দল সুযোগ দিলে সরাসরি নির্বাচন করব: শিরিন

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৭, ১৯:১৮ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০১৭, ০৮:৫৪

রাজনীতিতে একদম তৃণমূল থেকে ধাপে ধাপে জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছেন বিলকিস জাহান শিরিন। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। সভা-সেমিনার ও টিভি টক শোতে তার বাগ্মিতার জন্য বেশ আলোচিত তিনি।

বরিশালে জন্ম নেয়া বিলকিস জাহান শিরিন বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট নাসির আহমেদ ও মা জাহানারা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন বিলকিস। বরিশাল ল' কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন এলএলবি।

১৯৮৫ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে তার রাজনীতিতে প্রবেশ। ৮৫ সালে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রী সম্পাদিকা ও ৮৭ সালে এজিএস নির্বাচিত হন। বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি থেকে মহিলা জেলা দলে আসেন। পরি মহিলা দলের জেলা সভাপতি হন। ১৯৯৬-৯৭ সালে জেলা বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, ২০১১ সালে বরিশাল দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক থেকে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। নবম সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন বিলকিস জাহান শিরিন।

সম্প্রতি ঢাকাটাইমসের সঙ্গে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তার সাংগঠনিক তৎপরতা, নির্বাচন ভাবনা নিয়ে কথা বলেন বিএনপির এই নারীনেত্রী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার বোরহান উদ্দিন।

ঢাকাটাইমস: আপনার বর্তমান রাজনৈতিক ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাইছি।

শিরিন: রমজানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো ইফতার। একে কেন্দ্র করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর‌্যায়ে একাধিক ইফতারে অংশ নিয়েছি।

ঢাকাটাইমস: বিএনপির মতো বড় একটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে কাজ করছেন। কেমন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে?

শিরিন: চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে। সেগুলো মোকাবেলা করেই এগোতে হচ্ছে। বিএনপি ১০ বছরের মতো সরকার ও সংসদের বাইরে আছে। গোটা সময়টা সরকারের দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এখনো যাচ্ছি। এর মধ্য দিয়েও কাজ করছি। বরিশাল বিভাগের আট জেলায় ছুটে যাচ্ছি। অনেক উপজেলা পর‌্যায়েও নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। অনেক জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নেই। কমিটি করার চেষ্টা করেছি। বেশ কয়েক জায়গায় কমিটি করা হয়েছে। কোথাও আংশিক আছে, সেটা পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করছি।

ঢাকাটাইমস: সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এক বছরে নিজের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?

শিরিন: বরিশাল বিভাগে আট জেলার আমি সাংগঠনিক সম্পাদক। সব জেলাতেই গিয়েছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছি। তাদের সমস্যা জানার চেষ্টা করেছি, সমস্যার সমাধানও যথাসাধ্য করেছি। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে না পারলে কেন্দ্রকে অবহিত করে সমাধান করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ আন্দোলন-সংগ্রামে তারাই সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে।

আমি ১৫টি থানা সফর করেছি। দুটি উপজেলায় ব্যালটের মাধ্যমে কমিটি করেছি। এভাবে কমিটি হলে দলের জন্য ভালো হতো। কারণ এতে নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের মানুষটিকে নেতা নির্বাচিত করতে পারেন।

আসলে নিজের মূল্যায়ন আমি কীভাবে করব। এটা দল ও নেতাকর্মীরা করবেন। তবে যতটুকু চিন্তা করেছি তার থেকে বেশি কাজ করতে পেরেছি বলে মনে করি।

একটি বিষয় বুঝতে হবে, অনেক জায়গায় কমিটি করার সময় আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমি চেষ্টা করেছি যারা বহু ত্যাগ স্বীকার করে মাঠে ছিলেন তাদের হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিতে।

ঢাকাটাইমস: নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে?

শিরিন: নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী দলের নেতৃত্বে ৩৩ ভাগ নারী সদস্য রাখার কথা বলা আছে। এই প্রথম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দুজন নারী সদস্য রাখা হয়েছে। সেদিক থেকে বিএনপির এই সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী। আর বিএনপি নারীবান্ধব দল। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও দলে নারী কর্মীদের মূল্যায়ন করতেন। আমরা কাজ করতে গিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। আমরাও চেষ্টা করছি সততার সঙ্গে রাজনীতি করার। হয়তো সে কারণেই সহযোগিতা পাচ্ছি।

ঢাকাটাইমস: আপনি পদ পাওয়ার কারণে বরিশালের আরেক প্রভাবশালী নেতা মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে- এমন কথা শোনা যায়।

শিরিন: দলে দ্বন্দ্ব নেই। তবে প্রতিযোগিতা আছে। এটা সব রাজনৈতিক দলে আছে, থাকবে। অনেকে হয়তো ভেবে থাকেন আমিই নেতা থাকব, আর কেউ নেতা হতে পারবে না। কিন্তু সরোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তিনি আমার রাজনৈতিক বড় ভাই। দীর্ঘদিন ধরে আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করছি। এখানে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

ঢাকাটাইমস: সরকারি দলে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। বিএনপিতেও চলছে বলে খবর শোনা যাচ্ছে।

শিরিন: বিএনপি এমন একটি দল যাদের আলাদা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার দরকার নেই। আমাদের প্রার্থী সংকট নেই। আমাদের মূল দাবি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন্। সেই দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন করছি। দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাব।

ঢাকাটাইমস: প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাদের চান?

শিরিন: আসলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হিসাব বা চাহিদা হলো অবশ্যই যারা মাঠে থাকেন, সুখ-দুঃখে যাদের পাশে পান, এমন নেতারা প্রার্থী হোন। দলও মনোনয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনা করে থাকে। কিন্তু নির্বাচনের হিসাবে কাজ করে জয়-পরাজয় ভাবনা। প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে হিসাবে নিতে হয়। ফলে অনেক সময় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলের হিসাব মেলে না। তবে দল সব সময় ত্যাগী নেতাদের প্রার্থী করার চেষ্টা করে।

ঢাকাটাইমস: আপনি তো সংরক্ষিত আসনে এমপি ছিলেন। আগামী দিনে কি সরাসরি নির্বাচন করতে চান?

শিরিন: দল যেহেতু সরাসরি মাঠের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা থাকা স্বাভাবিক। আমার জন্ম বরিশালে। বরিশালের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ৩০ বছরের। দল সুযোগ দিলে সরাসরি নির্বাচন করতে চাই।

ঢাকাটাইমস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শিরিন: ঢাকাটাইসমকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :