অটোরিকশার জটে নাকাল রাজশাহীবাসী

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০১৭, ১২:০৯

রাজশাহী শহরে এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। ঈদকে ঘিরে এখন গ্রাম থেকেও বিপুলসংখ্যক অটোরিকশা ঢুকছে শহরে। আর এতেই দেখা দিয়েছে দুঃসহ অটোজট। অটোজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। ফলে ঈদের বাজারে এমন দুর্বিসহ যানজটে নাকাল নগরবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর সাহেববাজার ও নিউ মার্কেট এলাকাসহ ব্যস্ততম রাস্তাঘাট অটোরিকশার চাপে প্রায় অচল হয়ে পড়ছে। শহরের বড় সড়ক ছেড়ে অটোরিকশা চলাচল করছে পাড়া-মহল্লার সরু রাস্তা এবং অলিগলিতেও। এতে যানজট গিয়ে পড়ছে বাসাবাড়ির সামনেও। ফলে নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে পুলিশের নেয়া উদ্যোগও সফল হচ্ছে না।

নগরবাসী বলছেন, আগে পায়েচালিত রিকশা চলাচলে শহরে যানজট ছিল না। পরবর্তীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হওয়ায় বাড়তে শুরু করে যানজট। এখন আবার নতুন করে দুই আসন বিশিষ্ট পায়েচালিত রিকশায় ব্যাটারিচালিত ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন শুরু হওয়ায় নগরীতে নতুন করে যানজটের উপদ্রব সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে সিটি করপোরেশনে নিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ৮ হাজার ৮৬২টি। এছাড়া দুই আসনবিশিষ্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে ৫ হাজার ৪০০টি। তবে বাস্তবে এরও তিন-চারগুণ বেশি রিকশা-অটোরিকশা চলাচল করছে নগরীতে। এছাড়া সিএনজিচালিত হিউম্যান হলার চলছে আরও প্রায় দেড় হাজার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে চলাচলকারী রিকশা, অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার দাঁড়ানোর জন্য কোর্ট ও স্টেডিয়াম এলাকায় রাস্তার ওপর দুটি স্ট্যান্ড আছে। তবে শহরের আর কোনোস্থানে স্ট্যান্ড নেই। ফলে ট্রাফিক আইন অমান্য করে যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা এবং পার্কিং করছে যানবাহনগুলো। আর এতেই দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠায় নগরীর জিরোপয়েন্ট, স্টেশন রোড ও রেলগেট সড়কে গভীর রাত পর্যন্ত যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে। দুপুর ১২টার দিকে সহজেই কেউ স্টেশন রোড হয়ে পূর্বমুখী রাস্তা দিয়ে নিউমার্কেট, অলকার মোড় হয়ে রানীবাজার যেতে পারছেন না। বিশেষ করে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, মনিচত্বর ও লক্ষ্মীপুর মোড়ে অসহনীয় অটোজট দেখা দিচ্ছে।

নগরীর শিরোইল কলোনির বাসিন্দা আসগর আলী বলেন, জিরোপয়েন্ট থেকে মনিচত্বর পর্যন্ত দুই মিনিটের পথ পেরুতেই সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এসব এলাকায় হাঁটার কোনো জো নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা যাতায়াত না করলে যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে তিনি মনে করেন।

সাহেববাজার এলাকার কসমেটিকস ব্যবসায়ী রাসেল হক বলেন, দোকানের সামনে সব সময় অটোর জট। ক্রেতা আসার সুযোগ নেই। ব্যবসা উঠছে লাটে। অটোর জটে মার্কেটে আসা ক্রেতারাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন। অনুমোদনের চেয়েও বেশি অটোরিকশা চলাচল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) গত প্রায় এক বছর ধরে নতুন করে কোনো অটোরিকশার লাইসেন্স দিচ্ছে না। তারপরেও নগরীর অন্তত ১৫টি শো-রুম থেকে প্রতিদিনই অটোরিকশা বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, সেগুলো শহরের বাইরের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে অভিযোগ আছে, নতুন অটোরিকশাও ঢুকছে শহরে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, লাইসেন্স না থাকলেই আমরা অটোরিকশা জব্দ করি। তারপর সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে এনে রাখি। পরবর্তী সময়ে অটোচালকরা সিটি করপোরেশন থেকে প্রত্যয়নপত্র কিংবা নিবন্ধনের কাগজপত্র এনে দিলে অটোরিকশাগুলো ছেড়ে দেয়া হয়।

ইফতেখায়ের আলম জানান, ঈদকে ঘিরে নগরীর অটোজট কমাতে ট্রাফিক জনবল ২০ জন বৃদ্ধি করা হয়েছে। মার্কেটগুলোর সামনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানকার পুলিশ সদস্যরাও যানজট নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি সাহেববাজার এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ৩২ জন সদস্য কাজ করছেন। তারা সবাই মিলে চেষ্টা করছেন যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/ব্যুরো প্রধান/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :