স্মার্টওয়াচ নামেই ‘স্মার্ট’

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ জুন ২০১৭, ১০:২৫ | প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০১৭, ০৯:১০

স্মার্টওয়াচে ছেয়ে গেছে প্রযুক্তি পণ্যের বাজার। বিভিন্ন ই-কর্মাস সাইটেও এগুলোর দেখা মেলে। বাহারি ডিজাইন, রঙ ও রূপে এগুলোর বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে। কিন্তু কতটা মানসম্মত এসব স্মার্টওয়াচ। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঢাকাটাইমসের বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি টিম বাজার থেকে একটি স্মার্টওয়াচ কিনে নেয়। এরপর এটি নিয়ে চলে পরীক্ষা-নীরিক্ষা। শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, এসব নামেই স্মার্টওয়াচ, কাজে একেবারেই আনস্মার্ট।

বাজার থেকে যে স্মার্টওয়াচটি কেনা হয় সেটাতে উৎপাদনকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের লোগো নেই। নেই কোনো নামও। বিক্রেতারা জানান, এসব ওয়াচ মূলত চীন থেকে আমদানী করা। বাজারে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকায় পাওয়া যায় স্মার্টওয়াচ। ডিজাইন ও ফিচারভেদে এগুলো দাম দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

এই স্মার্টওয়াচ মূলত ব্লুটুথ ওয়াচ। এগুলোর বেশিরভাগেরই সিম সার্পোট করে। এতে মাইক্রো সিম স্লট ও মেমোরি কার্ডের স্লট আছে।

ডিজাইসটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করার আগে এর ফিচারগুলো দেখে নেয়া যাক। স্মার্টওয়াচটি ১.৫৬ ইঞ্চির স্কোয়ার টাচ এলসিটি টিএফটি ডায়াল শেফ ক্লাসিক স্টাইল স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। ডিভাইসটি যেকোনো অ্যানড্রয়েড কিংবা আইওএস ডিভাইসের সঙ্গে পেয়ার করা যাবে। বিল্টইন মেমোরির পাশাপাশি ৩২ জিবি পর্যন্ত মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ আছে।

স্মার্টওয়াচটিতে আছে ক্যামেরা, সাউন্ড রেকর্ডার, অ্যালার্ম ক্লক, ক্যালেন্ডার, পেডোমিটার, স্লিপ মনিটর ইত্যাদি। এছাড়াও এতে রিমাইন্ডার, কুইক রেসপন্স, ফাইন্ড মি, ইমেজ ভিউয়ার, অডিও প্লেয়ার, ব্লুটুথ মিউজিক, সাউন্ড রেকর্ডার, ফাইল ম্যানেজারসহ ইন্টারনেট ব্রাউজার এবং ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার আইকন রয়েছে।

ডায়াল শেফ ক্লাসিক স্টাইলের ওয়াচটিতে বডির উপরিভাগ অর্থাৎ ডিসপ্লের চারপাশে অ্যালুমিনিয়াম ফিনিশড ডিজাইনে তৈরি। নিচের অংশ প্লাস্টিকে কাঠামোতে তৈরি। ডিসপ্লের উপরের অংশে ক্যামেরা এবং মাইক। নিচের অংশে হোম বাটন। তারই ঠিক ডান পাশে আছে চার্জিং পোর্ট। এতে ৩৮০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে।

এবার আসি কাজের কথায়। মাইক্রো সিম কার্ড ব্যবহার করে ফিচার ফোনের মত ওয়াচটিকে ব্যবহার করা যায়। লাইডস্পিকারে ওপর প্রান্তের কথা শোনা যায়। সাউন্ড কোয়ালিটি নিম্ন মানের। কথা পরিস্কার শোনা যায় না। এটি অ্যানড্রয়েড ফোনের সঙ্গে পেয়ার করে কল আদান প্রদান করা যায়। সেক্ষেত্রে ফোন আসলে অ্যানড্রয়েড ফোন ও ওয়াচে নটিফিকেশন আসে। ফোন থেকে কল রিসিভ করলেও ওয়াচের লাইড স্পিকারেও রিসিভারের কথাগুলো শোনা যায়। এটি খুব বিরক্তিকর। ব্লুটুথের নেটওয়ার্ক কানেকশনও বেশ দূর্বল। মাঝেমধ্যেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই ভাবে ব্লুটুথ কানেকটিভিটির মাধ্যমে গান শোনা ও রেডিও শোনা যাবে। সবচেয়ে বড় অসুবিধাটা হলো ওয়াচে কোনো বিল্টইন মেমোরি নেই। রেকর্ডার ব্যবহার, গান শোনা, ছবি তোলার জন্য চাই আলাদা মাইক্রো এসডি কার্ড। তার মানে আবার পয়সা খরচ। আলাদভাবে মেমোরি কার্ড কিনে ব্যবহার করতে হবে।

এই ওয়াচের ক্যামেরা ছবি যাচ্ছে তাই। এতটাই ঝাপসা যে কারো ছবি তুললে তার অবয়বটাই বোঝা কঠিন। এই ক্যামেরা জাস্ট শো। এটি কোনো কাজের না। সাউন্ড রেকর্ডারের রেকর্ডিং কোয়ালিটিও নিম্নমানের।

তেমনি করে এতে যে পেডোমিটার ও স্লিপ মনিটর আছে তা প্রকৃত পক্ষে কাজ করে না। পেডোমিটারে স্টেপ কাউন্টার রয়েছে। এই কাউন্টার চালু করে বসে থাকলেও এটি স্টেপ দেখায়। যা মূলত আজগুবি লেগেছে। একইভাবে স্লিপ মনিটরও কাজে আসে না।

এছাড়াও এর মেসেজিং ফিচারটি ব্যবহারের অনুপযোগী। এত ছোট ডিসপ্লেরতে টাচ করে টাইপ করা প্রায় অসাধ্য। কেউ কেউ হয়তো অসাধ্য কাজটি সাধনও করতে পারবেন। ক্যালকুলেটরের নিউম্যারিক আইকন গুলো এত ছোট যে টাচ করে কমান্ড দেয়া কঠিন।

ওয়াচটিতে ইন্টারনেট ব্রাউজার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের যে অ্যাপগুলো আছে সেগুলো কেনো কাজই করে না। এসব অ্যাপ ওপেন হয় না।

বাজারে তথাকথিত এই স্মার্টওয়াচের লুকিংটাও আনস্মার্ট। আপনার হাতের কব্জিতে এগুলো যেনো বেমানান। হাতে এগুলো পরিধান করলে যেকেউ বুঝে ফেলবে এটি কম দামের কপি করা কোনো ওয়াচ। যেনো সস্তার তিন অবস্থা।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা