মওদুদের নতুন বাড়ির অন্দরমহল যেমন (ভিডিও)

আউয়াল খাঁন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ জুন ২০১৭, ১৪:১৮ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০১৭, ১৩:৩৮

আদালতের রায়ে গুলশানের অ্যাভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বরের বিশাল বাড়ি থেকে উৎখাতের পর চার কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে উঠেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ। এক বিঘা ১৩ কাঠার বিশাল বাড়ির জিনিসপত্র এই ফ্ল্যাটে প্রায় তিন সপ্তাহেও গুছিয়ে উঠতে পারেননি তিনি জায়গার অভাবে।

আদালতের রায়ের মওদুদের দখল অবৈধ ঘোষণার পর মওদুদকে উচ্ছেদ করার ১৮ দিনের মাথায় গুলশানের সেই বাড়িটি ভাঙা শুরু করছে রাজউক। আর সেদিনই এই বাড়ি থেকে অদূরে ৫১ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে উঠেন মওদুদ। বাড়িটির নাম কনকর্ড প্যানারোমা।

এই বাড়িতে সেদিন কেউ ঢুকতে পারেননি। তবে মওদুদের চার দশকের নিবাস ভেঙে ফেলা শুরুর করার পর মওদুদ তার নতুন বাড়িতে ডেকে নেন সাংবাদিকদের। আর এ কারণেই তার অন্দরমহলে ঢুকার সুযোগ পায় গণমাধ্যমকর্মীরা।

বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঢু্কেই দেখা যায়, আগের বাড়ি থেকে আনা জিনিসপত্র এখনও গোছগাছ করা যায়নি। কক্ষেই পাশাপাশি রাখা ছিল সেগুলো।

সাংবা‌দিকদেরকে মওদুদ ব‌লেন, ‘আসুন দে‌খে যান আমার অসহায় জীবন! এই যে দেখুন আমার সব জি‌নিসপত্র আগোছালো।’

মওদুদ জানান, গত ৭ জুন ১৫৯ নম্বরের বাড়ি থেকে যেসব মালামাল বের করে আনা হয়েছে, সেগুলো দুটি বাড়িতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে তো তাও বসার জায়গা আছে, অন্য ফ্ল্যাটে যে জি‌নিস গেছে সেখানে একটু খা‌লি জায়গাও নেই।’

উত্তর পূর্ব কোণের শয়নকক্ষও সাংবাদিকদেরকে দেখা‌লেন মওদুদ। বলেন, ‘রুমটা একটু গুছানো হয়েছে। বারান্দায় আসুন।’

এই ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আগের বাড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে মওদুদ বলেন, ‘‌দেখুন বেআইনিভাবে কীভাবে বাড়ি ভাঙছে। এই গাছগুলো আমি নিজে লাগিয়েছি। সেখানে একটু বসার জায়গা ছিল। এখনও আমার অনেক জিনিস রয়ে গেছে।’

তবে মওদুদের এখনকার নিবাস থেকে আগের নিবাস সাংবাদিকরা দেখতে পাননি। কারণ দৃষ্টিসীমার বাইরে ছিল তা। তবু মওদুদ বলতে থাকেন, ‘আমার ‌এসির কম্প্রেসার, গু‌ণী শি‌ল্পদের আঁকা মূল্যবান কিছু ছবি, আমার ও আমার স্ত্রীর হাতে লেখা বইয়ের পাণ্ডুলি‌পি এখনও পাইনি। অনেক মূল্যবান কিছু সংগ্রহ ছিল।’

এরপর মওদুদ তার ফ্ল্যাটের পূর্ব দ‌ক্ষিণ কোণের আরেক‌টি কক্ষ সাংবাদিকদেরকে দেখালেন। যেখা‌নে কাঠের আলমিরা, একা‌ধিক এসি ও বৈদ্যু‌তিক পাখাসহ নানা জি‌নিস ছিল। বিদায়ের একটু আগে আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার ছেলেরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ জি‌নিস পা‌চ্ছি না।’

‘ওরা বা‌ড়ি দখল করেছে তা‌দের সম্পদ ব‌লে, কিন্তু এগুলো তো ছিল আমার সম্পদ, এগুলো নষ্ট করার অধিকার তাদের কে দিয়ে‌ছে?’-বলেন মওদুদ।

১৫৯ নম্বর সড়কে এক বিঘা ১৩ কাঠা জমির ওপর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের জমিটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে তিনি ওই বাড়ির মালিকানা পান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ছাড়েন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়। কিন্তু যে তারিখে ইনজে মারিয়া প্লাজ আমমোক্তারনামা করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে, তার আগেই তিনি মারা যান।

২০১৩ সালে দুদক এই বাড়ি দখলের অভিযোগে মওদুদের নামে মামলা করে। এরপর আদালত বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে রায় দিলে তিনি উচ্চ আদালতে যান। সবশেষ গত ৪ জুন আপিল বিভাগ মওদুদের রিভিউ আবেদন নাকচ করে দেয়। আর ৭ জুন মওদুদকে উচ্ছেদ করে রাজউক।

মওদুদ এখনও বলছেন, তাকে উচ্ছেদে এই অভিযান অবৈধ। তিনি বলেন, ‘অবৈধ দখলদারকেও তো আইনে ৩০ দি‌নের সময় দেয়। আদাল‌তে বিচারা‌ধীন থাকা অবস্থায়ও তারা বিনা নো‌টিসে এটা করল।’

ঢাকাটাইমস/২৫জুন/এএকে/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :