ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী, ঘটছে দুর্ঘটনা

আতাউর রহমান সানী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ১৭:৪০ | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০১৭, ১৭:৩৬

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলছে অনেক দিন ধরে। নির্মাণকাজ চলাকালে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। এছাড়া শ্রমিকরাও কাজ করছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কায় রয়েছে যানবাহন, পথচারী ও শ্রমিকরা।

গত এক সপ্তাহে ফ্লাইওভারের নিচে গাড়িচাপায় মারা গেছেন দুইজন। আহত হয়েছেন পাঁচজন। কয়েক দিন আগে আলতাফ নামে এক রডমিস্ত্রি মাটিতে পড়ে গুরুতর আহত হন। এ ধরনের দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভুলতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। ফ্লাইওভারের কাজ চলার কারণে এখানে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। উপরে শ্রমিকরা কাজ করছেন আর নিচে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি, রাস্তা পার হচ্ছে স্থানীয় জনতা।

নির্মাণ শ্রমিকদের হেলমেট, বেল্ট, জুতাসহ সরঞ্জামাদি ব্যবহারের কথা থাকলেও এগুলো কোনোটিই ব্যবহার করা হচ্ছে না। প্রকল্প এলাকা ধুলা-বালিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ধুলা-বালি রোধে নিয়মিত পানি দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয় না। এতে পথচারী ও স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে সমস্যায়।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বেশ কয়েকবার ভুলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে দ্রুতগতিতে কাজ সম্পন্ন করতে চাপ দিয়েয়েছেন। এতে স্থানীয়রা মন্ত্রীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্যও জোর দাবি জানান তারা। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারলেন বিশিষ্ট ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোং, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও এএম বিল্ডার্স। চারলেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ২৩৮ কিলোমিটার। মূল ফ্লাইওভারের নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা, সড়ক নির্মাণে ব্যয় ১১২ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় হবে সাড়ে সাত কোটি টাকা।

ভুলতা ফ্লাইওভারটির কাজ দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ কাজ বাকি রয়ে গেছে। ফ্লাইওভারের কাজ যথাসময়ে শেষ হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ।

ফ্লাইওভারের কাজ চলায় প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এই পথের দূরপাল্লার যাত্রীদের। এখানে প্রায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। এই অবস্থায় ফ্লাইওভারটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভুলতা ফ্লাইওভারে পাইলিং, ড্রেন, অ্যাপার্টম্যান্ট, রাস্তা সব মিলিয়ে কয়েকশ শ্রমিক কাজ করছেন। ভারী ও যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার সময় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। ফ্লাইওভারের শ্রমিদেরকে কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করতে দেখা গেছে। অনেক সময় শ্রমিকদের অনেক উঁচুতে উঠেও কাজ করতে হয়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে শ্রমিকদের মধ্যে নেই সচেতনতা। আর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আছে উদাসীনতার অভিযোগ।

ভুলতার পাশেই রয়েছে গাউছিয়া মার্কেট। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন কেনাকাটা করতে। ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হয়।

হাসান নামে এক গাড়িচালক শঙ্কার কথা জানিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া ফ্লাইওভারে কাজ চলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই পথ ছাড়া আমাদের আর যাতায়াতের কোনো বিকল্পও নেই। তাই বাধ্য হয়েই যেতে হয়।’

সুজন নামে এক পথচারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারের কাজ চলাকালে বেষ্টনী দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমাদেরকে চলাচল করতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রে অব্যশই চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া নির্মাণ শ্রমিকদের অব্যশই হেলমেট, বেল্ট, জুতাসহ ইত্যাদি সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।’

এ ব্যাপারে জানতে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :