ভীতি ছড়ানো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ২৫ জুন ২০১৭, ১৯:০৭ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০১৭, ১৫:১৯

এবার ঈদযাত্রা শুরুর আগেই ভয় দেখাচ্ছিল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। কিন্তু যত ভয়, তত সমস্যায় পড়েনি যাত্রীরা। ঈদের আগের দিন বরাবর যেখানে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে, সেখানে এবার মহাসড়কের ফাঁকা চিত্র খানিকটা অবাকই করেছে যাত্রীদের। মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ করতে কাজ করা পুলিশ সদস্যরাও স্বস্তিতে।

প্রতি বছরই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে উত্তরের পথে ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই যানজট দেখা দেয়। ঈদের দুই একদিন আগে দুই ঘন্টার ঢাকা-টাঙ্গাইলের সড়ক সময় লেগে যেত আট থেকে ১০ ঘন্টা। কিন্তু এবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশে গত এক সপ্তাহে তেমন কোন যানজট লক্ষ্য করা যায়নি।

রবিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত যানজটের লেশমাত্র দেখা যায়নি সড়কে। এ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অন্য সময়ের তুলনায় অনেকটা বেশি থাকলেও যানবাহনগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।

শুরু থেকেই মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোড়াল প্রস্তুতি নেয়া হয়। মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের ৬০ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় আট শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ৪৫টি মোটরসাইকেল মোবাইল পেট্রল ও ৪৫টি পিকেট টিম মোতায়েন করা হয়। ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে তারা তিন শিফটে যানজট নিরসনে কাজ করে।

৬০ কিলোমিটার মহাসড়ক ছয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি সেক্টরে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, একজন সহকারী পুলিশ সুপার নেতৃত্ব দেন। এর বাইরে পর্যাপ্ত ট্রাফিক সার্জন এবং টিআই দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের জোড়ালো পদক্ষেপে সপ্তাহ জুড়ে মহাসড়কে যানজট বন্ধ রয়েছে।

গত এক সপ্তাহে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, রাবনা বাইপাস, আশেকপুর বাইপাস, করটিয়া ও তারটিয়ায় পর্যবেক্ষণে দেখা যায় স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। এমনকি ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে যানজটের তেমন কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে গাড়ির চাপের কারনে কখনো কখনো যান চলাচলে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্নস্থানে যানবাহন থেমে থাকলেও পুলিশের তৎপরতায় তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। আবার অনেক সময় মহাসড়কগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জগামী মতিউর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘অন্য যেকোন বারের চেয়ে এবার মহাসড়ক যানজটমুক্ত। ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পারছি। তাই প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’

কথা হয় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে বাসের চালক এবং যাত্রীসহ অনেকের সাথেই। তারা বলেন, এই মহাসড়কে প্রতিদিন স্বাভাবিক যে যানজট থাকে এখন সেটাও নেই। ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার জন্যে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের সকল অবৈধ দোকানপাট এবং স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।

তবে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতি এবং মহাসড়কে যানবাহন হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনার হওয়ার কারণে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার জন্য দীর্ঘ যানজট হয়নি।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এস আই শাহ আলম বলেন, ‘মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে যানবাহনের কিছুটা ধীর গতি থাকলেও পরক্ষণেই ফাঁকা। স্বতিতেই বাড়ি ফিরছে মানুষ।’

গোড়াই হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিনে এ সড়কের কোথাও তেমন কোন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়নি।’

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছাবুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। ফলে এখন পর্যন্ত কোন যানজটের সৃষ্টি হয়নি। আশা করছি বাকি সময়টুকুতেও যানজটের সৃষ্টি হবে না।’

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, ‘যানজট নিরসনে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা এবং ব্যবস্থাপনাও ভালো ছিল। পুলিশ যানজট নিরসনে যে পরিকল্পনা নিয়েছিল তা বাস্তবে পরিণত হওয়ায় মহাসড়কের কোথাও দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়নি।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘মাঝে মাঝে সড়ক দুর্ঘটনা হলেও পুলিশ সর্তক থাকায় তাৎক্ষণিক সহাসড়ক স্বাভাবিক হয়। মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত তৎপর রয়েছেন। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘেœ বাড়ি ফেরার লক্ষ্যে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।’

ঢাকাটাইমস/২৫জুন/আরকে/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :