প্রমিলা ক্রিকেটারকে যৌন হয়রানি, ফুঁসে উঠছে দিনাজপুরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০১৭, ১৭:৪৫

প্রমিলা ক্রিকেটারকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে দিনাজপুরবাসী। অভিযুক্ত কোচ মিঠুর বিচারের দাবিতে বুধবার মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সেক্টরস কমার্ন্ডাস ফোরাম, খেলা ঘর, মনি মেলাসহ বিভিন্ন সংগঠন। যৌন হয়রানির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) জেলা কোচ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য আব্দুস সামাদ মিঠুর বিরুদ্ধে এখনো তেমন কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। তারা বলছেন, এতবড় ঘটনার পরও মিঠুকে বহাল তবিয়তে রেখে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম শুধু কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়ায় হতবাক হয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, প্রমিলা ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার (২০ জুন) কোচ আব্দুস সামাদ মিঠুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাকে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে দিনাজপুর নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি ও সেক্টরস কমার্ন্ডাস ফোরামের সভাপতি আব্দুল কালাম আজাদ জানান, প্রমিলা ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগ পাওয়ার পরও দিনাজপুর জেলা প্রশাসক তাকে (মিঠু) শুধু একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তিনি জানান, এই ঘৃণিত অপরাধের অভিযোগে তাকে প্রথম বরখাস্ত বা বহিষ্কার করা উচিত ছিলো এবং আইনের আওতায় আনা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে তাকে (মিঠুকে) নামে মাত্র একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। এসময়, তিনি প্রমিলা ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানীর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে আব্দুস সামাদ মিঠুকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

যৌন হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছে দিনাজপুরের বিভিন্ন সংগঠনও।দিনাজপুর জেলা খেলাঘর আসরের সভাপতি জলিল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল মতিন সৈকত প্রমিলা ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ এবং দোষী বিসিবির জেলা ক্রিকেট কোচ মিঠুকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।

এর প্রতিবাদে এবং মিঠুকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।

মিঠুর বিরুদ্ধে প্রমিলা ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখা। মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম এক যৌথ বিবৃতিতে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, এ জাতীয় নির্যাতনগুলো সমাজে বেড়েই চলেছে। এ ধরনের ঘটনাগুলোর যথাযথ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার না হওয়া এবং প্রশাসনের উদাসীনতায় এর ভয়াবহ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। নারীর লজ্জা সম্ভ্রম এভাবে ভুলুণ্ঠিত হতে থাকলে সমাজে উন্নয়নের স্রোতধারা বাধাপ্রাপ্ত হবে। মানবিক মূল্যবোধের এই অবক্ষয় রোধ করতে মহিলা পরিষদের নেতারা অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছে।

প্রসঙ্গত, যৌন হয়রানির শাস্তি দাবি করে ভিকটিমের পিতা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সিনিয়রসহ সভাপতি পুলিশ সুপার হামিদুল আলমের কাছ প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

যৌন হয়রানির শিকার প্রমীলা ক্রিকেটারের পিতা গত ১৪ জুন জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ করে বলেছেন, তার মেয়ে দিনাজপুর বড় মাঠে কোচ আবু সামাদ মিঠুর অধীনে ক্রিকেট অনুশীলন করে আসছে। তার মেয়ের সাথে আরও অনেক মেয়ে ওই মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করে থাকে। গত ১ জুন মাঠে অনুশীলন করার সময় ক্রিকেট বলের আঘাতে তার মেয়ে আহত হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মিঠু স্পোর্টস ভিলেজে নিয়ে আসে এবং সঙ্গে থাকা তার বান্ধবীকে মাঠে চলে যেতে বলে। মেয়েটি চলে গেলে মিঠু বরফ দেয়ার নাম করে তার মেয়েকে জোর করে চেপে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। তার মেয়ে যন্ত্রণায় ছোটফট করতে থাকে এবং ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আবারও মিঠু তাকে চেপে ধরে কয়েক বার এরকম আচরণ করার পর তার মেয়ে চিৎকার করলে তখন মিঠু মেয়েটিকে ছেড়ে পালিয়ে যান।

লিখিত অভিযোগে তিনি আরও জানান, আমার মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর, সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী এখনো সে শিশু। ঘটনার পর আমার মেয়ে বাসায় ফিরে আসার পর থেকে নীরব হয়ে যায়-খাওয়া দাওয়া, কথা বলা বন্ধ করে দেয়, মাঠে আসা বন্ধ করে দেয়। বাবা হিসেবে আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি। আমার মেয়েসহ অন্যান্য মেয়েদের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিই এর প্রতিবাদ করা দরকার। তাই নায্য বিচারের দাবিতে এই আবেদন করেছি।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা ক্রিকেট কোচ (বিসিবি) নির্বাহী সদস্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের ক্রিকেট কোচ আবু সামাদ মিঠুর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।

খেলার মাঠের সাথে জড়িত অনেক প্রবীণ ও নবীণ খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই অনেক প্রমিলা ক্রিকেটারদের সাথে যৌন হয়রানি অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। শুধু মিঠু নয়, আরও দুজন রয়েছেন। যৌন হয়রানির শিকার মেয়েরা লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে অভিযোগ করতে সাহস পায় না বলেই লম্পটরা এমন খারাপ কাজ করার সাহস পাচ্ছে। তারা তদন্তসাপেক্ষে দোষী ক্রিকেট কোচসহ জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/এসএএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :