মশার কাছে আত্মসমর্পণ ডিএনসিসির মেয়রের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০১৭, ২৩:৫৫

মশা নিধনের জন্য কোটি ঢাকার বাজেট বরাদ্দ রাখার পরও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার মশার উৎপাত বন্ধের ব্যর্থতার দায় মশা জন্মানোর সম্ভাব্য এলাকার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক।

বুধবার গুলশান-২ এর উত্তর সিটির নতুন ভবনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে চিকুনগুনিয়া জীবাণুর বাহক এডিস মশা ও মশার উপদ্রব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দেন। মেয়রের মতে, পর্যাপ্ত বাজেট, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও বাহ্যিক কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে শহরের মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

মেয়র বলেন, ‘মশার উৎপাত বন্ধে সিটি কর্পোরেশনে প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। তবুও কোনো কাজে আসছে না। এ জন্য নগরবাসীর কাছে আমি দুঃখিত। আমরা চিকুনগুনিয়ার জন্যও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’

মশা নিয়ন্ত্রণে কচুরিপানা, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, লেকসহ বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার করছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘কিন্তু আমাদের এলাকার বাইরের অনেক জায়গার জলাশয়ে মশা জন্মাচ্ছে, যেখানে আমরা মশার ওষুধ দিতে পারছি না। নগরের ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলার কারণে নগরের দূষণ বাড়ছে, সেখানেও মশার বিস্তার ঘটছে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘টাকা বরাদ্দ আছে, কাজ করছি। কিন্তু আমাদের আওতার বাইরের এলাকা, মামলার কারণে বসুন্ধরা এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট ও উত্তরার কিছু এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় মশার ওষুধ দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সেখানে চাইলেও ওষুধ দিতে পারি না। আর মশার কোনো এলাকা নেই। তারা জন্ম নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে আমাদের বরাদ্দ থাকার পরও অভিযানে আমরা সফল হতে পারছি না।’

ডিএনসিসির বাজেটে মশা নিধন খাতে বরাদ্দ বাড়ার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসির প্রথম বছরের বাজেটে মশা নিধনের জন্য ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা করা হয়। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, এবং বাকি ছয় কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়নি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মশা নিধনের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

বরাদ্দ টাকা কেন খরচ হচ্ছে না জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘এই প্রশ্ন আমারও। বরাদ্দ রাখা টাকা কেন খরচ হলো না।’ বিষয়টি সম্পর্কে সংস্থার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএমএম সালেহ ভূঁইয়ার কাছে মেয়র নিজে প্রশ্ন করেন। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জবাবে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের টাকা খরচের প্রয়োজন হয়নি। যে কারণে অতিরিক্ত টাকা খরচ করা হয়নি। আমাদের সব ইকুইপমেন্ট ছিল। পর্যাপ্ত ওষুধ ছিল।’

সালেহ ভূঁইয়া বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ দেখা গেছে, যা বাংলাদেশেও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ঢাকা শহরে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে মশার ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না। যে কারণে মশা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

গত বছর মশা নিধনের বরাদ্দ থেকে ৭ কোটি টাকার মতো রয়ে গেছে। সেই টাকা নতুন বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে মশার বিস্তার রোধে ডিএনসিসির জন্য আধুনিক যন্ত্র ক্রয় ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে ব্যয় করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘ফুটপাত বাড়িয়ে এখন ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির ১৬ হাজার ৩৩৮টি গাছ লাগানো হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ইউটার্ণ করা হবে।’

উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ২ হাজার ৩৮৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার বাজেট (প্রস্তাবিত) ঘোষণা করেছেন ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক।

এ অর্থবছরে নিজস্ব উৎস থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪৮৫ কোটি টাকা।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে ডিএনসিসির প্রায় ৬০ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১ হাজার ২৩১ কোটি ২৬ লাখও তুলে ধরা হয়।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হলো সরকারি অনুদান থেকে ১০০ কোটি, সরকারি বিশেষ অনুদান ৫০ ক‌োটি, অন্যান্য আয় ১১ কোটি ৫০ লাখ, সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প ১ হাজার ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ২৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ব্যয় ধরা হয়েছে। ব্যয়ের অন্যতম খাতগুলো হলো রাজস্ব ব্যয় ৪৩৪ কোটি ৭০ লাখ, অন্যান্য ব্যয় ৯ কোটি ৫০ লাখ,উন্নয়ন ব্যয় (সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প) ১ হাজার ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা,উন্নয়ন ব্যয় (নিজস্ব উৎস, সরকারি থোক) ৭৯১ ক‌োটি ১০ লাখ। উপমোট উন্নয়ন ব্যয় ১ হাজার ৮২০ কোটি ৭৫ লাখ এবং সমাপনী স্থিতি ১১৯ কোটি লাখ।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ডিএনসিসির বাজার সালামি ১২০ কোটি টাকা, বাজার ভাড়া ১০ কোটি টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ৬০ কোটি টাকা, রিক্সা লইসেন্স ফি ৩০ লাখ টাকা, প্রমোদ কর দুই কোটি টাকা, সম্পত্তি হস্তান্তর কর ১৮০ কোটি টাকা, নগর ট্যাক্স এক কোটি টাকা, ক্ষতিপূরণ (অকট্রয়) দুই কোটি টাকা, বিজ্ঞাপন ছয় কোটি টাকা, বাস ট্রাক টার্মিনাল ১০ কোটি টাকা, গরুর হাট ২১ কোটি টাকা, ইজারা (টয়লেট, ঘাট) ৫০ লাখ টাকা, পুরাতন অকেজো মালামাল বিক্রি ২৫ লাখ টাকা, জবাইখানা ইজারা ৪০ লাখ, সড়ক খনন ফি ৫০ কোটি, ঠিকাদার তালিকাভূক্তি ফি ১০ লাখ টাকা, যন্ত্রপাতি ভাড়া ১০ লাখ, সিডিউল ও অন্যান্য ফরম বিক্রি ৫০ লাখ, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দুই কোটি, কবরস্থান, শ্মশানঘাট চার কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিল আদায় ১২ কোটি টাকা, বিবাহ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পাঁচ কোটি টাকা, অন্যান্য ভাড়া দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে চার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এছাড়া অপ্রয়োজনীয়/অব্যবহার্য সম্পদ বিক্রিয় ও অন্যান্য পাঁচ কোটি টাকা, ঋণ গ্রহণ এক কোটি টাকা, ঋণ আদায় ৫০ লাখ এবং বিলুপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্থিতি থেকে প্রাপ্ত পাঁচ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।

বাজেটের ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হচ্ছে- বেতন, পারিশ্রমিক ও ভাতা ১৭৫ কোটি টাকা, যা গতবছর ছিল ১৩৫ কোটি টাকা। জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুৎখাতে ৫৬ কোটি টাকা, নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ৬০ কোটি টাকা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মশক নিয়ন্ত্রণে ২০ কোটি টাকা।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/এএকে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :