সান্তনা দেয়ার লোকও যেন নেই কালীগঞ্জে

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
| আপডেট : ২৫ জুন ২০১৭, ১৫:০৩ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০১৭, ১৩:০১

বাড়ি ফিরেছে স্বজন, কিন্তু হাসি নেই কারও মুখে। বরং ডুকরে বের হচ্ছে কান্না। কারণ, যারা ফিরেছে, তাদের কেউ জীবিত নয়, ফিরেছে তাদের নিথর দেহ।

শনিবার রংপুরের পীরগঞ্জে ট্রাক খাদে পড়ে যে ১৭ জন নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নে। দুই দিন ধরে নিহত ও আহতদের পরিবারের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এই অবস্তায় কে কাকে সান্তনা দেবে? গোটা চন্দ্রপুর ইউনিয়নই শোকাহত।

একই দুর্ঘটনায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায়ও দুইজন মারা গেছেন। সেখানেও আছে শোকের ছায়া।

চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২৯) ও তার ছোট ভাই আলমগীর হোসেনের (২৬) বাড়ি ফেরার খবরে অধীর অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। কিন্তু তারা ফিরেছেন লাশ হয়ে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন সাদ্দামের স্ত্রী শরিফা খাতুন ও আলমগীরের স্ত্রী খাদিজা খাতুনও। ওই ট্রাকে থাকা শরিফা খাতুনের ভাই দেলোয়ার হোসেনও নিহত হয়েছেন।

শনিবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই ছেলের শোকে কাতর মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, শুক্রবার বিকালে তার ছেলে সাদ্দাম ও ছেলের বউ শরিফার সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়। সেসময় তারা তাকে জানিয়ে ছিলেন, আল্লাহ সহি সালামতে বাড়িতে নিলে শনিবার এক সঙ্গে বসে ইফতার করবেন। এ সময় দাদির পাশেই ছিলেন দুর্ঘটনায় নিহত সাদ্দামের একমাত্র কন্যা ছয় বছর বয়সী শারমিন আক্তার সাথী। সেও দাদির কান্না দেখে কেঁদে উঠছে। আলমগীরের দুই বছরের শিশু কন্যা আঁখি মনির কান্নাও কেউ থামাতেই পারছিলেন না।

প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম বলেন, নিহত দুই ভাইয়ের বাবা আইয়ুব আলী মসজিদে এতেকাফ থাকায় তিনি বাড়িতে না আসার কথা জানিয়েছেন। তিনি মসজিদ থেকেই ছেলেদের জন্য দোয়া করবেন।

চন্দ্রপুর ইউনিয়নের অপর এলাকা উত্তরবত্রিশ হাজারী। এ এলাকায় একই পরিবারের চাচাতো ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। ছয়জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে উত্তরবত্রিশ হাজারী এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে রবিউল ইসলাম মজনু নিহত হন। জাহাঙ্গীরের ভাই ঝন্টু মিয়ার মেয়ে সুবর্ণা বেগম (৯) মারা গেছে। আহত হয়েছেন নিহত রবিউলের ভাই মতিউল ইসলাম মতি, তার চাচা ঝন্টু মিয়া, ঝন্টু মিয়ার স্ত্রী জামিনা বেগম, ঝন্টুর অপর মেয়ে ঝরনা বেগম।

ঝন্টুর মামাতো ভাই নুর নবী। এ ইউনিয়নের উত্তর বত্রিশ হাজারী এলাকা থেকে কিছুদুর গেলে টাওয়ার মার্কেট। সেখানকারও দুই বাসিন্দা নিহত হয়েছেন দুইজন। একই ইউনিয়নের বালাপাড়া এলাকায়ও মারা গেছেন একজন।

নিহত রবিউলের বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকায় জুতা কারখানায় কর্মরত ছিলেন তার দুই ছেলে। এলাকার অন্যান্যদের সঙ্গে একযোগে ট্রাকে ঈদ করার জন্য বাড়িতে আসছিল। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান মারা যাবে বিশ্বাসই করতে পারছি না।’

উপজেলার চাপারাহাট এলাকার ট্রাক চালক আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদের সময় ঢাকা থেকে বিভিন্ন যাত্রী ট্রাকেও আসে। স্থানীয় ট্রাক ও চালক হওয়ায় এলাকার লোকজন কথা বলে ওই গাড়িতে আসতেছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে তারা মারা গেল।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘শনিবার কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আলম ঘটনাস্থলে যান। নিহতদের লাশ নিয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় তিনি ফেরেন। পরে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার, লাশ দাফনের খরচ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রত্যেককে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।’

লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বলেন, ‘শোকাহত পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে লাশ ময়নাতন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেকোনও ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জেলাজুড়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ঢাকাটাইমস/২৫জুন/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :