৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

হ্যাটট্রিকের চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের সামনে

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ০৮:২৬ | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০১৭, ০৮:২৬

দল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক অর্জনেই জড়িয়ে আছে দলটির নাম। কিন্তু সে তুলনায় ক্ষমতায় কম সময়েই ছিল দলটি। এবার প্রথমবারের মতো টানা দুই দফায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই আজ শুক্রবার ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, ক্ষমতার রাজনীতি করতে তাদের জন্ম হয়নি। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম সামনে রেখেই ক্ষমতায় থাকা দল থেকে বের হয়ে এসেছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতারা। সেই থেকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামই প্রধান লক্ষ্য আওয়ামী লীগের।

সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধাচরণ করায় বারবার অত্যাচার, নির্যাতন, ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে দলটিকে। বর্তমান পরিস্থিতিও তার বাইরে নয় বলেই মনে করেন নেতারা।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ যখন এ দেশের মানুষের অধিকার, মর্যাদা আর উন্নয়নের বিষয়টি উপেক্ষা করে পশ্চিম পাকিস্তানিদের তল্পিবাহক হয়ে গিয়েছিল, তখন এই দল থেকে বের হয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠা লাভ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে সব শ্রেণি, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবার দল হয়ে নাম পাল্টে আওয়ামী লীগ হয় ১৯৫৫ সালে।

দল গঠনের আগেই আওয়ামী লীগের উদ্যোক্তারা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নিজেদের জড়িয়েছেন। নিশ্চিত করেছেন বাংলা ভাষার মর্যাদা। পাঁচ বছরের মাথায় নির্বাচনে গিয়ে সে সময়ের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে বলতে গেলে মাটিতে মিশিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট। এরপর মুসলিম লীগ আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

ইতিহাসবিদরা বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানিদের চক্রান্তে ক্ষমতাচ্যুত হলেও বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব থাকে আওয়ামী লীগের হাতেই। পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসক আইয়ুব খান আর ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে গেছে দলটি। এর মধ্যে উপস্থাপন করেছে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে স্বীকৃত ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে নিশ্চিত করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ।

রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পর এবার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের কথা বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বলছেন, বাঙালি জাতির অন্য সব অর্জনের মত দারিদ্র্যমুক্তি, অর্থনৈতিক উন্নয়নও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে এবং হবেও। গত আট বছরের শাসনামলে এই লড়াইটাই করেছে দলটি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)তথ্যানুযায়ী ২০১০ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার সাড়ে ছিল ৩১ শতাংশ। জাতীয় সংসদে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দেয়া তথ্যানুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের ২২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২০ সালের মধ্যে তা সাড়ে ১৮ দশমিকে নেমে আসবে বলেও তিনি জানান।

১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে শিক্ষার হার (সাক্ষরতা) ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১১ সালে এটি ছিল ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় এক হাজার ৬০২ ডলার। ২০০৬ সালে যা ছিলে ৫৬০ ডলার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন মাথাপিছু আয় ছিলে ৭১০ ডলার।

বিবিএসেরর হিসাব মতে, দেশের ৮১ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ২০১২ সালে এ পরিমাণ ছিল ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭১ দশমিক ৬ বছর। ২০০৯ সালে যা ছিল ৬৭ দশমিক ২ বছর।

এরই মধ্যে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন কর্মসূচি এমডিজির বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করেছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। এখন চলছে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বা এসডিজি বাস্তবায়নের কাজ। এরই মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকেই পাকিস্তান এখন অনেক পেছনে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের শেষ বা ২০১৯ সালের শুরুর দিকে নির্বাচনে জিতে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে (৫০ বছর পূর্তি) মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার চ্যালেঞ্জই এখন আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানুষের অধিকার আর কল্যাণের জন্য কাজ করেছে দলটি। স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশর যত অর্জন আছে সব কিছুই হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। এবার আমাদের প্রধান লক্ষ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন। প্রাথমিকভাবে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ করতে চাই আমরা। আর আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই মূল তৎপরতা

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামীতে আমাদের চ্যালেঞ্জ দুটি। একটা হলো, টানা দুই মেয়াদে আমরা ক্ষমতায় থাকায় দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। আগামীতে এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার। দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাওয়া এর জন্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য দলকে আরও সুসংগঠিত করা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো আগামী নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী আমরা জাতীয় নির্বাচনে যাব। ক্ষমতায় আসার একমাত্র পথ হলো জনগণের রায়। অন্য কোনো পথ যেন না থাকে সেই জন্যই আমরা কাজ করব।

টানা তৃতীয় দফা ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে বিএনপি ছাড়াও ভাবতে হচ্ছে দলের ভেতরের কোন্দল, বিশৃঙ্খলা নিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা দলের ভেতর এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে, যেখানে দলের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন একাংশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমনটা হলে পরিণতি কী হবে, সেটা নিয়ে সন্দিহান নেতা-কর্মীরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, সরকারি দল যখন বড় হয়ে যায়, তখন তার মধ্যে নানা বিরোধ দেখা যায়, তৃণমূলের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতাও হচ্ছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়বে। আর এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারলে বিপদের মুখোমুখি হতে হবে আওয়ামী লীগকেই।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/টিএ/ডব্লিউবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :