লক্ষ্মীপুর-১: আলোচনায় শাহাদাত হোসেন সেলিম

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ জুন ২০১৭, ১৪:১৩ | প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০১৭, ০৮:৪৫

নানা উপলক্ষে রাজনৈতিক মাঠে আসলে এক ধরনের নির্বাচনী হাওয়াই বইছে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নেতারা এলাকায় রীতিমতো গণসংযোগ করছেন। রমজান মাসজুড়ে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনেকে মাঠ গরমের চেষ্টা করছেন। সামনে ঈদ-পুনর্মিলনীর মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয়ার চিন্তা করছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেউ কেউ।

শোনা যাচ্ছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের শরিক দল এলডিপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এটা নিশ্চিত। যে কারণে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে কাজ করছেন তিনি। নিয়মিত এলাকায় যাওয়া-আসা শুরু করছেন। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখছেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে ২০ দল অংশ না নেয়ায় ওই আসনের এমপি ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল। এর আগে এখানে এমপি ছিলেন বিএনপির রামগঞ্জ থানার সভাপতি নাজিম উদ্দিন।

এর আগে ওই আসনে বিএনপি থেকে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জিয়উল হক গত বছর মারা গেছেন।

এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শুধু নাজিম উদ্দিনের নাম শোনা গেলেও এখন আলোচনায় আসছেন ছাত্রদল ও দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতি করা শাহাদাত হোসেন সেলিম। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন- এমন পরিকল্পনা থেকে তিনি আগেভাবেই মাঠে নেমে গেছেন।

সাংবিধানিকভাবে দেশে আগামী নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীও এই আসন থেকে আগামী নির্বাচনে লড়তে আগ্রহী। ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন তিনি। গত আন্দোলনের সময় রাজধানীতে তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়। সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন এই তরুণ নেতা।

ঢাকাটাইমসকে ইয়াসিন আলী বলেন, ‘দল থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হলে আশা করি মনোনয়ন পাব। ঢাকায় রাজনীতি করলেও এলাকার লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। শতাধিক মামলা নিয়ে রাজনীতি করছি। দলের মূল্যায়ন পাব বলে বিশ্বাস রাখি।’

সত্তরের দশকে চট্টগ্রামে বাম সংগঠন জাতীয় ছাত্রদলের চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি হিসেবে কাজ করেন শাহাদাত হোসেন সেলিম। পরে চট্টগ্রাম মহনগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান তিনি। পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক করা হয় তাকে।

সেলিম এরপর যুক্ত হন বিএনপির রাজনীতিতে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর‌্যন্ত প্রায় এক যুগ চট্টগ্রাম বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সেলিম। ছয়বছরের মতো ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক।

২০০০ সালে রামগঞ্জের স্থানীয় বিএনপির কোন্দলে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় সেলিমকে। এদিকে ২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বের হয়ে স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপি গঠিত হয়। এলডিপি গঠনের পেছনে শাহাদাত হোসেন সেলিমের মুখ্য ভুমিকা ছিল বলে জানা যায়।

এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে ২০০৭ সালে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয় সেলিমকে। এখনো এই পদেই আছেন।

রাজনীতির বাইরে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য। ১৯৯৪ সালে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি।

শাহাদাত হোসেন সেলিমকে রাজনীতির বাইরেও নিয়মিত টেলিভিশন টকশোতেও দেখা যায়।

২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে এলডিপির জোটভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সেলিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলেও জানা গেছে। এলডিপির রাজনীতি করলেও রামগঞ্জের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ সেলিমকে নির্বাচনে প্রার্থী করার পক্ষে। অনেকে নিয়মিত তার সঙ্গে যোগাযোগও করছেন।

তবে বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত এই আসন পুনরুদ্ধার করতে সামনের নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী দেয়ার দাবি এখানকার নেতাকর্মীদের।

রামগঞ্জের থানা বিএনপির প্রবীণ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রামগঞ্জ বিএনপির ঘাঁটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপির প্রার্থীরাই বেশি জয়ী হয়েছে এখানে। কিন্তু যারা এমপি হয়েছে তারা দলকে সংগঠিত করতে পারেননি। এটাই সমস্যা। এ কারণে কোনো নতুন মুখকে দল থেকে মনোনয়ন দিলে আমাদের জনগণের কাছে পৌঁছাতে সহজ হবে।’

সাবেক এমপির নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কেমন- এমন প্রশ্নে ওই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘বিএনপি থেকে নির্বাচিত হলেও তিনি আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন। কেন্দ্রে এমন অভিযোগও দেয়া হয়েছে। যদিও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর সেলিমও বিএনপির লোক ছিলেন। এখনো নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে তাকে জোট থেকে মনোনয়ন দিলে ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশা করি।’

একই আশা শাহাদাত হোসেন সেলিমেরও। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের মানুষের সঙ্গে অনেক আগে থেকে সম্পৃক্ত আমি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা সামাজিক সংগঠনে অবদান রাখার। জোট থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মনোনয়ন পাবো নিশ্চিত।’

সেলিম বলেন, ‘একটা বিষয় অনেকটাই প্রকাশ্য যে গত নির্বাচনে সরকারের পক্ষ থেকে এলডিপিকে নির্বাচনে নেয়ার জন্য অনেক প্রলোভন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জোটের স্বার্থে সেই নির্বাচন বর্জন করেছে এলডিপি। তাই আশা করি বিএনপিও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।’

রামগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন পলাশ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাবেক এমপি, শাহাদাত হোসেন সেলিম ও ইয়াসিন আলী তিনজনেরই এলাকায় পরিচিতি আছে। কিন্তু কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সেটা দল ও জোটের শীর্ষ পর‌্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে বিজয়ী করা সম্ভব। কারণ লক্ষ্মীপুর বিএনপির ঘাঁটি।’

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :