঞ্জিনিয়ারেরটা। রুমে আলম রায়হান একা বসবে!

অবশ্য আমি একা বসিনি। ভাবচক্কর আমি কোনো সময়ই খুব একটা এনজয় করি না। তা ছাড়া অতবড় রুমে একা বসা এক রকম অপচয় মনে হয়েছে আমার। এ অবস্থায় কয়েকদিন পর মাসুদ কামালকে আনলাম আমার রুমে। এতে টিমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলেও তা প্রকাশ পায়নি। কারণ, ততদিনে টিমে প্রভাবশালী দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে মাসুদ কামাল নিজকে গ্রহণযোগ্য করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে তাকে নিয়ে টিমের কারো আপত্তি করার কিছু ছিল না। তবে আপত্তি তুললেন আমার মঙ্গল কামনায় অতি কাতর আলতাফ ভাই, আলতাফ মাহমুদ। তিনি বললেন, ‘করেছেন কী! এভাবে কাছে আনা ঠিক না; গ্রুপিং করবে তো! এ ভাবে কাছে আনবেন না, দূরে রাখবেন।’ আমি বললাম, ‘গ্রুপিং করলে কাছে রাখলেও করবে, দূরে রাখলেও করবে; কাছে-দূরের হিসেব করে গ্রুপিং ঠেকানো যায় না। আর আমার পতন হবে আমার নিজের কারণে অথবা মালিকের বোকামিতে; টিমের কারণে নয়। কিন্তু আমি যদি টিমের সদস্যদের সন্দেহের চোখে দেখতে থাকি তা হলে সময়ের আগেই আমার পতন হবে।’ আমি নিশ্চিত আমার এ জবাব আলতাফ ভাইর মোটেই পছন্দ হয়নি। বললেন, দেখেন কী হয়...!

রুম থেকে ইঞ্জিনিয়ার বের হবার পর পত্রিকার টিমের বিষয়ে অফিসের অন্যদের নাক ছিটকানো ভাব একেবারে উবে গেল। কিন্তু পত্রিকার মান নিয়ে মাসুদ কামালের মুখরতা কিছুতেই কমছিল না। সে এক মুখরা নারীর মতো অবস্থা! যদিও লাগাতার এ মুখরতার কিঞ্চিত খেসারতও দিতে হয়েছে তাকে। মোজাম্মেল ভাইর আমলের তুলনায় আমাদের টিমের সময় সুগন্ধার যে মান উন্নয়ন হয়েছেন তার অন্তত অর্ধেক লোড নিতে হয়েছে মাসুদ কামালকে। পত্রিকার মান উন্নতির দিকে যাওয়ায় মোয়াজ্জেম সাহেব বেশ স্বস্তিতে ছিলেন। তার কাছে শুনেছি, তিনি যাদের সঙ্গে চলেন তাদের কাছে সুগন্ধার পরিচয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করতেন মোজাম্মেল ভাইর আমলে। কিন্তু এর বিপরীত অবস্থা হয়েছে আমাদের টিমের ছয় মাসের মধ্যে। এতে তিনি উৎসাহিত হয়ে ইকোনোমিস্ট, টাইম, নিউজ ইউকিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক পত্রিকা নিয়মিত গ্রাহক হতে বললেন। আমি বললাম, অতিরিক্ত খরচ করার অবস্থা পত্রিকার এখন নেই। এ জন্য তিনি অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে আলাদা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। আর এ পত্রিকাগুলো পড়ে সেখান থেকে সুগন্ধার জন্য চয়নের দায়িত্ব প্রায় পুরোটাই চেপেছিল মাসুদ কামালের ওপর। একেই বলে মুখর হবার ঝামেলা। তবে মাসুদ কামালকে এর চেয়েও বড় একটি ঝামেলা সামলাতে হতো। তা হলো আমার লেখা সম্পাদনা করা। আমার হাতের লেখা এতোই কুৎসিত যা থেকে মাঝেমধ্যে প্রফেশনাল কম্পোজারদেরও পাঠোদ্ধার করতে অসুবিধা হতো। জসিম নামে ফকিরাপুলের বাড়িয়া কম্পিউটরের এক কম্পোজার একদিন রেগে গিয়ে বলেছিলেন, জীবনে কমতো লিখলেন না; হাতের লেখা এতো বাজে কেন! কিন্তু আমার হাতের লেখার শ্রী নিয়ে কখনো আপত্তি করতে দেখিনি মাসুদ কামালকে; যদিও এটি ছিল তার জন্য এক রকম অত্যাচারের মতো। এ ধরনের অত্যাচার আরও যারা সহ্য করেছেন তাদের মধ্যে আছেন আশরাফ খান ও খায়রুল আলম বকুল। আর ‘অত্যাচারিত’ হবার আগেই আমার লেখা ‘পড়া যায় না’ বলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আশরাফ খানকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম রতন আমি বাংলার বাণীতে থাকাকালে। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার সেই রিপোর্টটি বাই লাইন ছাপা হয়েছিল বাংলার বাণীতে বাম দিকে টপ নিউজ হিসেবে। তখন ‘মাথাগরম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিম। তিনি মন্ত্রণালয় গরম করে ফেললেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত ফাঁস হওয়া নিয়ে। এ কথা শুনেছি সে সময়ে পিআরও নাসির ভাইর কাছে। এদিকে সোর্স হিসেবে যুগ্ম-সচিব জানিবুল হকের নাম আশরাফ ভাই রিপোর্টে ঢুকিয়ে দেয়ায় আমার একটি শক্ত সোর্স হারিয়েছিলাম চিরকালের জন্য। আর আমি বার্তাকক্ষে ছোট হয়েছিলাম রতনের আচরণে। এরপর দৈনিক দিনকাল হয়ে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় থাকাকালে হাতের লেখা নিয়ে একই অবস্থা সৃষ্টি হয় আমার। কিন্তু সেটি আমাকে ছোট করার জন্য করা হয়নি; বরং করা হয়েছে মানোন্নয়নের জন্য। বার্তা সম্পাদক মোক্তাদিন ভাই বলেছিলেন, সাত দিনের মধ্যে কম্পিউটারে কম্পোজ করবেন; তা না হলে আপনার রিপোর্ট নেব না। তার কথা শুনে আমার মাথায় তো একেবারে আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। ভাবলাম, কম্পিউটারে আবার কম্পোজ করে কিভাবে! মিউ মিউ করে মৃদু আপত্তি তোলার চেষ্টা করলাম; নিদেন পক্ষে কিছু সময় বাড়িয়ে দেয়ার বিনীত আরজি জানালাম। কিন্তু কম কথা বলার স্বভাবের মোক্তাদির ভাই কানেই তুললেন না। কম্পিউটারে তাস খেলতে খেলতে বললেন, ‘শুভ পারলে আপনি পারবেন না কেন! শুভর চেয়ে কি আপনার চেহারা খারাপ, না লেখাপড়া কম?’ অদ্ভূত যুক্তি। বুঝলাম, অনুনয়-বিনয় করে মোটেই সুবিধা হবে না। কিন্তু আমি কোন কিনার পাচ্ছিলাম না। এ সময় ‘বিপন্ন বড় ভাইকে’ রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল তমাল, এখন বাংলাদেশ প্রতিদিনে আছে; পরে সাহায্যের হাত বাড়ায় মশিউর, সে আছে যুগান্তরে। স্পোর্টস রিপোর্টার লিসাও সহায়তা করার ব্যাপারে এগিয়েছিল; কিন্তু তাকে পিছিয়ে দিল হারুন ভাই, হারুনুর রশিদ খান। হয়তো তিনি ভেবে ছিলেন, সাহায্য করতে গিয়ে যদি প্রেম হয়ে যায়। হারুন ভাই কি ভেবেছিলেন জানি না। কিন্তু আমি পরে ভেবেছি, কম্পিউটারে কম্পোজ করার জন্য মোক্তাদির ভাই হাইড্রোলিক প্রেসার না দিলে আমার অবস্থা কী হতো কে জানে। পেশাগত জীবনে তিনি আমার বড় ধরনের উপকার করেছেন।

মোক্তাদির ভাই দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একই রকম উপকার করতে গিয়ে বড় ঝামেলায় পড়েছিলাম মাইটিভিতে। বাংলাভিশনের পর আমি যখন মাইটিভিতে বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দিই তখন নিউজ রুমে কেউ কম্পোজ করতে পারতো না। সাংবাদিকদের আইটেম কম্পোজ করার জন্য মাইটিভিতে চার জন প্রফেশনাল কম্পোজার ছিল। রিপোর্টাররা বাহির থেকে তাড়াহুড়া করে এসে ধীরেসুস্থে হাতে লিখতো। এর পর তা কম্পোজ করাবার জন্য প্রফেশনাল কম্পোজারে পেছনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো অনেকটা এতিমের মতো। ফলে রিপোর্টার আসা সত্ত্বেও প্রায় ক্ষেত্রেই তা সময় মতো অনএয়ার করা যেতো না। আমি মোক্তাদির ভাইর উদাহরণ কপি-পেস্ট করে একটু মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ১৫ দিনের মধ্যে সবাইকে কম্পিউটারে কম্পোজ করতে হবে; তা না হলে রিপোর্ট নেব না। এটি করেছি মজ্জাগত স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। তবে অন্যের উপকার করতে গিয়ে আমার ক্ষতি হয়েছে। কারণ উপকার ভোগিরা উপকারটা বোঝার আগে খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। সাংবাদিকরা মনে করলো, এতো কঠিন কাজ তারা কিভাবে করবে; তাদের চাকরি যাবে! আর প্রফেশনাল কম্পোজাররা প্রমাদ গুণলো কাজ না থাকায় সারপ্লাস হয়ে চাকরি হারাবার ভয়ে। কিন্তু কারোরই চাকরি যায়নি। বরং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান ও কর্মরতদের উপকার হয়েছিল; কম্পোজাররা হয়েছিল প্রডিউসার। কিন্তু ক্ষতি হলো আমার। কারণ নিজেদের উপকার উপলব্ধি করার আগে প্রায় দুই মাস ধরে সম্মিলিতভাবে আদাজল খেয়ে আমার বিরুদ্ধে গ্রুপিং করা হয়েছে। যার ফলও পেয়েছি হাতে হাতে আড়াই মাসের মাথায়; দশ দিনের বাধ্যতামূলক ছুটি। কথিত ছুটির ধকল কাটিয়ে চাকরিতে ফিরতে লেগেছে প্রায় এক মাস। এ ধরনের বাস্তবতা বুঝাতেই হয়তো প্রবচন আছে, উপকারীরে বাঘে খায়!

লেখক: জেষ্ঠ্য সাংবাদিক; ই-মেইল: [email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :