আম রপ্তানিতে কড়াকড়ি, ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাষিরা

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ২২ জুন ২০১৭, ১১:৫৪ | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০১৭, ০৮:১৯

মান নিয়ে কড়াকড়ির কারণে এবার রাজশাহী থেকে ফ্রুট ব্যাগিং করা আম রপ্তানি হচ্ছে না বললেই চলে। আর এখন পর্যন্ত কোনো আম বিদেশ যায়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও। এসব আম উৎপাদনে খরচ বেশি হলেও সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে এই দুই জেলায় চাষিদের কমপক্ষে ৪০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরমধ্যে শুধু রাজশাহীর চাষিরা লোকসান গুণবেন ১০ কোটি টাকা। বাকি ৩০ কোটি টাকা ক্ষতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিদের। চাষিরা বলছেন, রপ্তানির আগে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপে ভেস্তে যেতে বসেছে তাদের স্বপ্ন। আর রপ্তানিকারকরা বলছেন ‘অযৌক্তিক’ কড়াকড়ির কারণে কপাল পুড়তে বসেছে চাষিদের।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের হিসাবে, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এ অঞ্চলের ৫৮ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমির আম বাগানে ছয় লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিকটন আম উৎপাদন হয়েছে। এ বছরে বাগানের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। ফলে উৎপাদনও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর মধ্যে এ বছর রাজশাহীর ১০০ জন চাষি ১০ লাখ আম ফ্রুটব্যাগিং করেছেন। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৯১ জন চাষি ফ্রুটব্যাগিং করেছেন তিন কোটি আম। এ আমের মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, ফজলি ও আশ্বিনা। এ থেকে উৎপাদন হবে রপ্তানিযোগ্য প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিকটন আম।

এ এলাকার আম রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং। গত বছর রাজশাহী থেকে ৩০ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি ও সুইডেনে। তাই এবার বেড়েছে ফ্রুট ব্যাগিং করা চাষির সংখ্যা। প্রতিটি আম ফ্রুট ব্যাগিং করতে খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা।

আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা চাষিরা জানান, এ বছর হিমসাগর আম রপ্তানি শুরুর কথা ছিলো ২৮ মে থেকে। কিন্তু নানান জটিলতায় এটি পিছিয়ে পড়ে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রাম থেকে সর্বপ্রথম ৬৫০ কেজি আম রপ্তানি হয় গত ৮ জুন। এরপর ১১ জুন রাজশাহী নগরী থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি আম রপ্তানি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে আম রপ্তানি করা হচ্ছে খুব কম পরিমাণে।

ফলে পেকে গিয়ে ব্যাগের মধ্যেই থাকছে অধিকাংশ আম। অবশিষ্ট যা থাকছে বাছাই করার সময় তার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রপ্তানির অযোগ্য ঘোষণা করছে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং। স্থানীয় বাজারেও বাতিল করে দেয়া আমগুলোর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এ অবস্থায় তারা পড়েছেন চরম বেকায়দায়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কোনো আম রপ্তানিই শুরু হয়নি। ফলে সেখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। স্থানীয় চাষিরা জানিয়েছেন, কড়াকড়ির কারণে রপ্তানিকারকেরা তাদের আম নিচ্ছেন না। কয়েকজন চাষি নিজ উদ্যোগে রপ্তানির চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন। এখন ব্যাগে পেকে যাওয়া আম ভেঙে স্থানীয় বাজারে তুলছেন চাষিরা।

কিন্তু ব্যাগিং করা আমের রঙ সাদা ও হলুদের সংমিশ্রণ হওয়ায় ক্রেতারা মনে করছেন, এসব আম কেমিকেল দিয়ে পাকানো। এ কারণে ক্রেতারা এ আম কিনতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ভালো দামও পাচ্ছেন না চাষিরা। এতে খরচ বেশি করে উন্নতমানের আম উৎপাদন করেও বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

এ অঞ্চলের আম রপ্তানির উদ্দেশে বাণিজ্যিক আম চাষিরা গড়ে তুলেছেন রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটি। সংগঠনের সভাপতি আনোয়ারুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফ্রুটব্যাগের ভেতর আম থাকে ৪০ থেকে ৫০ দিন। এ আমে পোকামাকড় প্রবেশের সুযোগ নেই। আঘাতও থাকে না। পুরোপুরি বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত এ আম খুব আকর্ষণীয়। অথচ উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং অযৌক্তিভাবে এসব আমের অধিকাংশই রপ্তানির অযোগ্য বলে বাতিল করছে।’

এই ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের চেয়ে কেজিতে পাঁচ টাকা কমিয়ে এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। কিন্তু এগুলো রপ্তানি ব্যাহত হলে রাজশাহীতে ১০ কোটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে অন্তত ৩০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরা। ফলে অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে রাস্তায় নামার কথাও ভাবছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারধ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর হুদা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর আম রপ্তানি শুরু হয়নি। অথচ ২৮ মে থেকে হিমসাগর রপ্তানির কথা ছিল। এছাড়া ৭ থেকে ১০ জুনের মধ্যে ল্যাংড়া ও ২০ জুন থেকে ফজলি আম রপ্তানির কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত রপ্তনিকারকদের কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’

এই কর্মকর্তা বলেন, তারা জেনেছেন, কিছু রপ্তানিকারক উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ে আম নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে বাদ পড়ে যাচ্ছে অর্ধেকের বেশি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। এর রেশ গিয়ে পড়ছে চাষিদের ওপর। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে আগামী মৌসুমের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের উপ-পরিচালক (রপ্তানি) মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, তারা কেবল আমের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করছেন। আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতেই এ কড়াকড়ি। এ বছর দেশ থেকে এক হাজার মেট্রিকটন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দেরিতে শুরু হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে তিনি আশাবাদী বলে জানান।

মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন খান বলেন, কৃষি দপ্তর নয়, ফ্রুটব্যাগ বিক্রেতারাই চাষিদের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ নিয়ে চাষিদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের কোনো চুক্তিও নেই। আমের দাম নির্ধারণেও কৃষি বিভাগের সম্পৃক্ততা নেই। এটি করেন চাষি ও রপ্তানিকারকরা। এবার রপ্তানি ব্যাহত হলেও আগামীতে উৎপাদন বাড়বে বলে দাবি এ কর্মকর্তার।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/আরআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :