‘উন্নয়নের প্রচার ভালভাবে হলেই আবার ক্ষমতায় আসবো’

​নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুন ২০১৭, ০৯:৫৯ | প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০১৭, ০৮:৩৯

বর্তমান সরকারের আমলে যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরতে পারলেই আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসবে বলে মনে করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেছা বাপ্পী। তিনি মনে করেন, জোট সরকারের আমলের নজিরবিহীন ব্যর্থতা আর দুঃশাসন মানুষ ভুলে যায়নি। আর এ জন্যই তাদেরকে ভোট দেবে না জনগণ। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপানে নিজের রাজনৈতিক ভাবনা তুলে ধরেছেন সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী ও রাজনীতিক। সঙ্গে ছিলেন, তানিম আহমেদ।

আজ থাকছে সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব।

আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনারা কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

নির্বাচন নিয়ে আমাদের সবসময়ই প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য যে কৌশল থাকে সেগুলো আমরা যেন সঠিকভাবে করি। আমরা যেন জনগণের সেবা করি, তাদের পাশে থাকি। জনগণের যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করার চেষ্টা করি।

আমরা যে জনগণের জন্য কাজ করেছি সেগুলো তুলে ধরছি। জনগণের জন্য আরও কী কী করা যায় সেই মতামত নিতে আমরা নিয়মিত প্রান্তিক এলাকায় যাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলের অপকর্মগুলো তুলে ধরছি। জনগণের কাছে আমরা ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।

বর্তমান সরকারের সাফল্য হিসেবে কোনগুলোকে তুলে ধরবেন?

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় আসার পরেই আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদ, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করেছি। আমরা মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করছি। ক্ষুধা, দারিদ্র্য দূর করেছি। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষই বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে।

আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করেছি। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই বই বিতরণ হচ্ছে যা আমরা কখনও কল্পনা করতে পারিনি। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে আছি, যার সঠিক গন্তব্যে আমরা যেতে চাই।

বাংলাদেশে আজ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। সাত কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উদ্বোধন হবে। অথচ বিএনপির সময় তথ্য পচারের অজুহাতে সাবমেরিন ক্যাবেলে যুক্ত হয়নি তারা।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তো সরকারকে ব্যর্থ বলছে...

যারা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। তাদের তো পায়ের তলায় মাটি নেই। ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিএনপি নেত্রী মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নামে একটা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। সেখানে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, তাদের নেতাকর্মীরাই ছিল না। তাদের আন্দোলন তো কখনই জনগণের জন্য নয়, নিজেদের বাঁচানোর জন্য। জনগণের ইস্যুতে তো তারা কখনোই আন্দোলন করে নাই। তারা ব্যালটে নয়, বুলেটে বিশ্বাসী।

বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবিকে কীভাবে দেখছেন?

নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী।সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধি, নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। কোন অন্যায় অবদার করে লাভ হবে না।

আগামীতেও আওয়ামী লীগ কেন ক্ষমতায় আসবে কেন?

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে প্রচার করতে পারলেই আমরা পুনরায় ক্ষমতায় আসবো। কারণ জনগণ উন্নয়ন চায়, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক চায়। তারা মানুষ পুড়ানো চায় না। জনগণই চায় না আরেকটা ২১ আগস্ট আসুক। তারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়। তারা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে পতাকা চায় না। তারা আইনের শাসন চায়। আমাদের সরকার মানুষের জন্য কাজ করছে। তাই আবারও আমরা ক্ষমতায় আসব।

এবার অন্য একটি প্রসঙ্গে আসি। আপনি তো ১/১১ এর পরে শেখ হাসিনার মামলা পরিচালনা করেছেন। তখন কোন বাধা পেয়েছিলেন?

আপা (শেখ হাসিনা) কে আটকের খবর পাওয়ার সাথে সাথেই আমি আমার আইনজীবীর পোশাক পরে কীভাবে গাড়ি নিয়ে বের হলাম তা কল্পনা করতে পারবেন না। যাওয়ার সময় স্বামীকে বললাম, ‘আমি যাই, যে যুদ্ধে যাচ্ছি তার পরিণাম জেনেই যাচ্ছি।’

সিদ্দিকবাজার পর্যন্ত যাওয়ার গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি কারো কথা চিন্তা না করেই গাড়ি থেকে নেমেই নেত্রীর গাড়ির পিছনে পিছনে ছুটলাম। ওনাকে (শেখ হাসিনা) সিএমএম কোর্টের নতুন ভবনের দোতলায় উঠিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেক চেষ্টা পরে আমরা নেত্রীর কাছে যেতে পেরেছি। সকাল সাতটায় কোর্ট বসল। আমি নেত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। সেই পরিস্থিতিতেও তিনি খুব নির্ভিক, প্রত্যয়ী ছিলেন। তাকে আমি ধরে রেখেছিলাম, সেখানে তিনি একঘণ্টা বক্তব্য রেখেছেন। টানাহ্যাঁচড়া করে তাকে গাড়িতে তুলে বিশেষ কারাগারে নিয়ে গিয়েছিল। কারগারে তাকে (শেখ হাসিনা) অনেক কষ্ট দিয়েছিল। ঠিকমত চিকিৎসা করানো হয়নি।

আদালতের ভেতরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাকেও হেনস্থা করতো। টেলিফোন করে বিভিন্ন প্রশাসনিক অফিসে যেতে বলতো। বলতো, আপনি অনেক বাড়াবাড়ি করছেন, বিশেষ আইন লঙ্ঘন করছেন। আপনি ওনার (শেখ হাসিনা) সাথে এত কথা বলেন কেন? কী কথা বলেন আমাদের জানতে হবে। না হয় আপনার স্বামীকে গ্রেপ্তার করব। আমাদের সায়েদাবাদে র‌্যাব-১০ নিয়ে যা্ওয়া হয়েছিল মিথ্যা অভিযোগে। বলা হয়েছিল, আমরা বাসায় চারজনের বেশি মানুষ নিয়ে বৈঠক করেছি। শুধু র‌্যাব নয়, অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মামলার আলামত আমরা লিখতাম কিন্তু সেখানে বন্দুক নিয়ে বসে থাকত। সেই অবস্থায় কাজ করেছি। আমরা রাজপথেও আন্দোলন করেছি।

পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকেও হুমকি দেয়া হয়েছিল। কোর্টে গেলে পিছন পিছন তারা আমাদের অনুসরণ করতো, মনে হতো, তারা আমাদের জালের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছিল। আমাকে প্রায়ই তারা হুমকি ধামকি দিত। বলতো, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) এখনও এত শক্ত কেন? উনি নরম হচ্ছেন না কেন? ভয় পচ্ছেন না কেন?’। আমি তাদের বলতাম, ‘তিনি তো ভয় পাবেন না, অন্যায় করেন নাই।’

সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৪টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলা নিয়ে আমি কাজ করেছি। মামলার ইতিহাস, যুক্তিতর্ক লিখেছি। প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড আমি লিপিবদ্ধ করতাম। তিনি সেটা দেখে, কোন ভুল হলে সংশোধন করতেন।

সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে, রাজনীতি করেছি বলে আত্মীয়রা দাওয়াত দিত না

ঢাকাটাইমস/২৮জুন/টিএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :