সহকারীর হাতে স্টিয়ারিং দেয়ার পর দুর্ঘটনায় ঝরল ১৬ প্রাণ

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
| আপডেট : ২৪ জুন ২০১৭, ১৮:০১ | প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০১৭, ১২:০২

রংপুরের পীরগঞ্জে যে ট্রাকটি উল্টে ১৬ জনের প্রাণ গেছে, সেটি চালকের বদলে তার সহকারী চালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। তারা বলছেন, চালকের ঘুম পাওয়ায় তিনি স্টিয়ারিং তার সহকারীর হাতে দিয়েছিলেন। যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলেও তিনি কানে তোলেননি।

এই দুর্ঘটনায় আহত ১৮ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের একজন শামীমা। ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, সিরাজগঞ্জ পার হয়ে ট্রাক চালক তার সহকারীকে গাড়ি চালাতে বলেন। এ সময় যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে চালক বলেন, ‘ও ভালো গাড়ি চালায় সমস্যা নাই।’

‘কিন্তু হেলপার (চালকের সহকারী) গাড়ি হাতে নেয়ার পর পরই উল্টাপাল্টা গাড়ি চালাচ্ছিল। আমরা বারবার নিষেধ করার পরও সে শুনেনি। পরে পীরগঞ্জ এসেই গাড়িটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই উল্টে যায়’- দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলের শামীমা।

শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে প্রায় তিন ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে আটটার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম ঢাকাটাইমসকে জানান, ঢাকা থেকে আসা সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে উঠে ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও দিনমজুররা রংপুরের দিকে আসছিল। ট্রাকটি কলাবাগান এলাকায় আসলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং ট্রাকটি রংপুর ঢাকা মহাসড়কে উল্টে যায়।

ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির সাজেদা বেগম ও তার বাবা সাইফুল ইসলাম ঘটনাটি দেখে প্রথম ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। আধা ঘন্টা পর শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা।

রবিবার সকালে মরদেহ নেয়া হয় পীরগঞ্জের বড়দরগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির চত্বরে। সেখানে নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে আসছিল। সাদা কফিনে মোড়ানো লাশের সারি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন স্বজনরা। কেউ হারিয়েছেন স্বামী-কন্যা। কেউ হারিয়েছেন পুত্র, আর কেউ হারিয়েছেন ভাতিজা, ভাতিজি, বোন জামাই ও ভাইকে।

আহতদের আরেকজন খাদিজা বেগম ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি, স্বামী আলমগীর ও তিন দেবরসহ একই পরিবারের পাঁচ জন ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তারা ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা থেকে তাদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

আহত সামিনা জানান, ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটাতে তারা গাজীপুর থেকে তারা ফিরছিলেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু ট্রাকের চালক যমুনা সেতু এলাকায় তিনবার ঘুরে বেশি যাত্রী তোলেন। অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণেই এমন অবস্থা।

রংপুর হাইওয়ে পুলিশের এএসপি ধীরেন্দ্র নাথ ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন, গাড়ি চালাচ্ছিল হেলপার। তিনি গাড়ি কন্ট্রোল করতে না পাড়ায় একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।ঘটনাস্থল থেকে ১১ জন এবং পীরগঞ্জ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও পাঁচ জন মারা যায়।’

আহতদের মধ্যে আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদেরকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সাত জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন, জমিলা বেগম (৫৫), ময়না বেগম (৩০), মমিনুল ইসলাম (৩৫), খলিল (২৫), দুলাল (৩০) ও মতিন (২৫)। এদের সবার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট ও চাপারহাট গ্রামে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন, আলমগীর (২৫), তার শ্যালক দেলোয়ার (২২), চাচাতো ভাই সাদ্দাম (২৩) ও মুনির (২২)। এদের সবার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট গ্রামে।

রংপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ সমাহিত করতে স্বজনদেরকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার করে টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৪জুন/আরআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :