সেই ফখরুদ্দিন আহমেদ এখন

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০১৭, ০৮:৫৪

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ। দৌর্দণ্ড প্রতাপে দুই বছর চালিয়েছেন দেশ। তার আমলে গ্রেপ্তার হয়েছেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেই ফখরুদ্দিন আহমেদ আট বছর ধরেই বিদেশে।

২০০৯ সাল থেকেই ফখরুদ্দিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে বসবাস করছেন।

২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ক্ষমতার পালাবদলের পর ফখরুদ্দিন বেশ কিছুদিন সরকারি বিশেষ নিরাপত্তায় দেশেই ছিলেন।

এরপর ১/১১ কর্মকাণ্ডের কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে গঠিত সংসদীয় কমিটি ফখরুদ্দিনকে জেরার জন্য তলব করছে মর্মে খবর প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যে সপরিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। আগে থেকেই মার্কিন নাগরিক ফখরুদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড স্টেটের পটোম্যাকে যে দুটি বাড়ির মালিক তার একটিতে এখন তিনি স্ত্রীসহ থাকছেন। অন্য বাড়িতে থাকে তার মেয়ের পরিবার।

খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিষয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করছেন তিনি। তবে, স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির একটি অংশ বিশেষ করে বিএনপি সমর্থকদের ক্ষোভের কারণে তিনি নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখেন।

২০০৯ সাল থেকে সেখানে অবস্থান করলেও ফখরুদ্দিন সাধারণত বাংলাদেশি কমিউনিটির সামনে আসেন না।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) আক্তারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার কারণে মনে হয় দুইটি কারণে ফখরুদ্দিন ও মইন উদ্দিন আহমেদ (সাবেক সেনাপ্রধান) দেশে আসতে পারছেন না। প্রথমত. তারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্র দীর্ঘায়িত করেছে। দ্বিতীয়ত. তারা এমন কিছু কাজ করেছে, সেটা নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি। এই অপরাধবোধের অনুশোচনা থেকেই তারা বিদেশে আছেন।’

‘দেশে না আসাটাও তাদের অপরাধের একটা স্বীকৃতি। তারা হয়ত মনে করছেন, দেশে আসলেই তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

২০১৫ সালের শেষদিকে তার এক বন্ধুর জানাযায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের এক মসজিদে উপস্থিত হয়েছিলেন ফখরুদ্দিন আহমদ। তবে, সেসময় বেশ কয়েকজন তার সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানাযা শেষ করে দ্রুত ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান তিনি।

ফখরুদ্দিনের পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, সাবেক প্রধান উপদেষ্টার শরীরে ক্যান্সারের মতো রোগ বাসা বেঁধেছে। যে কারণে ক্রমেই তার শরীর ভেঙে পড়ছে। মাঝে মধ্যেই তাকে কেমোথেরাপি নিয়ে হচ্ছে।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপে ক্ষমতা দখল করেছিলেন ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই থেকে বছরের প্রথম মাসের ১১ তারিখ পশ্চিমা আদলে ১/১১ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ তিন মাস হলেও ফখরুদ্দিন আহমদের সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর। তবে ওই সময় পেছন থেকে সে সময়ের প্রধান সেনাপতি জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কলকাঠি নাড়তেন বলে অভিযোগ আছে। ফখরুদ্দিনের মত তিনিও এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান অসহিষ্ণুতার কারণে সহিংসতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম ব্যর্থতা এবং এর ফলে পশ্চিমাদের চাওয়ার ফল হিসেবে ওইদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে যায় সেনা সমর্থিত অরাজনৈতিক সরকারের হাতে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।

একপর্যায়ে আওয়ামী লীগসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সেনাপ্রধান পদে পরিবর্তন আনতে চান ইয়াজউদ্দিন।

সেনাবাহিনীর মূলধারা তার এ সিদ্ধান্ত আগেই জানতে পেরে ১১ জানুয়ারি তা বন্ধ করার পাশাপাশি জরুরি অবস্থা জারি করায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

ইয়াজউদ্দিন অধ্যায় শেষ হলে মানুষ আশা করেছিল ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্রুততম সময়ে দেশবাসীকে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন উপহার দেবে। কিন্তু, তারা উল্টো ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দেশের রাজনীতি থেকে বিদায়ের চেষ্টা শুরু করে।

‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও জরুরি অবস্থা জারির ছয় মাসের মধ্যে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোররাতে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর।

আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত হন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। অনেক শঙ্কা আর দোলাচলের নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের শুরুতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এমএম/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :