‘ইফতার রাজনীতি’তে বিভক্ত ফরিদপুর বিএনপি

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০১৭, ০৮:৫৭

দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুরে বিএনপির রাজনীতি দুটি পক্ষ সক্রিয়। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভাকে কেন্দ্র করে সেই দুই পক্ষের বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়েছে। দুই পক্ষের নেতা-কর্মী ও তাদের সমর্থকেরা পৃথকভাবে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বক্তব্য দিয়েছেন পরস্পরের বিরুদ্ধে।

জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, গত ১২ জুন স্থানীয় ময়েজউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফরিদপুর শহর ও সদর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর আসনের একাধিকবারের সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।

অন্যদিকে ‘ভিশন ২০৩০ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল’ শিরোনামে গত বুধবার শহরের অম্বিকা মেমোরিয়াল হলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজন করে আরেক ইফতার মাহফিলের। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু। তিনি বিএনপির সাবেক মহাসচিব ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে।

এছাড়া ফরিদপুর-১ আসনে সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মো. আবু জাফর গত ৯ জুন বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির আয়োজনে ইফতার মাহফিল করে শহরের হারুন কমপ্লেক্সে। এই অনুষ্ঠানে শাহ জাফরের সমর্থকেরা উপস্থিত থাকলেও থাকেনি অপর নেতা খন্দকার নাছিরুল ইসলামে অনুসারীরা।

অপরদিকে এই আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভ-সভাপতি খন্দকার নাছিরুল ইসলামের আয়োজনে সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার ইফতার মাহফিল হয়। সেখানে প্রধান অতিথি করা হয় কেন্দ্র্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা এ বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, দীর্ঘ দিনের বিভক্ত জেলা বিএনপির একটি ধারার নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান। অপর অংশটির নেতৃত্ব দেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। জেলা কমিটিতে বরাবরই কামাল ইবনে ইউসুফ ও তাঁর অনুসারীরা ছিলেন কোণঠাসা। ২০০৭ সালের ২২ মার্চ ওবায়দুর রহমান মারা যান। এরপর তার অনুসারী জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা ওবায়দুর রহমানের গ্রুপের নেতৃত্বে আসেন।

জেলা বিএনপি এই দুই ধারায় বিভক্ত থাকায় দীর্ঘদিন দলের সম্মেলন হয়নি। গঠন করা যায়নি নতুন কমিটিও।

তবে সম্প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে দলের পদ বহাল রাখতে সরব হয়ে উঠেন উভয় গ্রুপের নেতারা। শুরু হয় নতুন মেরুকরণ।

বর্তমান সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া জেলা কমিটির সভাপতির পদ ধরে রাখতে পক্ষ ত্যাগ করে যোগ দেন চৌধুরী কামাল ইউসুফের সঙ্গে। গত মার্চে কামাল ইউসুফ জেলার সম্ভাব্য কমিটির একটি তালিকা জমা দেন তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে। সম্ভাব্য ওই কমিটিতে সভাপতি পদে জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক পদে (বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক) রশিদুল ইসলাম লিটন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এ কে কিবরিয়ার নাম প্রস্তাব করা হয়।

জেলা বিএনপির সূত্রে জানায়, ওই কমিটির নাম ফাঁস হয়ে গেলে কামাল ইউসুফের বিরোধী পক্ষে যোগ দেন বর্তমান দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোদাররেছ আলী। এ ছাড়া কামাল ইউসুফের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠজন জেলা যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেন খান পলাশও ওই পক্ষ ত্যাগ করেন।

গত ১২ জুনের ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় বক্তারা ভবিষ্যতে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্য কামাল ইউসুফকে নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানান। অন্যদিকে বুধবারের অনুষ্ঠানে শামা ওবায়েদের নেতৃত্বে দল গঠনের আহ্বান জানান উপস্থিত নেতাকর্মীরা। ১২ জুনের সভায় কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির যেসব নেতা বক্তব্য দেন, তাঁরা বুধবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফরিদপুরে আগামী আন্দোলন ও সংগ্রাম আমরা শামার নেতৃত্বেই করব, কোনো বেইমান মুনাফেক দলের সংস্কারপন্থি নেতার সাথে দলে আমরা থাকবো না।’

সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে বিভক্তি জোরদার প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফরিদপুর সদর আসনের সাবেক এমপি চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বলেন, ‘বিএনপির কোনো কোনো নেতার সঙ্গে আমার সমঝোতা হয়েছে, এ কথা সত্য। তবে আমি কমিটি নিয়ে রাজনীতি করি না।’ ভবিষ্যতে দলীয় নেতৃত্বে পরীক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিদের আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে ওবায়েদ কন্যা ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ সাহেব অনেক সিনিয়র, তাছাড়া তিনিতো দলের ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলে আমি সেই আন্দোলনে শরিক হবো। আমরা সবাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছায়াতলে আছি, তার নির্দেশেই আমি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পালন করে যাবো।’

ফরিদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল এ বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দলের ভেতরে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ কাজ করছে। কামাল সাহেব গত আট বছরের কোনো আন্দোলনে অংশ নেননি, এমনকি নেতাকর্মীদের খোঁজও নেননি। যে কারণে আজ তার নেতাকর্মীরা তার কাছে থেকে সরে আসছেন।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘চৌধুরী কামাল ইউসুফের এই পথচলা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী দিনের ভোটের ক্ষতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই বিভক্তি কামাল সাহেবকেই মিটাতে হবে। দলের নেতারা ঐক্যবদ্ধ না হলে দল আগামী নির্বাচনে কঠিন মাশুল দিতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :