ঈদের ছুটিতে মোটরসাইকেল ভ্রমণে যেতে চান?

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১১:২৫ | প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০১৭, ১০:১০

ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। শেকড়ে সন্ধানে ছুটে চলছে গ্রামের পানে। নগরের তরুণদের মধ্যেই অনেকেই মোটরসাইকেল চালান। তাদের কেউ কেউ হয়তো বাইকে চেপেই বাড়িতে ছুটছেন। এমন যারা আছেন তাদের জন্য ঢাকাটাইমসের অটোমোবাইল ডেস্কের পক্ষ থেকে কিছু পরার্মশ দেয়া হলো। এসব পরামর্শ মেনে চললে আপনার যাত্রা পথ হবে নিরাপদ ও আনন্দময়।

যাত্রা শুরুর সময়

খুব ভোরে যাত্রা শুরু করুন। সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ পরে যাত্রা শুরু করতে পারলে ভালো। ভোরে যানজট কম থাকে। আলো ফোটার আগেই শহর থেকে বেরিয়ে পড়ুন।

পোশাক-প্রস্তুতি

মোটরসাইকেল যাত্রায় পাতলা পোশাক নির্বাচন না করে কিছুটা মোটা পোশাক পরুন। ভালো হয় জিনসের প্যান্ট পরতে পারলে। সঙ্গে পরুন ফুল হাতার শার্ট। কব্জিতে পরুন গ্লাভস। পায়ে অবশ্যই কেডস পরুন। বুটও পরতে পারেন এতে ব্রেকিংয়ের সময় ভালো সার্পোট পাবেন। অবশ্যই হেলমেট পরবেন। ফুল ফেস হেলমেট হলে ভালো হয়।

আপনার পেছনে যদি আরোহী থাকে তবে তাকে হেলমেট পরতে দিন। উভয়েই চোখে গগলস পরুন। যদি আপনার কাছে এলবো ও নি-গার্ড থাকে তবে তা পরে নিন।

বাইকের আরোহী ও চালক উভয়ই রিফ্লেক্ট জ্যাকেট পরুন। মানিব্যাগ, ফোন পকেটে না রেখে ওয়েস্টব্যাগে ভরে নিন। আপনার মালপত্র পেছনের কেরিয়ারে শক্ত করে বাঁধুন। পিঠে কোনো ভাবেই ব্যাগ নেয়া যাবে না। সঙ্গে নিন পানির বোতল, স্যালাইন, ব্যথা নাশক ওষুধ, স্যাভলন, গজ ইত্যাদি। বিপদের সময় এগুলো কাজে দেবে। এছাড়াও এক সেট টিউব, প্লাগ, ব্রেক এবং ক্লাচের তার নিন। যেহেতু সময়টা বর্ষাকাল তাই রেইনকোর্ট সঙ্গে নিন।

ভ্রমণের আগে বাইকের যত্ন

যেদিন ভ্রমণে বের হবেন তার ঠিক আগের দিন ভালো একজন মেকানিক্স দিয়ে বাইকটি চেক আপ করান। ফুল সার্ভিসিং করান। কোনো ক্রুটি থাকলে তা সারিয়ে নিন।

বাইকের কোথায় আওয়াজ করে কীনা তা খতিয়ে দেখুন। এই শব্দ দীর্ঘভ্রমণে আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে। ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করে নিন। চাকার প্রেসার মাপুন।

সঙ্গে নিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভ্রমণকে ঝঞ্ঝাটহীন করতে প্রথমেই ব্যাগে ভরে নিন মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। আপনার ভোটার আইডি কার্ড ও পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখুন।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের এর মূল কপি, ট্যাক্স টোকেন এর মূল কপি, রেজিষ্টেশন কাগজ এর মূল কপি, ইন্সুরেন্স (মেয়াদ সহ) এর মূল কপি এবং রেজিষ্টেশন এর টাকা জমার

মূল কাগজ সঙ্গে রাখুন। এসব কাগজপত্র একটা পলিথিনে ভরে ওয়েস্ট ব্যাগে রাখুন।

যাত্রা শুরুর আগে

বাইক ভ্রমণ শুরু করার আগে প্রার্থনা করুন। এরপর দুই চাকার ব্রেক, ক্লাচ, হেড লাইট, হর্ন, ইন্ডিকেটর লাইট চেক করুন। ব্যাটারি চেক করুন। ব্যাটারিতে পানি আছে

কীনা তা পরখ করে দেখুন। চাকায় লিক আছে কীনা তাও ভালো ভাবে পরখ করুন। যাত্রার আগে ফুয়েল ট্যাঙ্ক ফুল করে নিন।

ভ্রমণের সময় সড়কের গতিবিধি মেনে বাইক চালান। কোনো অবস্থাতেই অন্য বাইকারদের সঙ্গে গতির প্রতিযোগিতায় নামবেন না। প্রয়োজন ছাড়া কোনো যানবাহনকেই ওভারটেক করবেন

না। যেখানে ওভারটেকিং নিষেধ লেখা আছে যেসব জায়গার ওভারটেকিং করবেন না। ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। হাইওয়েতে যখন উঠবেন তখন আপনার বাইকের টেইল লাইট, হেড লাইট কিংবা ফগ লাইট জ্বালিয়ে রাখবেন। ডানে বায়ে যেতে সংকেত ব্যবহার করবেন, অযথা সংকেত দিয়ে রাখবেন না বা ভুল সংকেত দেবেন না।

আপনি যতই দক্ষ চালক হোন না কেন, বাইকের গতি হাইওয়েতে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের বেশি গতি তুলবেন না। ব্রেক করার সময় একবারে ব্রেক লিভারে চাপ না দিয়ে কয়েকবারে ব্রেক লিভার চাপুন। একই সঙ্গে হাত ও পায়ের ব্রেক ধরুন। এতে ভালো পারফর্মেন্স পাবেন।

৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর পর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বিরতি দিবেন। এতে আপনার বাইকের বিশ্রাম হবে। আপনারও। এই বিরতিতে আপনি বুক ফুলিয়ে দম নিন। চোখে মুখে পানি ছেটান। রোজা না থাকলে পানি পান করুন।

সতর্কতা

বাইক ভ্রমণে নির্জন জায়গায় বিরতি দিবেন না। এতে আপনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে পারেন। জনবহুল বাজারে বিরতি নিন। বাইক থেকে দূরে যাবে না। প্রাকৃতিক

কাজ সারার প্রয়োজন পরলে হাইওয়ে পুলিশ ফাড়িতে বাইক রেখে কাজ সারুন। কিংবা পাবলিক টয়লেটও ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে বাইকের দিকে নজর রাখুন। পথে কোনো খাবার কিনবেন না,খাবেনও না। এতে আপনি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরতে পারেন। যা কেনার ভ্রমণ শুরুর আগে আপনার মহল্লার পরিচিত দোকান থেকে কিনুন।

পুলিশ কিংবা আইন শৃ্ঙ্খলা বাহিনীর পোষাক ছাড়া কেউ সিগনাল দিলে বাইক নিয়ে দাঁড়াবেন না।।

আপনি যদি সিঙ্গেল বাইকার হোন তাহলে আপনার বাইকের গতির সাথে মিলিয়ে যেকোন একটা চার চাকার গাড়ির পিছু পিছু যাবেন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সেটাকে

ওভারটেক করবেন না। এবং ঐ গাড়ির ডান চাকার দাগে দাগে চালাবেন। দুই চাকার মাঝ বরাবর চালাতে যাবেন না। এতে আপনার বিপদ হতে পারে। এবং ওই গাড়ি থেকে কমপক্ষে ১০০ হাত দূরুত্ব বজায় রাখবেন।

তিন চাকার পরিবহন (অটোরিক্সা, রিক্সা, সিএনজি, টেম্পু) থেকে ১০০০ হাত দূরে থাকবেন। কারণ এরাই হবে আপনার দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হতে পারে।

হাইওয়েতে কেউ লিফট চাইলে দাঁড়াবেন না। হাইওয়েতে কেউ বিপদগ্রস্থ হয়ে আপনার কাছে সাহায্য চাইলে ভুলেও দাড়াবেন না। কারণ ছিনতাইকারী চক্র বিপদগ্রস্থ মানুষ সেজে আপনাকে দাঁড় করিয়ে আপনার বাইক সহ মূল্যবান জিনিস পত্র নিয়ে যাবে। যদি সত্যি সত্যি বিপদগ্রস্থ হয়, তাহলে হাইওয়ে পুলিশকে জানাতে পারেন।

চলন্ত বাইকে লুকিং গ্লাস ফলো করবেন। মিনিটে চার থেকে পাঁচ বার লুকিং গ্লাস দেখুন। যেকোন গাড়ি আপনাকে ওভারটেক করার সময় অথবা আপনি ওভারটেক করতে গেলে কমপক্ষে ৫ হাত দূরত্ব বজায় রাখ‌বেন।

গান শুনতে শুনতে বাইক চালাবেন না।

একটি কার্ডে আপনার জরুরি প্রয়োজনীয় নম্বর লিখে আপনার কাছে রাখুন। ফোনের স্পিড ডায়ালে পরিচিতজনদের নম্বর রাখুন। যারা বিপদের সময় আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

কোনোক্রমেই রাতে হাইওয়েতে ভ্রমণ করবে না। পিচ্ছিল, কর্দমাক্ত ও নুড়ি বেছানো সড়কে সাবধানে বাইক চালান। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের সড়কে বাইক চালানো সময় সবাধানী হোন। বাইকে তিনজন আরোহন করা থেকে বিরত থাকুন। এটা আইনত দন্ডনীয়। ঈদের ছুটি শেষে সাবধানে ফিরে আসুন ব্যস্ত এই নগরীতে। আপনার যাত্রা শুভ হোক।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :