সেই সময় এই সময়- শেষ পর্ব

সবটুকুই সত্য

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৭, ১০:৪৬ | আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭, ১০:৫০

অনলাইন ডেস্ক

লক্ষ্মীপুর চলে এল পাদপ্রদীপের আলোয়। মিডিয়া নজর দিল। তবে ততক্ষণে আমরা অনেক এগিয়ে। শহর, শহরতলী এমনকি রামগঞ্জও ঘুরলাম তন্ন তন্ন করে। সিরিজ প্রতিবেদন ছাপা হলো। চারদিকে ব্যাপক আলোচনা শুরু হলো। তাহের ও তার ছেলেরা রীতিমতো চাপে পড়ে গেল। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক চাপ শুরু হলো। একটু একটু করে বাঁধন আলগা হতে শুরু করল যেন।

ফেনীতে এসে আমাদের প্রতিনিধি তাহের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলেন তাহেরপুত্র টিপু। আরিফুর রহমানকে কীভাবে পাওয়া যায়? ম্যানেজ করতে হবে। তাহের ভাই অভিজ্ঞ মানুষ। ভালো ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গে। বলেছেন, তিনি কথা বলবেন। তবে এসব নিয়ে টিপু নিজে কথা বলতে চাইলে হিতে বিপরীত হবে। চা খাইয়ে টিপুকে বিদায় করে তাহের ভাই ফেনীতে বসে আমাকে বললেন, ‘এবার আপনার ঢাকায় ফেরা ভালো। তাহেরপুত্ররা আপনাকে খুঁজছে। ফেনীতে অবস্থান করলে আপনাকে খুঁজে পেতে খুব বেশি সময় লাগবে না ওদের। আর তখন কী হবে বুঝতে পারেন?’ তাহের ভাইয়ের পরামর্শমতো আমি ফিরি ঢাকায়, একরামুল হক বুলবুল চট্টগ্রামে। কিন্তু আমার হাতে তখন একাধিক খবর লেখার রসদ।

ঢাকায় ‘প্রথম আলো’ কার্যালয়ে ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন লক্ষ্মীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুরবস্থা নিয়ে নানা খবর আসছিল তখন রিপোর্টার্স মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় সরেজমিন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রিপোর্টার যাবে লক্ষ্মীপুর। কিন্তু কাকে পাঠানো যায়? তৎকালীন প্রধান প্রতিবেদক আমীরুল ইসলাম টোকন ভাই প্রস্তাব করলেন তরুণ সরকার হলে ভালো হয়। তরুণ সরকার অনুসন্ধানী রিপোর্টার হিসেবে তখন বেশ নাম করেছেন। খুব ভালো বোঝেন। বিষয়ের গভীরে যেতে পারেন। সব মিলিয়ে একটা নামডাক হয়েছে। কিন্তু সানাউল্লাহ লাবলু ভাই রাজি হলেন না। নগর সম্পাদক হলেও তিনিই তখন বার্তা বিভাগের সবচেয়ে প্রভাবশালী। তাঁর সিদ্ধান্ত লক্ষ্মীপুর যাবে আরিফুর রহমান দোলন। কারণও ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। বললেন, কদিন আগে যশোর ঘুরে এসেছে সে। জনকণ্ঠের সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যাকা-ের পরের ঘটনাবলি খুব ভালোভাবে কাভার করেছে আরিফুর রহমান। লক্ষ্মীপুর সে-ই যাবে। টোকন ভাই তরুণ সরকারের পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি দিলেও লাভলু ভাই অনড়। বললেন, ‘আমি যেটি বুঝেছি, বলেছি। এটাই সিদ্ধান্ত।’ শেষমেশ আমার ব্যাপারেই সবাই একমত হলেন।

আইনজীবী নুরুল ইসলামকে অপহরণের পর টুকরো টুকরো করে হত্যা, লাশ নদীতে ফেলে দেওয়াই শুধু নয়, লক্ষ্মীপুর ও ওই জনপদের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ের নানা বিষয় আমরা তুলে ধরেছিলাম প্রথম আলোর পাতায়। মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল, সরকার নড়েচড়ে বসেছিল। কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছিল সব মহলে।

লক্ষ্মীপুর না ফেনী কোন অঞ্চলের সংবাদ সংগ্রহের সময়টা বেশি ভীতিকর ছিল আমার কাছে? দুটোই। তবে ফেনীতে গিয়েছি বারবার। কোনটি আগে লিখব আর কোনটি পরে সেই প্রায়োরিটি ঠিক করা একটু কঠিনই। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জয়নাল হাজারীকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। যে রাতে তল্লাশি হয় ওই দিন আমাকে ফেনীতে পাঠানো হয়। বলা হয়, ফেনীতে বড় ঘটনা ঘটবে। খুব কাছে থেকে কাভার করতে হবে। আমার সঙ্গে ফটোগ্রাফার জিয়া ইসলাম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরনো গেস্ট হাউজে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়।

ফেনীতে নেমে সন্ধ্যায় আমাদের প্রতিনিধি তাহের ভাইয়ের ল্যান্ড ফোন থেকে কথা হয় জয়নাল হাজারীর সাথে। এর আগে শহর ঘুরে মনে হয়েছে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমি ফোন করতেই ওপাশ থেকে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘এত দিন ভয় ছিল না। এই যে তুমি এসেছো, মানে প্রথম আলোর সাংবাদিক এখন ফেনীতে, আমার কিন্তু কেমন জানি মনে হচ্ছে।’ মানে? জয়নাল হাজারী বললেন, ‘আমি জয়নাল হাজারী সব বুঝি।’ এভাবে কিছুক্ষণ কথা হলো। তাহের ভাইও অবাক। জয়নাল হাজারী কী বোঝাতে চাইলেন? তবে কি সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে এটি ফেনীর দ-মু-ের কর্তা বুঝে গেছেন?

ওই দিনই গভীর রাতে কার্ফ্যু জারি করে তল্লাশি হলো জয়নাল হাজারীর বাড়িতে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হলো। মোবাইল টেলিফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা হলো। কিন্তু অভিযানের আগেই পালালেন জয়নাল হাজারী। আমরা টের পেলাম অভিযান শুরু হয়েছে। রাস্তায়ও নামলাম। তৎকালীন বিডিআর পাহারায়। ফটোগ্রাফার জিয়াকে বললাম, অন্ধকারে কী করি? জিয়া অসম্ভব পরিশ্রমী, প্রফেশনাল ফটোসাংবাদিক। বলে, ‘চলেন হাঁটতে থাকি।’ কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারি না। সাংবাদিক পরিচয় জানার পরে বিডিআর জওয়ানরা বলেন, ‘ফিরে যান, এখন কার্ফ্যু। কাউকেই মুভ করতে দেওয়া হবে না।’

কোনোমতে গেস্ট হাউজে ফিরলাম। ঘুম আর আসে না। জেগেই কাটালাম সারা রাত। অপেক্ষা, কখন বের হবো বাইরে। ফজরের আজানের পরপরই বেরিয়ে পড়লাম জিয়াকে নিয়ে। সোজা মাস্টারপাড়া। জয়নাল হাজারীর বাড়ি। মাস্টারপাড়া ঢোকার মুখে একটা থমথমে পরিবেশ। পুলিশ-বিডিআরের ছড়াছড়ি সবখানে। পরিচয় দিয়ে এগোতে থাকলাম আমরা। পরিচয় জেনে জয়নাল হাজারীর বাড়িতে খুব সহজেই ঢুকতে দেয়া হলো আমাদের। বাড়ির নিচতলা-উপরতলা বিভিন্ন কক্ষ ল-ভ- প্রায়। ঘুরে ঘুরে দেখছি আমরা। ফেনী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার পূর্বপরিচিত। সব রুমেই আমাদের যাওয়ার সুযোগ হলো। এমন কিছু জিনিসপত্রের দেখা মিলল যেটি চিরকুমার জয়নাল হাজারীর বাহ্যিক জীবনযাত্রার সাথে বেমানান। ওই জিনিসপত্রগুলো আগেই সেখানে মজুত ছিল নাকি অভিযানের সময় সুযোগসন্ধানী কেউ সেগুলো এখানে নিয়ে আসেন, সেই রহস্য রয়েই যাবে।

জয়নাল হাজারীর বাড়ির পাকা উঠানে বিডিআরের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের সাথে অভিযানের আগে ও পরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ চলতে থাকে। একপর্যায়ে আমিই প্রশ্ন ছুড়ে দিই, এত বড় অভিযান, এত বড় ঘটনা, অথচ জেলা প্রশাসককে দেখছি না। কালো শ্মশ্রুমু-িত এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী হাসতে হাসতে হাত বাড়ান- ‘আমিই অধম জেলা প্রশাসক।’ কিছুটা লজ্জা পাই। সবার উদ্দেশেই আমার প্রশ্ন, কেন ধরা গেল না জয়নাল হাজারীকে? রাতেও তো ল্যান্ড টেলিফোনে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, ওই সময়ে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। উত্তর পাই না। আজও আমার মনে প্রশ্ন, জয়নাল হাজারীকে কি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল? প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  সর্বোপরি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি আসলেই জয়নাল হাজারীকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল? নাকি তাকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে জয়নাল হাজারী সম্পর্কে আরও বেশি নেতিবাচক প্রচারণা চালানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য?

ওই অভিযানের আদ্যোপান্ত দ্রুত লিখে ঢাকা পাঠাই। মনে প্রশ্ন জাগে, জয়নাল হাজারী যেমন গডফাদার, ভিপি জয়নালই বা কম কিসে! কিন্তু তার বাড়িতে অভিযান কোথায়? এই প্রশ্ন প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে করতে থাকি। একপর্যায়ে তারাও বুঝে যান বিরাট ভুল হয়ে গেছে। যদিও তারা আদৌ ভিপি জয়নালের বাড়িতে অভিযান হোক চেয়েছেন কি না এখনো আমি সন্দিহান। লোক দেখানো এক অভিযান চালানো হয় ভিপি জয়নালের বাড়িতে। এভাবে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এক ধরনের ভারসাম্য আনার চেষ্টা করলেও ফেনীতে সবাই বুঝে যান জয়নাল হাজারীকে কোণঠাসা করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পর্যুদস্ত করার সব রকম তৎপরতা পুরোদস্তুর চলছে।

ফেনীর এই পরিস্থিতি দারুণ বিব্রতকর ছিল আওয়ামী লীগের কাছে, যদিও জয়নাল হাজারীর দায় কম ছিল না। স্টিয়ারিং বাহিনীর মাধ্যমে দমন-পীড়ন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির যে মহোৎসব চালিয়েছে তার বাহিনী, তা ছিল নজিরবিহীন। যদিও বিএনপির ভিপি জয়নাল এবং জাতীয় পার্টির আমলে তৎকালীন মন্ত্রী জাফর ইমামের টাইগার বাহিনীও কম যাননি। জয়নাল হাজারীর পতনের অন্যতম কারণ অবশ্য ছিল মিডিয়াকর্মীর ওপর তার দমন-পীড়ননীতি। ইউএনবির তৎকালীন ফেনী প্রতিনিধি টিপু সুলতানের ওপর বর্বরোচিত হামলা গডফাদার হাজারীর পতনের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিল বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি।

২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে টিপু সুলতানের ওপর নৃশংস হামলা হয়। মৃতপ্রায় এই সাংবাদিককে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। এতটাই আতঙ্কের পরিবেশ তখন ফেনীতে যে, এত বড় ঘটনা গণমাধ্যমে পাঠানোর ওপর হাজারী বাহিনী এক ধরনের সেন্সরশিপ জারি করে। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে একমাত্র আমি ছুটে যাই ফেনীতে। তৎকালীন কুমিল্লা প্রতিনিধি নাসিরউদ্দিনকে টেলিফোনে যোগাযোগ করে প্রস্তুত থাকতে বলি। সাংবাদিক নির্যাতনের এত বড় ঘটনা তবু সাংবাদিকদের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। ফেনীতে গিয়ে কোথায় থাকব, কার কার সাথে যোগাযোগ করব, ঘটনার ইতিবৃত্তই বা জানাবেন কারা- এসব নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। মূলত সে জন্যেই সহকর্মী নাসিরউদ্দিনের বিষয়টি মাথায় আসে। কুমিল্লা থেকে তাকে সঙ্গে নেয়ার সময় কিছু দায়িত্ব দিই- কোথায় কোথায় যাবেন, কার কার সঙ্গে কথা বলবেন, এসব আরকি। ফেনীতে আমার এক ঘনিষ্ঠজন আছেন (নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ করছি না)। তার সাথে যোগাযোগ হলো। তিনি বললেন, ‘হোটেল-গেস্টহাউস কোথাও নিরাপদ না। সর্বত্রই স্টিয়ারিং বাহিনী নজরদারিতে রেখেছে। আপনি সোজা আমার বাসায় আসবেন। এখানে ফ্যাক্স-টেলিফোন সব আছে। আপনার কাজের সব রকম সুবিধাই পাবেন।’ টিপু সুলতান মার খাওয়ার পর যারপরনাই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন আমাদের তাহের ভাই (প্রথম আলোর প্রতিনিধি)। খুব মনও খারাপ করেছিলেন। ওই যাত্রায় আমার সঙ্গে দেখা করেননি। তবে অন্য মাধ্যমে টিপুর মার খাওয়া সম্ভাব্য কারা কারা জড়িত সব ব্যাপারেই আমাকে তথ্য জোগান দিয়েছিলেন।

টিপু সুলতানের ওপর নির্যাতনের কাহিনি ‘প্রথম আলো’র প্রথম পাতায় পর পর দুই দিন ফলাও করে প্রচার হয়। অনেকেই নড়েচড়ে বসেন। ফেনীর স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল থেকে তাকে স্থানান্তরিত করা ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। দেখতে যাই। তার বিবর্ণ চেহারা দেখে মনটা বিষণœ হয়ে ওঠে। অফিসে ফিরে সম্পাদক মতিউর রহমানকে টিপুর জন্য কিছু করা যায় কি না ভাবতে অনুরোধ করি। পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসা যে তার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট নয়, এটা আমার মনে হয়েছিল। সম্পাদক আমাকে বললেন, তৎকালীন বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু ভাইকে নিয়ে আমি যেন টিপু সুলতানকে আবার দেখতে যাই এবং তার শারীরিক অবস্থার ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন করি। নানা কারণে ব্যস্ত মঞ্জু ভাই সময় করে উঠতে পারছেন না। ভেতরে ভেতরে আমি অস্থির হয়ে উঠি। মালিবাগের কারিতাসে একটি বেসরকারি সংগঠনের অনুষ্ঠান কাভার করতে আমাকে পাঠানো হয়। সম্পাদক মতিউর রহমান অন্যতম অতিথি সেখানে। অ্যাসাইনমেন্ট শেষে আমাকে বলেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি হয়ে তিনি অফিস যাবেন। আমি সঙ্গী হতে পারি। সম্পাদকের গাড়িতে উঠে বললাম, ‘টিপুর ব্যাপারে তো আমরা কিছু করতে পারতাম। ছেলেটি পঙ্গু হতে চলেছে। এখনো সময় আছে কিছু করা যায়।’ তিনি একমত হলেন।

পরদিন শুক্রবার। লালমাটিয়ায় তার ভাড়াবাড়িতে আমাকে সকাল দশটায় যেতে বললেন। ফটোসাংবাদিক বাবু আহমেদকে নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই গেলাম। সম্পাদক মতিউর রহমানকে নিয়ে সোজা পঙ্গু হাসপাতালে। টিপু সুলতানের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আমাদের কথা হলো। বাবু আহমেদ অনেক ছবি তুললেন। কয়েক দিন পর মতি ভাই নিজেই টিপুকে নিয়ে লিখলেন। তাকে সাহায্য করার আবেদন জানালেন সবাইকে। একটি তহবিলও গঠন করা হলো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি টিপুর চিকিৎসার জন্য ওই তহবিলে অর্থ দিলেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো ব্যাংককের বামরুম গ্রাদ হাসপাতালে। লম্বা সময় ধরে চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন ফেনীর এই সাংবাদিক।

সুস্থ হয়ে দেশে এসে নিরাপত্তাজনিত কারণেই আর ফেনীতে ফেরা হলো না তার। টিপুর খুব ইচ্ছে ঢাকায় কাজ করবেন। প্রথম আলো প্রথম দিকে সিদ্ধান্তহীনতায়। এভাবে চলল বেশ কিছুদিন। টিপু সুলতান আমাদের অফিসে মাঝেমধ্যে আসেন। সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করেন। আমাদের সঙ্গেও দেখা হয়। নিজের ইচ্ছের কথা সম্পাদককে জানান। আমরাও অনুরোধ করি। একপর্যায়ে যুক্ত হয়ে যান ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে। সবাই খুশি আমরা। যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন টিপু। চৌকস রিপোর্টার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন পরবর্তী সময়ে।

কিন্তু রাজনীতিতে আর ফিরতে পারেননি জয়নাল হাজারী। ২০০১ সালে সেই যে ফেনী ছেড়ে পালালেন, তারপর বহু বছর প্রকাশ্যে দেখাই মেলেনি তার। নির্বাসনে কাটিয়ে সম্ভবত ২০০৯ সালে দেশে ফেরেন। কিন্তু রাজনীতির মাঠ হারিয়েছেন। এককালের দুর্দ- প্রতাপশালী এখন নিজ শহরেই ‘অবাঞ্ছিত’। এও সম্ভব! 

সেই সময় এই সময়-

সেই সময় এই সময়-

লেখক: সম্পাদক, ঢাকাটাইমস সাপ্তাহিক এই সময়