রোজা আসে রোজা চলে যায়...

কাওসার শাকিল
| আপডেট : ২৫ জুন ২০১৭, ১৪:১৯ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০১৭, ১৪:১১

আরেকটা রমজান চলে গেল। আরেকটা ঈদ এসেছে, চলেও যাবে। যারা রমজান পেলেন তাদের জন্য শুভেচ্ছা।

বলা হয় রমজান সিয়াম সাধনার মাস। সিয়াম মানে সংযম। সিয়াম মানে বিরত থাকা। সিয়াম মানে নিজেকে শোধরানো।

আমি যদি বলি এইযে একমাস রোজা রাখলেন, এর থেকে প্রাপ্তি কি? কেউ কেউ হয়তো ক্ষেপে গিয়ে উত্তর দেবেন- আমরা কি ইহজাগতিক প্রাপ্তির কথা ভেবে রোজা রাখি? রোজা রাখি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

আমার সেটাতে আপত্তি নেই। কিন্তু রমজানের শিক্ষাটা কিন্তু পার্থিব। রমজান ইহজগতেই একজন মানুষকে তার চরিত্রের সবগুলো খারাপ দোষ থেকে মুক্ত হবার চর্চার নাম। কেননা রমজানে সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও আপনি দিনের একটা সময় পর্যন্ত খেতে পারবে না, পান করতে পারবেন না। যাতে করে আপনি বুঝতে পারেন যার আসলেই সামর্থ্য নেই তার না খেয়ে থাকতে কেমন লাগে। এই শিক্ষা সহানুভূতির শিক্ষা। আপনি কি এক মাস রোজা রেখে ব্যাপারটা টের পেয়েছেন?

রমজানে আপনাকে গালাগাল করতে নিষেধ করা হয়েছে। আপনাকে জিহ্বা সংযত করতে বলা হয়েছে। মানুষের কাছে নম্র হতে বলা হয়েছে। এতে করে একজন মানুষ সত্যিকারের বিনয়ী হয়। আপনি কি সেটা হতে পেরেছেন?

রমজানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো সাম্যের। রমজান মানুষকে শেখায় কি করে বিভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়াতে হয়। আপনি কি নিজেকে বড় ভাবা ত্যাগ করতে পেরেছেন? দাড়াতে পেরেছেন আপনার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে এমন কারো সাথে একই কাতারে?

এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। কারন আমরা বড় চালাক, বড় পিছলা জাতি আমরা।

খোঁজ নিয়ে দেখেন- এই একমাসে ঘুষখোর সরকারি কর্মকর্তারা কি ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে রেখেছিলেন? রাখেননি। এই একমাসে ভেজাল দেয়া ব্যবসায়ীরা কি ভেজাল দেয়া বন্ধ রেখেছিলেন। রাখেননি।

এই একমাস কি জনতার টাকা আত্মসাৎ করা বন্ধ করে রেখেছেন কোন অসৎ ‘জননেতা’? করেননি।

আসুন আমরা এবার একটু নিজের দিকে তাকাই। আপনি আমি সাধারণ জনতা, আমরা কি পেরেছি এই একমাসে রিকশাওয়ালাকে গালাগাল না করে থাকতে? বাসার কাজের মানুষটার সাথে ভদ্র ব্যবহার করেছি কি? কাউকে ঠকাইনি তো? কোনো অন্যায় করিনি তো? করেছি কি?

এসব উত্তরও পাওয়া কঠিন। কেন না আমরাও কম পিছলা না।

বাজারে এখনো জাকাতের কাপড় নামে আলাদা একধরনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। স্বস্তা এবং নিম্নমানের এই কাপড় কারা কিনছে বলতে পারবেন? আমরা।

এক বন্ধু এই ছবি গুলো দিয়ে জানালো- ধানমন্ডির রাপা প্লাজার সামনে ঈদের কেনাকাটা করে এক দম্পতি রিকশায় উঠলেন। সাথে ছিলো তাদের বাসার কাজের মেয়েটা। মেয়েটার জায়গা হলো না রিকশায় কিংবা তাদের কোলে। আরেকটা রিকশাও নেয়া হয়নি তার জন্য। মেয়েটাকে রিকশার পেছনের রডে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো। সারাটা রাস্তা মেয়েটা হুড ধরে ঝুলতে ঝুলতে বাড়ি ফিরলো। এমন অমানবিকতা হয়তো সবার নয়, কিন্তু আমরাও কি এর থেকে খুব উঁচুতে উঠতে পেরেছি? সারামাসের রমজান কি আমাদের একটুও মানবিক বানাতে পেরেছে? সবাই মিলে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন, দেখবেন দেশ, সমাজ, পৃথিবী- সব বদলে যাচ্ছে।

আমি মহাধার্মিক, পবিত্র আত্মা, পীরানে পীর দস্তগীর ধরনের কেউ না। আমি সাধারণ মানুষ, আর দশজন ধর্মকে জীবনের অনুসঙ্গ হিসেবে দেখে, আমিও তাই।

আমি আমার ধর্ম থেকে শিখতে চেষ্টা করি। আর আমি দেখতে পাই ধর্মের ভালো ভালো জিনিসগুলোই মানুষ খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। কেন না ধর্ম মানবিক হবার শিক্ষা দেয়। ধর্ম সহানুভূতিশীল হবার শিক্ষা দেয়। ধর্ম বলে মানুষকে মানুষে ভেদাভেদ না করতে। ধর্ম নিংড়ালে মৌলিক যে কথাগুলো বের হয়ে আসে, সেটা এটাই যে ধর্ম মানুষকে উদার মানুষ, আলোকিত মানুষ হবার শিক্ষা দেয়।

লেখক: জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :